Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Election Violence

Bengal Election: নিহত ১২, শান্তি-বার্তা মমতার, রিপোর্ট চাইল দিল্লি

টুইটারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কেন নির্বাচনোত্তর হিংসার শিকার হচ্ছেন, সে ব্যাপারে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

শোকস্তব্ধ: সংঘর্ষে নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মা।  সোমবার কাঁকুড়গাছিতে। (খবর: কলকাতা) ছবি: সুমন বল্লভ

শোকস্তব্ধ: সংঘর্ষে নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মা। সোমবার কাঁকুড়গাছিতে। (খবর: কলকাতা) ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ০৬:১১
Share: Save:

ভোট-পর্বের চেয়ে বেশি রক্ত ঝরল ভোটের পাট মেটার পরে। ফল ঘোযণার দিন, রবিবার দুপুর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত রাজনৈতিক হানাহানিতে ১২টি প্রাণ গিয়েছে বলে অভিযোগ। নিহতদের মধ্যে বিজেপির পাঁচ, তৃণমূলের পাঁচ, আইএসএফের এক জন রয়েছেন বলে দাবি। দ্বাদশ ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক আছে। বহু জায়গায় একে অন্যের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, বোমাবাজি, লুট, আগুন লাগানোর অভিযোগ করেছে বিজেপি-তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীর কাছে বার বার শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পক্ষান্তরে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ভোটের ফল-পরবর্তী হিংসার অভিযোগে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য বিজেপি। টুইটারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কেন নির্বাচনোত্তর হিংসার শিকার হচ্ছেন, সে ব্যাপারে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে এ দিন এ ব্যাপারে বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি নীরজনয়ন পাণ্ডে এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। পরে, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপিও।

মমতা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর কাছে বিষয়টি তোলেন রাজ্যপাল। মমতা তাঁকে বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রয়েছে। তবু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যা করার করছেন। করবেন। যদিও এ দিন রাতেই আদর্শ আচরণ বিধি তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল নেত্রী সোমবার বলেন, ‘‘সবার কাছে আবেদন করব, বাংলা শান্তিপ্রিয় জায়গা, সংস্কৃতিপ্রিয় জায়গা, সম্প্রীতিপ্রিয় জায়গা। নির্বাচনে হার-জিত হয়েছে। আবহাওয়া গরম হয়েছে কখনও, কখনও ঠান্ডা হয়েছে। এবং বিজেপি অনেক অত্যাচার করেছে এটা আমরা জানি। কেন্দ্রীয় বাহিনী অনেক অত্যাচার করেছে জানি। তা সত্ত্বেও সবাইকে বলব, শান্ত থেকে যেন কেউ কোনও হিংসাত্মক ঘটনায় না জড়াই। এখন মানুষের সবচেয়ে বড় কাজ, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’’

তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এত বিপুল সমর্থন নিয়ে জিতে আসার পরেও হিংসা হবে কেন? পুলিশের সামনেই আক্রমণ হচ্ছে, বাড়ি-ঘর ভাঙা হচ্ছে, আগুন দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকর্তারা মুখ বুজে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি দায়িত্ব না নেন, তা হলে আর কে নেবে?’’ মমতা বলেন, ‘‘সবাইকে বলব, শান্ত থাকতে। যদি কারও বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকে তা হলে পুলিশকে সরকারি ভাবে জানাবেন। এবং পুলিশকেও আমি বলব।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘এখন আইন-শৃঙ্খলা তাদের সামলানো দরকার। এই দু’টো দিন আমার হাতে নেই। যত ক্ষণ পর্যন্ত শপথ না নিচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত।’’

এ দিন ফের রক্তাক্ত কোচবিহারের শীতলখুচি। পুলিশ জানায়, সকালে নওদাবাস এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মানিক মৈত্র (২০)। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলে। তবে নিহতের কাকা কার্তিক মৈত্রের দাবি, ‘‘মানিক কোনও দল করত না। দুই দলের গন্ডগোলের মাঝে পড়ে গিয়েছিল। পেটে গুলি লাগে।” বিকেলে ওই জেলার দিনহাটার জামাদারবস গ্রামে তৃণমূলের আক্রমণে তাদের কর্মী হারাধন রায়ের (৩০) মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে সংঘর্ষের পরে হাসপাতালে আনা হয় বিভাস বাগকে। পরে মৃত্যু হয় তাঁর।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে সংঘর্ষের পরে হাসপাতালে আনা হয় বিভাস বাগকে। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। নিজস্ব চিত্র

পূর্ব বর্ধমানে নিহতদের মধ্যে চার জন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। এক জন বিজেপি কর্মীর মা। সোমবার রাতে কেতুগ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য শ্রীনিবাস ঘোষকে (৬৫) পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তৃণমূলের অভিযোগ, রবিবার ফল বেরনোর পরে, রায়নার সমসপুর গ্রামে গণেশ মালিক (৬১) নামে তাদের এক কর্মীকে টাঙ্গি দিয়ে কোপানো হয়। বিজেপির অভিযোগ, জামালপুরের নবগ্রামে এ দিন দুপুরে তাদের স্থানীয় নেতা আশিস ক্ষেত্রপালের বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায়। টাঙ্গির কোপে মৃত্যু হয় আশিসবাবুর মা কাকলি ক্ষেত্রপালের (৪৭)। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির হামলায় অস্ত্রের কোপে শাজাহান শা (৩৮) ও বিভাস বাগ (৩০) নামে তাদের দু’জন কর্মীর মৃত্যু হয়। রাত পর্যন্ত আট জনকে ধরা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে অভিজিৎ সরকার (৩৫) নামে বিজেপির এক যুব কর্মীকে পিটিয়ে মারায় অভিযুক্ত তৃণমূল। কাঁকুড়গাছির শীতলাতলা লেনের বাসিন্দা অভিজিতের পরিবারের অভিযোগ, বাড়ির কাছেই বিজেপি পার্টি অফিসে ২০-২২ জন যুবক ঢুকে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। অভিজিৎ গোটা ঘটনা ‘ফেসবুক লাইভ’ করতে শুরু করেন। তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপির গোষ্ঠী-বিবাদেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ওই রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে তৃণমূলের হামলায় হারান অধিকারী (৪৪) নামে এক বিজেপি সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অবশ্য মানেনি তৃণমূল।

উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের উলাগ্রামে এ দিন সকালে খুন হন হাসানুজ্জামান (৩০) নামে এক আইএসএফ সমর্থক। অভিযোগ, স্ত্রীর সামনেই তাঁর হাত কেটে দেওয়া হয়, পেটে বল্লম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের
দিকে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। এ দিন দুপুরে হুগলির খানাকুলের নতিবপুরে তৃণমূলের নতিবপুর ২ অঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি দেবু প্রামাণিককে (৫৫) পিটিয়ে খুনে অভিযুক্ত বিজেপি। নদিয়ার গাংনাপুরের বিবেকানন্দ পল্লিতে রবিবার রাতে খুন হন উত্তম ঘোষ (৫০) নামে এক বিজেপি সমর্থক। বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও তৃণমূল উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশেরও দাবি, নিহত এক সময়ে নানা অপরাধমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। পুরনো শত্রুতার জেরে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।

রবিবার রাত থেকেই নন্দীগ্রামের নয়নান, শেরখান চক, বয়ালে বিজেপি কর্মীদের দোকান-বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন দুপুরে আবার গোকুলনগরে নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাসের বাড়ি তাক করে বিজেপি কর্মীরা বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, চোপড়া, বীরভূমের দুবরাজপুর, হাওড়া, বিধাননগর এবং রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা এলাকায় তাদের কর্মীরা আক্রান্ত বলে বিজেপি-র অভিযোগ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘সরকার যাতে হিংসা বন্ধে পদক্ষেপ করে, সে জন্য রাজ্যপালের মাধ্যমে দাবি জানিয়েছি।’’ বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখে তাঁদের বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। বিভিন্ন এলাকা থেকে হিংসার খবর যাতে কর্মী-সমর্থকেরা দলকে জানাতে পারেন, সে জন্য হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছেন, যাঁদের উপরে হামলার আশঙ্কা রয়েছে, এমন কিছু নেতা-কর্মীকে আপাতত অজ্ঞাতবাসে যেতে বলা হয়েছে।

২০১১-য় ক্ষমতায় আসার পরে, ‘বদলা চাই না, বদল চাই’ স্লোগান তোলা তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, ‘‘কারা, কী করেছেন আমরা জানি। পুলিশের অনেকে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। মনে করি না তাঁরা ঠিক করেছেন।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘‘আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। কিন্তু সবাইকে রাজধর্ম পালন করতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy