Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: চন্দননগরের জার্সিতে স্বচ্ছন্দ ‘মমতার মুখ’

চন্দননগরকে ঢেলে সাজানোয় বিধায়কের একার দাপট দলের পূর্বতন কাউন্সিলররাই ভাল চোখে দেখেন না।

প্রচারসভায় ইন্দ্রনীল সেন।

প্রচারসভায় ইন্দ্রনীল সেন। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৭
Share: Save:

“কলকাতার জলভরা দাঁড়াতে পারে না! শুয়ে থাকে। আমাদের কাছে নস্যি”, চন্দননগরের বারাসতের দোকানে সগর্বে বলেন জলভরা জনক সূর্য ময়রার পুতি শৈবাল মোদক। সেই তিনিই চন্দননগরে ‘কলকাতার ছেলে’র নম্বর কাটতে দ্বিধা করছেন।

সাবেক ফরাসি শহরের গোঁদলপাড়ার যে পুকুরে টেগার্টের গুলিতে নিহত মাখনলালের তরুণ লাশ ভেসে ওঠে তার অনতিদূরে বেলজিয়ান বধূ নেলিন মণ্ডলের বাড়ি। “ভোট নিয়ে একটা কথাও বলব না! তবে এই ইতিহাসের শহরে পাঁচ বছরে কিছু কাজ হয়েছে”, বলে ওঠেন ঐতিহ্যরক্ষা কর্মী নেলিন।

সন্ধ্যায় চন্দননগরের বাগবাজারে শাসক দলের মিছিলে স্লোগান, আলোর হাব করল কে? জলের লাইন আনল কে? একেবারে পিছনে নিরুত্তাপ হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মুখ’ ইন্দ্রনীল সেন। প্রায় কর্পোরেট কেতায় সুচিন্তিত স্লোগানে, যাঁর কাজের খতিয়ান মেলে ধরছে ভোটের মিছিল। আলোক-শিল্পী শ্রীধর দাস, মিষ্টির শৈবালবাবুর মতো নাগরিকেরা সরকারি সম্মানও পেয়েছেন। ঠিক যেমন, রাজ্যে মমতার রীতি। হিল্লি-দিল্লি ‘মমতাদি’র ছায়াসঙ্গী তিনি। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীকে গানের কথা ধরিয়ে দেন, বিনোদন জগতের শিল্পীদের সরকারি আসরে বেঁধে রাখেন, মন্ত্রিত্ব সামলেছেন! সেই তিনিই চন্দননগরবাসীর রোজনামচাতেও মিশে। বাগবাজারের বাসিন্দা হাইকোর্টের উকিল গোবিন্দ ঘোষ বলেন, “জিটি রোড়ে বিধায়কের অফিস কিন্তু খোলাই থাকে। ওঁর সইটই পেতেও অসুবিধে হয় না।”

কিন্তু হাওয়ায় ভাসে, চন্দননগরকে ঢেলে সাজানোয় বিধায়কের একার দাপট দলের পূর্বতন কাউন্সিলররাই ভাল চোখে দেখেন না। ইন্দ্রনীল স্পষ্টভাষী, “আমার কাজ চন্দননগরবাসীকে খুশি করা। যাঁদের গুরুত্ব দিয়েছি, তাঁরা কেউ চন্দননগরের বাইরের লোক নয়!”

তবে ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা সিপিএম প্রার্থী গৌতম সরকারকে নিয়ে শাসককে ভাবতে হচ্ছে। সজ্জন, মাস্টারমশাই গৌতমবাবু লকডাউনের বিপদে মানুষের পাশে ছিলেন না, তত্ত্ব সুকৌশলে ছড়াচ্ছে তৃণমূল। গৌতম ক্ষুব্ধ: “আমিই এখানে অতিমারিতে প্রথম রক্তদান শিবির করি। আমার বাড়িতে লাইন দিয়ে সরকারি সাহায্যের জন্য হাজারো অসংগঠিত শ্রমিক ফর্ম ভরেছেন। সরকারই সব ভাঁওতা দিয়েছে।”

চন্দননগরে সার্কাস মাঠে শিল্পী ইন্দ্রনীলকে কাটমানি-যোগে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারীও। সঙ্গীতশিল্পীরাই তার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু শাসক দলের নেতাদের ঠাটবাট বাড়ার অভিযোগটা চন্দননগরেও বহাল। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চন্দননগর পৌরসভা ভাঙার পরে নাগরিক পরিষেবা শিকেয়। দূষণ ছড়াচ্ছে।” গোঁদলপাড়ার চটকলের দীর্ঘশ্বাসও বাতাসে মিশে।

ইন্দ্রনীল অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, কাজ করেছি, হারের ভয় পাই না। ২০১৬য় মাত্র ২০১১ ভোটে হারেন গৌতমবাবু। লোকসভায় তৃণমূলের থেকে ৩২০০ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন বিজেপি-র লকেট চট্টোপাধ্যায়। তবু কলেজশিক্ষিকা অন্তরা মুখোপাধ্যায় হতবাক, ২০১৮-১৯ থেকেই গঙ্গার ধারের স্ট্র্যান্ডে রামনবমীতে সশস্ত্র মিছিল! বিজেপি-র রাজ্য সংগঠনের নেতা দীপাঞ্জন গুহ টিকিট পাওয়ায় কিন্তু তীব্র বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। তবু তিনিই জিতব দাবি করছেন। দীপাঞ্জনবাবুর হয়ে যোগী বলেছেন, জগদ্ধাত্রী পুজো বজায় রাখতেই চন্দননগরে বিজেপি চাই। “এটা চন্দননগর, বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই”, বলে সভায় দ্বিজেন্দ্র-গীতি গাইছেন ইন্দ্রনীল। তিনি নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলেনি। তবে চন্দননগরের জার্সিতে স্বচ্ছন্দ ইন্দ্রনীল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy