WB Election 2021 : Aditi Munshi's journey from the world of music to the arena of politics dgtl
Aditi Munshi
Bengal Polls 2021:মায়ের হারমোনিয়ামে হাতেখড়ি, গান, গাছ,বইয়ে ডুবে থাকা অদিতি এ বার নতুন মঞ্চে
শৈশব থেকেই সঙ্গীতময় পরিবেশ বড় হওয়া। ফলে আলাদা করে তালিম নেওয়ার থেকে বাড়ির আবহই অদিতি মুন্সির শিল্পী হয়ে ওঠার পিছনে অন্যতম অনুঘটক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ১৫:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ছোটবেলায় বাড়িতে লোডশেডিং হয়ে যাওয়ার সময়টুকুই ছিল সবচেয়ে আনন্দের। যৌথ পরিবারের সকলে মিলে ছাদে চাদর পেতে বসে আড্ডা হত। সঙ্গে অবশ্যই গানবাজনা। শৈশব থেকেই সঙ্গীতময় পরিবেশ বড় হওয়া। ফলে আলাদা করে তালিম নেওয়ার থেকে বাড়ির আবহই অদিতি মুন্সির শিল্পী হয়ে ওঠার পিছনে অন্যতম অনুঘটক।
০২২০
অদিতির বাবা গান ভালবাসতেন। তাঁর একটা গানের খাতা ছিল। বাবার সঙ্গে সুর মেলাতেন অদিতি। তবে সঙ্গীতশিক্ষার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। গান শিখতে শিখতেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মায়ের। শুনেছিলেন অদিতি। হারমোনিয়াম নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছিলেন মা। নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন মেয়ের মধ্যে পূর্ণ হওয়ার কথা ভেবেছিলেন তিনি।
০৩২০
মায়ের সেই হারমোনিয়ামেই অদিতির সরগম শিক্ষা। এর পর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং ভজনের তালিম নেন স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। ভয়েস ট্রেনিং হয়। পরে তিনি শুভ্রকান্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গান শেখেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরাতনী গান নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন। গান শিখেছেন গুরু মা সরস্বতী দাসের কাছেও।
০৪২০
ছোট থেকেই পড়াশোনার তুলনায় তাঁকে বেশি আকর্ষণ করত গানবাজনা। দমদম পার্কের আদর্শ বিদ্যাবীথিতে তাঁর স্কুলজীবন শুরু। এর পর অন্নদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দির থেকে।
০৫২০
গানবাজনা থেকে সাজপোশাক, সবকিছুতেই অদিতির পছন্দ বাংলা এবং বাঙালির সংস্কৃতি। ২০১৫ সালে সারেগামাপা-এ অংশগ্রহণের আগে অডিশনে তাঁর হিন্দি গানের ভাণ্ডার বেশি সমৃদ্ধ ছিল না। কীর্তনের বাইরে জানতেন না বিশেষ বাংলা গানও। তাঁর কীর্তনেই মুগ্ধ হন বিচারকরা।
০৬২০
সারেগামাপা-র সেই মরসুম জুড়ে কীর্তনই ছিল অদিতি তুরুপের তাস। শো-এ তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তাঁর জন্য সামগ্রিকভাবে কীর্তনের চাহিদাও ফিরে এসেছিল। যদিও অদিতি নিজে সন্দিহান ছিলেন তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে। ভেবেছিলেন, বাকি প্রতিযোগীদের ধ্রুপদী, সিনেমার গানের পাশে তিনি কীর্তন গেয়ে বেশিদূর যেতে পারবেন না।
০৭২০
পরে নিজের সাফল্যে নিজেই চমকে গিয়েছিলেন অদিতি। সে বার তাঁদের লোকসঙ্গীত দল থেকে প্রথম হয়েছিলেন অন্য দুই শিল্পী। নিজের কোনও স্থান পাননি বলে আক্ষেপ নেই অদিতির। তাঁর কথায়, মানুষের ভালবাসাই তাঁর কাছে্ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণের সেই ভালবাসাকে সঙ্গী করেই গান থেকে এ বার নির্বাচনের মঞ্চে অদিতি।
০৮২০
শিল্পী হিসেবে তাঁর জন্মস্থান সারেগামা-র মঞ্চ। স্বীকার করেন অদিতি। তিনি চান, তাঁর সঙ্গে এই রিয়েলিটি শো-এর পরিচয় তাঁর সঙ্গে থাকুক আজীবন। তবে তিনি শিল্পী হিসেবে যেখানে পৌঁছেছেন, তার কৃতিত্ব মাকে দিতে চান অদিতি। কারণ মায়ের জন্যই তিনি রিয়েলিটি শো-এ অংশ নিয়েছিলেন। মায়ের অনুপ্রেরণা না থাকলে হয়তো তিনি সারাজীবন শুধু গান নিজের ভাললাগার জন্যই শিখতেন।
০৯২০
ভালবাসা থেকেই গান শিখেছেন। কীর্তনের চর্চা করে গিয়েছেন। পরে একাধিক বার জানিয়েছেন অদিতি। কীর্তন নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনাও খুব একটা সহজ ছিল না তাঁর কাছে। তার পরে তিনি অংশ নিয়েছেন রিয়েলিটি শো-এ। আগামী দিনেও তিনি কীর্তন শিল্পী হয়েই থাকতে চান। অন্যধারা গান চর্চা করে অলরাউন্ডার হওয়ার ইচ্ছে নেই।
১০২০
কেরিয়ারের জন্য বিয়ে অথবা বিয়ের জন্য কেরিয়ার, কোনওটাই থেমে থাকেনি অদিতির কাছে। পরিচিতি পাওয়ার পরে খ্যাতির শীর্ষে থাকতে থাকতেই বিয়ে করে নেন তিনি। ২০১৮ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন দেবরাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে।
১১২০
তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ তাঁর পেশায় যথেষ্ট পরিচিত। রাজনৈতিক জীবন শুরু তৃণমূলে। পরে কংগ্রেসে যান। পরে ফের তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। তিনি নিজেও অদিতির কীর্তনের সুরে মুগ্ধ।
১২২০
জ্যাংরা এলাকার বাসিন্দা দেবরাজ। অদিতি থাকেন বাগুইহাটিতে। কাছাকাছি এলাকায় দু’জনের বাড়ি হলেও বিয়ের আগে বিশেষ পরিচয় ছিল না তাঁদের। দুই পরিবারের পছন্দ ও সম্মতিতে সম্বন্ধ করা বিয়েতে গাঁটছড়া বাঁধেন দেবরাজ-অদিতি।
১৩২০
বিয়ের পর সংসার এবং গান, দু’দিকেই ভারসাম্য রেখেছেন অদিতি। রান্নাঘরের তুলনায় অনেক বেশি সময় কাটে রেওয়াজ করে এবং ছাত্রছাত্রীদের গান শিখিয়ে। জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আছে স্বামী দেবরাজ এবং শ্বশুরবাড়ির বাকি সকলের পূর্ণ সমর্থন।
১৪২০
অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রেওয়াজ তথা সঙ্গীতচর্চার জন্য যথেষ্ট সময় বরাদ্দ রাখেন অদিতি। ছোট থেকেই তিনি অন্তর্মুখী। যৌথ পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই বড় হওয়া। তাই পাড়ার সঙ্গেও খুব বেশি মেলামেশা ছিল না। নিজের গানের জগতেই থাকতে ভালবাসেন তিনি।
১৫২০
তথাকথিত ‘নাচের গান’ তিনি জানেন না। স্বীকার করে নেন অনুষ্ঠানের প্রথমেই। শেষ অবধি দর্শকরাই তাঁর কীর্তনের সুরে পা মেলান। অবসর সময়ে সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি প্রচুর বই পড়েন। তার মধ্যে আধ্যাত্মিক বইয়ের সংখ্যা বেশি। আছে ফোটোগ্রাফি এবং গাছ লাগানোর শখও।
১৬২০
বৃহস্পতিবার রাজনীতির জগতে পা রাখলেন কীর্তনশিল্পী অদিতি। যোগ দিলেন তৃণমূলে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রাজারহাট গোপালপুর কেন্দ্র থেকে। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলপ্রার্থী হিসেবে জয়ী হন পূর্ণেন্দু বসু।
১৭২০
তৃণমূল ভবনে প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নেওয়ার আগেই অদিতি দু’কলি গান শোনান। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘প্রাণের দিদি’ বলে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন কীর্তনের ঘরানা।
১৮২০
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে মমতাকে ‘প্রাণের দিদি’ বলে ডাকার পাশাপাশি জানান, ‘সৌগত জেঠুর’ হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিতে পেরে তিনি আনন্দিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূল যুব সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ধন্যবাদ জানান অদিতি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।