Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ‘পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে কোল খালি হত না’

দু’-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বাগদা ব্লক জুড়ে উৎসবের পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে মানছেন বেশির ভাগ বাসিন্দাই।

লক্ষ্মীরানি দাস এবং লিপি শূর।

লক্ষ্মীরানি দাস এবং লিপি শূর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫২
Share: Save:

হাবড়া: ভোটের সকালে ছেলে সুশীলের কথা মনে পড়ছিল ৮৫ বছরের মা লক্ষ্মীরানি দাসের। বছর তিনেক আগে পঞ্চায়েত ভোটের দিন মারা গিয়েছিলেন হাবড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাবড়া এলাকার বাসিন্দা সুশীল।

বৃহস্পতিবার সকালে সুশীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, লক্ষ্মীরানি মুড়ি খাচ্ছেন। এ বার দিন কয়েক আগেই নির্বাচন কমিশনের লোকজন বাড়িতে এসে তাঁর ভোট নিয়ে গিয়েছেন। ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘অকারণে ওরা ছেলেটাকে মেরে ফেলল। এক বন্ধু ওকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। যখন ছেলেকে মারা হচ্ছিল, কেউ বাঁচাতে আসেনি। সকাল থেকে ছেলের কথা মনে পড়ছে। শুনছি, ভোটে এ বার মিলিটারি রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে কোল খালি হত না।’’

সুশীলের বাড়ির কাছেই থাকতেন উজ্জ্বল শূর। পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার শিকার হয়েছিলেন তিনিও। এ দিন বাড়িতে বসে ক্ষোভ উগরে দিলেন উজ্জ্বলের স্ত্রী লিপি। বললেন, ‘‘স্বামীর খুনিরা আজও সকলে গ্রেফতার হয়নি। ওদের শাস্তি হয়নি। ওদের শাস্তির জন্যই ভোট দিতে গিয়েছিলাম।’’ লিপির কথায়, ‘‘রাজনীতি বুঝি না। তবে ভোটে হিংসা বন্ধ হোক। আমার মতো কাউকে যেন স্বামীকে হারাতে না হয়।’’ ছেলের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল বাঁধ মানেনি উজ্জ্বলের বৃদ্ধা মা মঞ্জুর। বললেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে কোনও নিরাপত্তা ছিল না। এ বারের মতো
নিরাপত্তা থাকলে ছেলেকে অকালে হারাতে হত না।’’

পঞ্চায়েত ভোটের দিন কী ঘটেছিল সে বার?

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০১৮ সালের ১৪ মে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। যশুরের মহাত্মা শিশিরকুমার আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র হয়েছিল। সকাল থেকে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিচ্ছিলেন। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় বাইক-বাহিনীর তাণ্ডব। বিকেলে ওই স্কুলে চড়াও হয় বাইক-বাহিনী। অভিযোগ, জোর করে বুথে ঢুকে ছাপ্পা দেওয়া শুরু করে তারা। তা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন লাইনে দাঁড়ানো ভোটারেরা। শুরু হয় গোলমাল। উত্তেজিত জনতা দুই যুবককে ধরে গণপিটুনি দেয়। মোটরবাইক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয় ব্যালট বাক্স। সে দিনের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়েছিল। ওই ঘটনায় মারা যান এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত উজ্জ্বল ও সুশীল। তাঁরা অবশ্য ওই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না।

তিন বছর আগের সন্ত্রাসের সেই ভয়াবহ ছবি এখনও টাটকা এলাকার বাসিন্দাদের মনে। তাই এ বারের ভোট নিয়ে খানিকটা আতঙ্কেই ছিলেন তাঁরা। যশুর এলাকাটি পৃথীবা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুরুদুরু বুকে লোকজন বুথে আসতে শুরু করেন। তবে সেখানে পৌঁছে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের তৎপরতা দেখে তাঁরা আশ্বস্ত হন। মহাত্মা শিশিরকুমার আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, মহিলা-পুরুষদের দীর্ঘ লাইন। এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘সকাল সকালই ভোট দিতে চলে এসেছি। আবার যদি গোলমাল শুরু হয়! পঞ্চায়েত ভোটে দুপুরের পরে অশান্তি শুরু হয়েছিল। বহু মানুষ ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ বারের নিরাপত্তায় আমরা খুশি।’’

পঞ্চায়েত ভোটে হাবড়া (১) ব্লকের বেড়গুম এলাকাতেও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল। পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের
পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রার্থীকে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ভোটে বহিরাগতদের তাণ্ডব, ভোটারদের ভয় দেখানো, দেদার ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ বার অবশ্য ভোটপর্ব মিটেছে শান্তিতেই।

পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের নিরিখে পিছিয়ে থাকেনি বাগদাও। বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, ব্যালট বাক্স লুট, ব্যালট ছিনতাই করে পুড়িয়ে দেওয়া— বাদ যায়নি কিছুই। প্রিসাইডিং অফিসারের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরেছিল দুষ্কৃতীরা। হয়েছিল বোমাবাজি, চলেছিল গুলিও। কয়েকটি অটোও পুড়িয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কিছু বুথে ফের ভোট নিতে হয়েছিল। বাসিন্দাদের কথায়, তার আগের কোনও ভোটে এমন সন্ত্রাস তাঁরা দেখেননি।

তাই এ বারের বিধানসভা ভোট নিয়ে আশঙ্কা ছিল অনেকেরই। তবে এ দিন দু’-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বাগদা ব্লক জুড়ে উৎসবের পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে মানছেন বেশির ভাগ বাসিন্দাই।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy