শুনশান: ভোটের দিন ফাঁকাই রইল মতুয়া সঙ্ঘের ঠাকুরবাড়ি। বৃহস্পতিবার, গাইঘাটায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
‘মা’-কে নিয়ে টানাটানির বহু ঘটনার সাক্ষী মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি। এ বার সব শুনশান। শেষমেশ মতুয়া-মন পেল কোন পক্ষ, জানা যাবে ভোটের ফলে।
বনগাঁ উত্তর, গাইঘাটা, হাবড়া, বাগদা, বনগাঁ দক্ষিণ, স্বরূপনগর, অশোকনগরের মতো মতুয়া প্রভাবিত কেন্দ্রগুলিতে মতুয়া ভোটারদের জোর আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। মতুয়াদের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি বহু দিন আগেই রাজনৈতিক কারণে আড়াআড়ি বিভক্ত। তাঁদের মধ্যেই টানাপড়েন চলত ‘সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর প্রধান উপদেষ্টা বড়মাকে (বীণাপাণি ঠাকুর) নিয়ে। বড়মা মারা গিয়েছেন ২০১৯ সালে। তিনি জীবিত থাকাকালীন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা জানতেন সকলেই। ভোটবাক্সেও তার সুফল পেয়ে এসেছে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু বিজেপি-ও বড়মাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি কম করেনি। গত লোকসভা ভোটে মতুয়াদের বড় অংশই ঢলে পড়ে পদ্ম শিবিরে। বিজেপির টিকিটে ভোটে জেতেন মতুয়া ঠাকুরবাড়ির ছেলে শান্তনু ঠাকুর।
বড়মার সঙ্গে ভোট দিতে যাবেন কে? ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, না কি মঞ্জুলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী-বৌদি মমতা ঠাকুর? এ সব নিয়েও তখন কম গোলমাল হয়নি। বৃহস্পতিবার, ভোটের সকালে সেই ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল না অতি পরিচিত ভিড়ের ছবি। শুধু দেখা মিলল কয়েক জন মতুয়া ভক্তের। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘আজ বড়মাকে বড় মিস করছি। কাকে ভোট দেব, তা নিয়ে দোলাচলে রয়েছি। বড়মা থাকলে এই সমস্যা হত না। আমাদের ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতেন।’’
বড়মার নাতি সুব্রত ঠাকুর গাইঘাটা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। সকালে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম করে বেরিয়ে যান তিনি। বড়মার বৌমা, বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বড়মা জীবিত থাকাকালীন ভোট ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়ে যেত ঠাকুরবাড়িতে। বড়মার আশীর্বাদ নিতে আসতেন অনেক নেতা-নেত্রী। ভোটের সকালেও প্রার্থীরা তাঁকে প্রণাম সেরে যেতেন। সকলেই জানতেন, ভোটে জিততে বড়মার আশীর্বাদ মহার্ঘ।
বছর ছয়েক আগের কথা। বনগাঁয় লোকসভা ভোটের সকালে ঠাকুরবাড়ি থেকে বড়মা আচমকা গায়েব হয়ে যান। ঠাকুরবাড়িতে জড়ো হওয়া অসংখ্য টিভি ক্যামেরার সামনে, মঞ্জুলকৃষ্ণ অভিযোগ করেন, ‘‘মাকে তৃণমূল হাইজ্যাক করেছে।’’ মঞ্জুল তখন মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বিজেপি শিবিরে। পরে জানা যায়, বড়মাকে তৃণমূলের লোকজন সঙ্গে করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে যাবে বলে সকালে গাড়ি করে অন্যত্র নিয়ে গিয়েছেন। এমন ভাবেই ভোটের দিন সরগরম থাকত বড়মা আর তাঁর ঠাকুরবাড়ি।
এ দিন বনগাঁ মহকুমা, হাবড়া, অশোকনগর, স্বরূপনগর কেন্দ্রে ঘুরে দেখা হল কয়েক জন মতুয়া ভোটারের সঙ্গে। এমনই এক জন নির্মল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভোটে বড়মার মতামতের অন্য গুরুত্ব ছিল। তিনি না থাকায় ঠাকুরবাড়ি জৌলুস হারিয়েছে। আমরাও বিভ্রান্ত।’’ বাগদা বিধানসভার ভোটার দেবু মণ্ডলের কথায়, ‘‘মতুয়াদের নিয়ে সব রাজনৈতিক দলই কথা বলে। সে সব শুনে আমাদেরই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভোটের দিনে ঠাকুরবাড়ির অন্য রকম চেহারা আর তেমন নেই শুনছি।’’
এ সবের মধ্যেও মতুয়া সমর্থন পাওয়ার দাবি তুলছে দুই শিবিরই। তাঁরাই মতুয়াদের সমর্থন পেয়েছেন, এই দাবি করে দিনের শেষে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘মতুয়ারা বিশ্বাস করেন, ভোটের পরে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে।’’ অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘‘নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা, তা মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ বুঝে ফেলেছেন।’’
জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী অবশ্য মতুয়াদের ভোট প্রাপ্তি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘সংখ্যালঘু-সহ সমস্ত ধর্মের খেটে খাওয়া মানুষের সমর্থন আমাদের দিকেই আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy