Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Death

Bengal Polls: ছেলের শোকে স্তব্ধ ভোটের গ্রাম

ভোটের বাদ্যি বেজে উঠেছে। সরগরম ঘর, বসত। তার মধ্যে কী করছেন ওঁরা?

ছেলেদের স্মৃতিই সঙ্গী রোজিনা, তোরাবের।

ছেলেদের স্মৃতিই সঙ্গী রোজিনা, তোরাবের। নিজস্ব চিত্র।

বাপি মজুমদার 
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১ ০৬:২৬
Share: Save:

সময় পেলেই ব্যাট হাতে মাঠে ছুটত। বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠত ক্রিকেট খেলায়। আর বাড়িতে যতক্ষণ থাকত, একাই মাতিয়ে রাখত নবম শ্রেণির পড়ুয়া সাবির আলি। বেশিরভাগ সময়েই খুনসুটি চলত বছর দশেকের ভাইপো ও পাঁচ বছরের ভাইঝির সঙ্গে। ছোটদের সঙ্গে মিশতে, খেলতে বড্ড ভালবাসত সে। গ্রামের ছোটদের আব্দারে তাদের সাইকেলে চাপিয়ে ঘুরে বেড়াত সর্বত্র।

এখন সারাদিন মাটির বাড়ির সামনে টিনের দরজাটা বন্ধই থাকে তোরাব আলির। চৈত্রের গনগনে দুপুর। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে কয়েকটা মানুষের কান্নায় যেন ভিজে রয়েছে উঠোনের মাটি। কোনও তাপ নেই ঘরগেরস্তিতে। যেমন তাপ নেই আসন্ন ভোটেরও। রয়েছে শুধুই দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকার। উঠোনময় ছড়িয়ে থালা-বাটি। একসময় নিজেও পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পূর্ব তালসুর গ্রামের তোরাব। দুর্ঘটনায় কাঁধে চোট পাওয়ার পর এখন আর ভারী কাজ করতে পারেন না। দুই ছেলে আলমগির আর জাহাঙ্গিরের পাঠানো টাকাতেই সংসার চলত। স্কুল বন্ধ। তাই ঠিকাদারের সঙ্গে সাবিরও পাড়ি দিয়েছিল কলকাতায়। বলেছিল, কিছু টাকা রোজগার হলেই ফিরে আসবে। সেখানে বড় দুই ছেলে থাকায় আপত্তি করেননি তোরাব। কিন্তু সাবির যাওয়ার কুড়ি দিন বাদেই গোটা সংসারটাই লন্ডভন্ড হয়ে গেল।

ছেলেদের প্রসঙ্গ উঠতেই দু’হাতে চোখ ঢাকেন তোরাব। বলেন, ‘‘স্কুল খোলা থাকলে ছেলেটা হয়তো যেত না। আর ও না গেলে আমাদেরও এমন পাগলপারা হয়ে বেঁচে থাকতে হত না। দাদারা ওকে খুব ভালোবাসত। কলকাতায় নর্দমায় কাজ করতে নেমে যখন তলিয়ে যাচ্ছিল, তখন ওকে বাঁচাতে আলমগির আর জাহাঙ্গিরও নাকি নেমেছিল ওই মরণ গর্তে। তার পর একই সঙ্গে তিন ছেলের নিথর দেহ ফিরে এল।’’ বুকে জমে থাকা হাহাকার বেরিয়ে আসে তোরাবের, ‘‘ঈশ্বর, একটা ছেলেকে অন্তত ফিরিয়ে দিতেন। তবু ওকে নিয়ে থাকতাম।’’

মাস ঘুরতে চলল, মা রোজিনার চোখের জল এখনও শুকোয়নি। সাবিরের কথা উঠতেই ঘর থেকে ক্রিকেটের ব্যাটখানা নিয়ে আসেন। বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই এটাতে হাত বোলাই। যেন সাবিরের হাতের ছোঁয়া পাই।’’ বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন রোজিনা। আর পাশে বসে দুই ছেলেমেয়েকে আরও জোরে আঁকড়ে ধরেন আলমগিরের স্ত্রী জ্যোৎস্নারা।

ভোটের দামামা বেজেছে। তোরাব সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। প্রতিটি ভোটেই রোজ বুথের সভায় হাজির থাকতেন। প্রচারেও যেতেন। কিন্তু এ বারে মন সায় দিচ্ছে না। তার তিন ছেলের সঙ্গে মারা গিয়েছে পাশের বাড়ির লিয়াকত আলিও। লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনুর অন্তঃসত্ত্বা। লিয়াকতের বাবা হানিফ মহম্মদ, দাদা সাহাদাত আলিও পরিযায়ী শ্রমিক। লিয়াকতের মা জাইবুর বিবির চোখ ঝাপসা। বলেন, ‘‘ছেলেটা আর মা বলে ডাকবে না!’’

দুই পরিবারের এই বিষাদ যেন গ্রাস করেছে গোটা গ্রামকেই। কয়েক দিন আগে মুম্বই থেকে ফিরেছেন সাবিরের কাকা এসতাব আলি। বলেন, ‘‘এখানে দুশো পরিবারের মধ্যে এমন কোনও বাড়ি নেই, যার কেউ ভিন্ রাজ্যে থাকে না। চার জনের মৃত্যুর পর সবাই কাঁটা হয়ে থাকেন, কখন কার দুঃসংবাদ আসে। সেই গ্রাম কি ভাল থাকতে পারে? ভোট নিয়ে কেউ কি সেখানে উন্মাদনা দেখাতে পারে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy