প্রতীকী চিত্র
ফের বিতর্কে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে গিয়ে বুধবার তিনি হুমকি দেন, কারও গায়ে হাত পড়লে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে হাত-পা ভেঙে দেবেন। তার পর চিকিৎসাও করাবেন নিজে। সুশান্তের এই মন্তব্যে অনেকেরই অমিতাভ বচ্চন অভিনীত সত্তরের দশকের ‘ত্রিশূল’ ছবির কথা মনে পড়ছে। ওই ছবিতে অমিতাভের ‘কর্মপদ্ধতি’ই ছিল, খলনায়ককে মারতে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে যাওয়া। মারধরের পর সেই অ্যাম্বুল্যান্সে করেই অমিতাভ জখমকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেন। বচ্চনের এই ত্রিশূল-পথে হাঁটতে গিয়েই নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সুশান্ত। তৃণমূল যদিও ব্যক্তি সুশান্তকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় কটাক্ষ করে বলেছেন, “সুশান্ত ঘোষ বেঁচে আছেন জেনে আমি আনন্দিত।’’
২০১১-য় বেনাচাপড়া কঙ্কাল-কাণ্ডে নাম জড়ায় সুশান্তর। ওই মামলাতে দীর্ঘ হাজতবাসের পর জেল থেকে ছাড়া পান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার ছ’বারের বিধায়ক। কিন্তু গড়বেতায় ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল তাঁর। পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় আদালত। এর পর গত ৬ ডিসেম্বর বাইক মিছিল করে গড়বেতায় ঢোকেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য সেই সময় গড়বেতা এবং চন্দ্রকোনা রোডের দলীয় কার্যালয় সাজানো হয়।
সিপিএম সূত্রে খবর, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সুশান্তকে শালবনি কেন্দ্র থেকে টিকিট দেওয়া হতে পারে। বুধবার শালবনির ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুরে যান। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, কোনও কর্মসূচি বা নির্বাচনী সমাবেশ নয়, জনসর্থন বাড়াতে নিজেই শালবনির বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন সুশান্ত। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার সময় সুশান্ত বলেন, “মাওবাদীরা জানে সুশান্ত ঘোষ কে। তৃণমূল আর বিজেপি-র বাপ-ঠাকুর্দাও জানে। এত দিন যা করেছে করেছে। আমি ছিলাম না, তাই মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। এখন কারও গায়ে যদি হাত পড়ে সোজা গাঁয়ে যাব, যার ক্ষমতা হবে গায়ে হাত দেওয়ার সোজা ঘর থেকে তুলে নিয়ে এসে হাত-পা ভেঙে আমিই চিকিত্সা করাব।”
তবে নিজের মন্তব্য থেকে বৃহস্পিতবারও সরতে নারাজ সুশান্ত। তাঁর দাবি, ২০১৬-র বিধানসভা এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দলের কর্মী সমর্থকদের হুমকি দেওয়া, মারধর, টাকা নেওয়া, হাত-পা ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। সব রিপোর্ট তাঁর কাছে আছে। তাই এ বারে যাতে কর্মী-সমর্থকরা আতঙ্কিত না হন, সেটা বোঝাতেই এমন ‘দাওয়াই’। সুশান্তের কথায়, “মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকে আপন করে নিচ্ছেন। অনেকে আবার জানিয়েছেন, এত দিন ভয়ে বেরতে পারছিলেন না। আমাকে দেখে ভরসা করে বেরিয়ে এসেছেন।” ভয় দেখিয়ে, মারধর করে কোনও লাভ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুশান্ত। তাঁর মতে, গণতন্ত্রের নিয়মে এটা কোথাও নেই। সুশান্তের কথায়, ‘‘সব রাজনৈতিক দল তাদের কথা মানুষের কাছে বলবে, প্রচার করবে। তার পর যে দলকে পছন্দ হবে সেই দলকেই সমর্থন করবেন মানুষ। কিন্তু তার পরেও যদি কেউ কিছু বলে তার পরিণাম ভুগতে হবে। গণতন্ত্রে একতরফা খেলা হতে পারে না। কেউ যদি গায়ের জোর দেখাতে চায়, কেউ যদি গায়ের জোরের ভাষা বোঝে, তা হলে আমাদের সেই জোর দেখাতে হবে।”
সুশান্তের এই মন্তব্যকে যদিও গুরুত্ব দিতে নারাজ কোনও রাজনৈতিক দলই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “ঘরে বসে থাকা নেতা কী বলল তা নিয়ে কিছু যায় আসে না। নখ-দাঁত ভাঙা সিংহের গর্জনটা একটু বেশি হয়। সিংহ এখন বৃদ্ধ হয়েছে, তাই তাঁর কথায় কোন গুরুত্ব দিচ্ছি না।” আর তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠকে দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘সুশান্ত ঘোষ বেঁচে আছেন জেনে আমি আনন্দিত। উনি নিজের এলাকায় ১০ বছর ঢুকতে পারেননি। এখন কী বলছেন, তাতে কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’
বিজেপি-র অভিযোগ, তৃণমূলই সুশান্তকে নিয়ে এসেছে সন্ত্রাস করানোর জন্য। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজীব কুণ্ডু বলেন, ‘‘সুশান্ত ঘোষ কে? তৃণমূলের নেতারা ওঁকে নিয়ে এসেছে সন্ত্রাস করানোর জন্য। হুমকি দিলে কেউ ছেড়ে কথা বলবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy