প্রচারে দমদমের সিপিএম প্রার্থী পলাশ দাস। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টচার্য
জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামে হয়তো রয়েছেন প্রার্থী। তাঁর পরিচিতি, সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী নাকি অন্য পেশাও আছে— এ সব তথ্য সংবলিত ‘প্রোফাইল’ ছড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুত। জনপ্রিয় গানের প্যারডি তৈরি করে তার মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নেমে যাচ্ছে ‘হল্লা গাড়ি’। আবার প্রার্থীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে ই-মাধ্যমে অনুদানের জন্য আবেদন থাকছে সামাজিক মাধ্যমে। যাকে বলে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’।
ভোটে লড়ার কায়দায় এ বার এমনই নানা নতুন কৌশল আমদানি করেছে সিপিএম। এক ঝাঁক নতুন মুখকে এ বার নির্বাচনী ময়দানে নামিয়ে দিয়েছে তারা। ভোটে নতুন বিকল্প দেওয়ার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের সংগঠনকে গড়ে নেওয়াই তাদের লক্ষ্য। সেই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নির্বাচনের প্রচার ও ভোট পরিচালনার কৌশলে সিপিএমের নতুন প্রয়াস চোখ টানছে ভোটের বাজারে।
চিরাচরিত ভাবেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে বামেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। রাজনৈতিক ভাবে দল যখন প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে, তারই সমান্তরালে সেই তালিকাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে ডিজ়িটাল মিডিয়ার টিম। এ বারই প্রথম প্রার্থী ধরে ধরে দলই তৈরি করে দিয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ওয়েবসাইটে তাতে চোখ বুলিয়ে যে কেউই কোনও প্রার্থী সম্পর্কে কৌতূহল নিবৃত্ত করতে পারেন। কেন্দ্র ধরে ধরে প্রার্থীদের কর্মসূচির নির্যাস জানিয়ে দেওয়া তো আছেই।
আবার নির্দিষ্ট ভাবে কোনও প্রার্থী বা কেন্দ্রের কথা না বলেই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সিপিএমের বক্তব্য নিয়ে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে ‘হল্লা গাড়ি’কে। ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে রাস্তায় যে ভাবে নৃত্যনাট্য দেখা গিয়েছিল, সেই ‘ফ্ল্যাশ মব’-এরই আর এক রূপ এই ‘হল্লা গাড়ি’। আপাতত শহরাঞ্চলে কিছু উল্লেখযোগ্য জায়গা বেছে নিয়ে তরুণ-তরুণীরা ‘হল্লা গাড়ি’ নিয়ে যাচ্ছেন। কলকাতায় কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের উৎসাহ দিতে হাজির থাকছেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র। এর পরে এমন আরও কিছু অভিনব প্রচার রাজ্যের অন্যত্রও ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
বিজেপি তো বটেই, তৃণমূলের সঙ্গেও নির্বাচনের খরচে এঁটে ওঠা বাম নেতৃত্বের কাছে বিরাট চিন্তার বিষয়। সাবেক কায়দায় এলাকায় চাঁদা তোলার পাশাপাশি এ বার তরুণ প্রার্থীদের জন্যই মূলত শুরু হয়েছে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’। ঐশী ঘোশ, দীপ্সিতা ধরের মতো সর্বভারতীয় ছাত্র আন্দোলনের যাঁরা মুখ, তাঁরা এই উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছেন। বালির সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতার কথায়, ‘‘কর্পোরেটের ফান্ড চাইছি না, কারণ আমরা কর্পোরেটের স্বার্থরক্ষা করতে যাব না! যাঁরা বিশ্বাস করেন মানুষের জন্য সত্যিকারের কাজ করার একটা সরকার হওয়া উচিত, তাঁদের কাছে আবেদন করছি আমাদের তহবিলে সাধ্যমতো সাহায্য করার।’’ লোকসভা ভোটে বিহারের বেগুসরাই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমারের জন্যও এ ভাবে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ হয়েছিল এবং সাড়া মিলেছিল ভালই।
সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতেই দলের কাজকর্মে বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল। পলিটবুরো, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকও তখন থেকে শুরু হয়েছিল অনলাইনে। বাঁধা গৎ ছেড়ে এ বার ভোটের সময়েও সেই আধুনিকতার হাত ধরছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘তরুণ প্রজন্মের কথা শুধু মুখে বললে তো হবে না, তাদের মতো করে ভাবতেও হবে। সেই চেষ্টাই আমরা সব রকম ভাবে করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy