ফাইল চিত্র।
ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ তুলে শনিবারই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, সে দিনই কালীঘাট থানায় মমতার ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে মামলা দায়ের করেছেন কসবার এক মহিলা। তাতে অভিযুক্ত হিসেবে নাম জড়িয়েছে বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। এর পাশাপাশি আরও কয়েক জন অজ্ঞাতপরিচয়ের নামও অভিযোগে রয়েছে। হয়েছে। ইনস্পেক্টর পদের এক অফিসারকে তদন্তকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
শীতলখুচি কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের একটি ফোন-কথোপকথন তুলে ধরে ‘লাশের রাজনীতির’ অভিযোগ করেছিল বিজেপি। কিন্তু কোথা থেকে ওই ফোন রেকর্ড মিলল তার সদুত্তর মেলেনি। এর পরেই মমতা তাঁর ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ করেন। শনিবার তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমার ফোন ট্যাপ করিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী আপনি পদত্যাগ করুন। আপনার লজ্জা করে না এক জন মুখ্যমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করাতে!” শনিবারই মমতা এই ঘটনা সিআইডিকে তদন্ত করতে দেবেন বলে জানান। রবিবারই একটি নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এফআইআর হয়েছে। যে ফাঁসার ফেঁসে গিয়েছে।”
অভিযোগকারিণী পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৬ এপ্রিল অমিত মালব্য ও লকেট চট্টোপাধ্যায় একটি অডিয়ো টেপ প্রকাশ্যে আনেন। যাতে চতুর্থ দফার ভোটে শীতলখুচি কাণ্ডের পর তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে কথোপকথন রয়েছে। প্রথমত, জাতীয় সুরক্ষাজনিত কারণ বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না-থাকলে ফোনে আড়ি পাতা যায় না। আড়ি পাততে হলে প্রশাসনের নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি প্রয়োজন। তা ছাড়া, জনমানসে প্রভাব বিস্তার করার জন্য টেপটির অংশবিশেষ বিকৃত করা হয়েছে।
তবে এ সবের পাশে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী তত্ত্বও উঠে এসেছে। এই অডিয়ো টেপটি বিজেপি নেতারা কী ভাবে পেলেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণত, সেনা, পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়া ফোনে আড়ি পাতার প্রযুক্তি এবং অনুমতি অন্য কারও নেই। সরকারি ভাবে কিছু না-বললেও পুলিশের একাংশের অনুমান, কোনও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাই ফোনে আড়ি পেতেছিল। কিন্তু সেই রেকর্ড একটি রাজনৈতিক দলের হাতে কী ভাবে পৌঁছল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দেশের কোনও প্রভাবশালীর নির্দেশেই ওই টেপ রেকর্ড করা হয়েছে এবং তা বাইরে ফাঁস হয়েছে। কার নির্দেশে এই কাজ হয়েছে তা-ও জানা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকেরা।
তবে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইনের ২৫ এবং ২৬ঙ ধারা, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৪, ৪৬৯, ৪৭১ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। শীঘ্রই ওই অডিয়ো টেপটি সংগ্রহ করা হবে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই কথোপকথন রেকর্ড করে কিছু অংশ বিকৃত করা হয়েছে। তাই আড়ি পাতার পাশাপাশি জালিয়াতি ও তথ্য বিকৃতির ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। অডিয়ো টেপটি সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তার রিপোর্ট এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এ ব্যাপারে অমিত মালব্যকে ফোন করে এবং মেসেজ পাঠালেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে লকেট বলেছেন, “ওঁর (মুখ্যমন্ত্রীর) নিজের দলের লোকেরাই যে দেয়নি তা উনি প্রমাণ করতে পারবেন তো? তা ছাড়া একটি টিভি সাক্ষাৎকারে উনি নিজেই বলেছেন যে অপরাধের যোগসূত্র থাকলে ফোনে আড়ি পাতা যায়। এই ঘটনার সঙ্গে তো অপরাধের যোগসূত্র রয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে মামলা অনেক রয়েছে। সেই তালিকায় আরও একটি যোগ হল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy