আনন্দ বর্মণের দাদু ক্ষিতীশচন্দ্র রায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মাথাভাঙায়। নিজস্ব চিত্র।
টানাপড়েন শুরু হয়েছিল আগের রাত থেকে। শেষে বুধবার সকালে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালের মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় হাজির ছিলেন পাঠানটুলিতে নিহত আনন্দ বর্মণের দাদু ক্ষিতীশচন্দ্র রায়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাই নয়, ক্ষিতীশবাবু তাঁর কাছে পরিবারের দু’জনের জন্য চাকরির দাবিও করেন। একই সঙ্গে জানান, তাঁকে কোনও জোরাজুরি করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় এসেছেন।
কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যান ক্ষিতীশবাবু। বিজেপির দফতরে বসে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি এক বার দাবি করেন, তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যে প্রশ্নের মুখে জানান, তিনি নিজেই গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আবার বলেন, ‘‘জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমাকে।’’ কিন্তু জোর করলেও কেউ কোনও হুমকি দেয়নি, এটাও মেনে নেন ক্ষিতীশবাবু।
গত ১০ এপ্রিল শীতলখুচির দুই বুথে যে গোলমাল হয়, গুলি চলে, তাতে মোট পাঁচ জন মারা যান। বিজেপি বরাবরই আনন্দকে আলাদা করে উল্লেখ করে। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী আনন্দের কথা বলছেন না। যদিও ঘটনা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর টুইট এবং নানা বার্তায় সব ক’জনের কথাই বলেন। এ দিনও সব ক’টি পরিবারের সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু আনন্দের দাদা, বিজেপির স্থানীয় পদাধিকারী গোবিন্দ বর্মণ প্রথম থেকেই জানান, তিনি যাবেন না। এ দিন সকালে দেখা যায়, মাথাভাঙায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির আনন্দের মায়ের বাবা ক্ষিতীশবাবু। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আনন্দকে যারা খুন করেছে, সেই খুনিদের আমরা ধরবই। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন।” ক্ষিতীশবাবুকে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। পুরো সময়টায় কখনওই মনে হয়নি, ক্ষিতীশবাবুকে জোর করা হয়েছে। পরে ক্ষিতীশবাবুও বলেন, “আমাকে কেউ জোর করে আনেননি। আমি স্বেচ্ছায় এসেছি। আমাদের টাকা চাই না। ওই ঘটনার বিচার চাই। আর পরিবারের দু’জনের চাকরি চাই।”
তাঁর এই কথাগুলিই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলে যায়। বিজেপির পার্টি অফিসে মেয়ে বাসন্তী বর্মণকে পাশে নিয়ে বসে ক্ষিতীশবাবু বলেন, ‘‘আমি জানিয়েই দিয়েছিলাম, টাকা নেব না। যারা আনন্দকে মারল, তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। আমার কথা শুনেই মুখ্যমন্ত্রী তা ঘোষণা করেন।’’ এর পরে তাঁর দাবি, তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন প্রশ্ন করা হয়, মাথাভাঙায় তো আপনি বললেন, জোর করা হয়নি? তখন দৃশ্যত বিব্রত ক্ষিতীশবাবু বলেন, ‘‘ওখানে অনেক সাংবাদিক ছিলেন। কার সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সব মনে আছে নাকি?’’ হুমকি দেওয়া হয়েছিল? রাজ্যের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কি আপনাকে জোর করেছিলেন? কোথাও কি আটকে রাখা হয়েছিল আপনাকে? ক্ষিতীশবাবু জানান, না, এমন কিছু হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ বলেন, “ক্ষিতীশবাবু নিজেই এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। কাউকে জোর করে আনা হয় না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘উনি স্বেচ্ছায় এসেছিলেন। আমি নিজে ওঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। তার পরে যা হয়েছে সব বিজেপির চক্রান্ত।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “আনন্দ বর্মণকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করেছে। তাঁর পরিবারে এক সদস্যকে জোর করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেত্রীর কথা এখন আর বিশ্বাস করে না।” আনন্দের দাদা গোবিন্দ বলেন, “দাদুকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য আমরা নেব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy