Advertisement
E-Paper

Bengal polls 2021: চর্চিত গ্ল্যামারের ছটার আড়ালে তারকা প্রার্থীরা কি আসলে বাদী-বিবাদীর ‘বলির পাঁঠা’

তারকাদের কেন ভোটপ্রার্থী করে রাজনৈতিক দলগুলি? প্রকাশ্য উদ্দেশ্য তাঁদের জনপ্রিয়তা এবং গ্ল্যামারকে ভোট টানতে ব্যবহার করা।

রুদ্রনীল ঘোষ, লাভলি মৈত্র, রাজ চক্রবর্তী

রুদ্রনীল ঘোষ, লাভলি মৈত্র, রাজ চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২১ ২২:৪৩
Share
Save

চর্চিত চাকচিক্য এবং আভরণ। চারপাশে উৎসাহী এবং উচ্চকিত ভক্তের ভিড়। কপালে টিকা। গলায় মালা। মুখে উচ্ছ্বাস। মনে ইচ্ছা— আইনসভার সদস্য হবেন।

লোকসভা হোক বা বিধানসভা— ভোট এলেই ‘তারকা’ প্রার্থীদের মঞ্চে আগমন বাঁধা। নীলবাড়ির লড়াই যত এগিয়ে আসছে, ততই বাদী তৃণমূল এবং বিবাদী বিজেপি শিবিরে ভিড় বাড়ছে তাঁদের। তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। সেখানে দেখা যাচ্ছে বড় এবং ছোট পর্দা মিলিয়ে নতুন অন্তত ন’জন নামছেন ভোটের লড়াইয়ে। এখনও তালিকা প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বিরোধী বিজেপি-তেও তারকাদের যোগদানের হিড়িক শুরু হয়েছে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সম্ভবত তাঁদের মধ্যেও অনেকে পদ্মচিহ্নে ভোট চাইতে ময়দানে নামবেন।

তারকাদের কেন ভোটপ্রার্থী করে রাজনৈতিক দলগুলি? প্রকাশ্য উদ্দেশ্য তাঁদের জনপ্রিয়তা এবং গ্ল্যামারকে ভোট টানতে ব্যবহার করা। কিন্তু পাশাপাশিই কিছু নিহিত উদ্দেশ্যও থাকে। প্রথমত, গোষ্ঠীলড়াই এড়ানো। যে সমস্ত কেন্দ্রে দলীয় টিকিটের একাধিক দাবিদার, সেখানে তারকা প্রার্থীকে টিকিট দিলে বিবদমান দুই গোষ্ঠী একজোট হয়ে তাঁকে জেতাতে চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু এইসব তারকার সে অর্থে ‘জনভিত্তি’ নেই এবং তাঁরা তৃণমূল স্তর থেকে রাজনীতি করেননি, রাজনীতিকে ‘পেশা’ হিসেবেও দেখেন না, তাই ভবিষ্যতে তাঁদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তৃতীয়ত, তারকা প্রার্থীরা জিতে গেলে তাঁদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থের উপরও দলের অধিকার থাকে। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি কারণ ‘কঠিন’ লড়াইয়ে তাঁদের এগিয়ে দেওয়া। বিশেযত, ‘হারা’ আসনে। যদি তাঁরা তাঁদের জনপ্রিয়তা দিয়ে সেগুলি জিততে পারেন। জিতলে উপরি পাওনা। হারলেও কোনও ক্ষতি নেই। যেমন তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় অভিনয় জগতের ন’জন তারকাকে যে ন’টি আসনে টিকিট দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটিতে গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সে অর্থে তাঁরা ‘বলির পাঁঠা’। কারণ, অভিনেতা-অভিনেত্রী-পরিচালকের পাশাপাশি অন্য যে দু’টি আসনে এক প্রাক্তন ফুটবলার এবং এক প্রাক্তন ক্রিকেটারকে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল, সেই দু’টি আসনেই লোকসভা ভোটে এগিয়েছিল শাসক শিবির।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাঁকুড়ার মতো কঠিন আসনে মুনমুন সেনকে লড়তে পাঠিয়েছিলেন মমতা। তৃণমূলের অতি বড় সমর্থকও আশা করেননি, দীর্ঘদিনের সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে হারিয়ে দেবেন অভিনেত্রী এবং রাজনীতিতে একেবারেই আনকোরা এবং অনভিজ্ঞ মুনমুন। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সেই মুনমুনকেই তাঁর জেতা আসন বাঁকুড়া থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল হারা আসন আসানসোলে। বাবুল সুপ্রিয়কে হারাতে পারেননি মুনমুন। তার পর থেকে আর সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাঁকে। উল্লেখ্য, বাঁকুড়ায় পোড়খাওয়া রাজনীতিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দাঁড় করিয়েও জেতা আসন ধরে রাখতে পারেননি মমতা। জিতেছিল বিজেপি। তবে অনেকে বলেন, মুনমুনকে বাঁকুড়ায় জেতাতে ‘বিবিধ অন্য উপায়’ অবলম্বন করা হয়েছিল। যা বাংলার সমস্ত পর্যায়ের ভোটে করা হয়ে থাকে। নইলে মুনমুন জিততেন কি না, তা নিয়ে দলেরই একাংশের সংশয় রয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে যা করা গিয়েছিল, ২০১৯ সালে তার সম্ভাবনা ছিল না।

কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় গ্ল্যামার জগতের এত মুখ দেখে আবার সেই জল্পনাই ঘুরেফিরে আসছে। সংশ্লিষ্ট তারকারা অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই সেই সম্ভাবনা খারিজ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বলির পাঁঠা আবার কী শব্দ! হাতের তালুর মতো যে এলাকা চিনি, সেখান থেকে জিতেই ফিরব!’’ টলিউড পরিচালকের আরও বক্তব্য, ‘‘আমার নাম শুনে নাকি অর্জুন সিংহ (ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ) বলেছএন, হেরে যাওয়ার ভয়ে কী সব নাটক-ফাটকের যা-তা লোককে দিদি এখানে দাঁড় করিয়েছেন। এখানকার মানুষ ওসব পছন্দ করেন না। অর্জুন সিংহ নিজে কি জানেন, আমার নির্বাচনী কেন্দ্রে ১০০টি নাট্যদল রয়েছে? সাহিত্যিক, লেখক-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষের জন্মস্থান ব্যারাকপুর, কাঁচরাপাড়া। তাই হারার কোনও প্রশ্নই নেই।’’ বাইপাসের ধারের বহুতল আবাসনের রাজ-বচন, ‘‘লোকে আমার সম্পর্কে জানে না। তাই ভাবছে রাজ চক্রবর্তী কেন ব্যারাকপুরে দাঁড়াবে! আমি ব্যারাকপুরের অলিগলি ভীষণ ভাল করে চিনি। সেখানকার মানুষদেরও খুব কাছ থেকে জানি। আমি ব্যারাকপুরের ভূমিপুত্র।’’

রাজনৈতিক ভাবে আলাদা দলে। কিন্তু ‘বলির পাঁঠা’ শব্দের বিরোধিতা করছেন বিজেপি-তে যোগ দেওয়া অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষও। যদিও রুদ্র বিজেপি-র প্রার্থী হবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এটা বলছেন, তাঁদের আমার বন্ধু-শিল্পীদের অতটা অশ্রদ্ধা করা উচিত নয়। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধএ লাগাতার দুর্নীতি ও কাটমানির অভিযোগ আসছে। আর সেগুলো তাঁরা সমর্থন করছেন। গরিব মানুষের ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে তাঁদের লক্ষাধিক আয়ে কোনও আঁচ পড়েনি বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। শিল্পী হিসেবে আমার কাছে তাঁরা শ্রদ্ধেয়। কিন্তু মানুষ হিসেবে নন।’’

তৃণমূলের হয়ে মেদিনীপুরে ভোট লড়বেন অভিনেত্রী জুন মাল্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তারকা নই। আমার তারকা ইমেজকে ব্যবহার করে তৃণমূল ভোট টানছে না। আর তৃণমূল আমায় বলির পাঁঠা করে যেখানে খুশি দাঁড় করিয়ে দেবে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’ জুন জানাচ্ছেন, তিনি ২০১১ সাল থেকে তৃণমূলের প্রচারে অংশ নিয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু প্রচারের ঢাক পেটাননি। জুনের কথায়, ‘‘আমার আদি বাড়ি মহিষাদল। দলনেত্রী সেটা বুঝেই আমায় ঠিক জায়গায় টিকিট দিয়েছেন। কোনও অর্থ বা ক্ষমতার লোভে অচেনা এলাকা থেকে আমি লড়তে যাচ্ছি না।’’

কৌতুকাভিনেতা কাঞ্চন মল্লিককে টিকিট দেওয়া হয়েছে উত্তরপাড়ায়। তাঁর সাফ কথা, ‘‘কালীঘাট এলাকায় জন্ম বলে শুধু ওই এলাকাতেই আমি দাঁড়ানোর যোগ্য! আর সেটা না হলেই বলা হবে, আমাকে বলির পাঁঠা করা হল! এটা কী অসম্মান! মুখ্যমন্ত্রী জানেন, কাঞ্চন মল্লিক সাধারণের খুব কাছের। দ্রুত সকলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। তাই ভরসা করে আমায় উত্তরপাড়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। ঠিক যেভাবে মানুষ ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এ আমার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতেন, নির্বাচনেও তা-ই হবে। আমাকে রুখবে কে!’’ একই কথা বলছেন ধারাবাহিকের অভিনেত্রী তথা তৃণমূলের প্রার্থী লাভলি মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ধারাবাহিকে কাজ করলেও আসলে ঘরের মেয়ে। ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে ইচ্ছএমতো কেন্দ্রে প্রার্থী করে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। তৃণমূলে একজনই প্রার্থী। তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা তাঁর সৈন্য। বলির পাঁঠা নয়!’’

celebrities Raj Chakraborty Rudranil Ghosh West Bengal Assembly Election 2021 Lovely Moitra

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।