Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বেহালায় আবার ‘প্রহৃত’ জোট-প্রার্থীর এজেন্ট

হরিদেবপুরে ফের ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার সকালে বেহালা (পূর্ব) কেন্দ্রের জোট-সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের নির্বাচনী এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০০:১২
Share: Save:

হরিদেবপুরে ফের ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার সকালে বেহালা (পূর্ব) কেন্দ্রের জোট-সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের নির্বাচনী এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। হরিদেবপুর থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেলে মন্টু মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার রাতে ওই তৃণমূল নেতা জামিনে মুক্তি পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন প্রহৃত ওই নির্বাচনী এজেন্ট।

৩০ এপ্রিল ভোটের পর থেকে একের পর এক ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বেহালা (পূর্ব) বিধানসভা কেন্দ্র। কখনও হরিদেবপুরের দড়িরচক গ্রামের শিশু প্রীতি বরের মাথা ফাটানোর অভিযোগ, তো কখনও বেহালার প্রাক্তন বিধায়ক কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে বোমা ছোড়ার ঘটনা। আর সব অভিযোগই উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও ওই সব ঘটনা কতটা বাস্তব, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তৃণমূল মহলেও। বেহালা (পূর্ব)-এর তৃণমূল প্রার্থী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ভোটের আগে দু’মাস ধরে প্রচার পর্ব চলল। যে সময়ে উত্তেজনা থাকে বেশি, তখনই শান্ত ছিল সব। এখন কেন মারধরের অভিযোগ উঠছে, বুঝতে পারছি না।’’ তবে যে অভিযোগই উঠুক না কেন, তা তদন্ত করে দেখার দাবি করেছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘বেহালার প্রাক্তন বিধায়কের বাড়ির ঘটনায় প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হোক, তা আমিও চাই। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকেও বলেছি তদন্ত করে দেখতে।’’ শুধুমাত্র অভিযোগ করলেই যে তা সত্য বলে ধরে নিতে হবে, তা মানতে নারাজ শোভনবাবু। এর পিছনে বেহালাকে ‘অশান্ত’ করার কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে ধারণা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলেরও।

বেহালায় নির্বাচনের রাতেই দড়িরচক গ্রামের সিপিএম সমর্থক অমূল্য বরের নাতনি, বছর আটেকের প্রীতি বরের উপরে একদল তৃণমূল সমর্থক চড়াও হন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পরে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গ্রামে প্রতিবাদ সভা করতে যান তৃণমূল প্রার্থী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবাদ সভায় সিপিএমের বিরুদ্ধে নানা বিষোদ্গার করলেও ‘নিগৃহীত’ মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে কোনও ভয় নেই বলে আশ্বস্ত করে আসেন তিনি। বলেওছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক বিতর্কে কোনও শিশুকে আনা উচিত নয়।’’ শিশুটির মাথা ফাটার ঘটনা যে তাঁকেও পীড়িত করেছে, তা জানাতে ভোলেননি মা বাসন্তী বরকে। তবে মেয়র যে আশ্বাসই দিন না কেন, তাতে স্বস্তি পায়নি প্রীতির পরিবার। পরদিন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছে তৃণমূলের অত্যাচারের খবর উগরে দিয়েছিলেন প্রীতির বাবা-মায়েরা।

এর পরেই বেহালার প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএমের কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে বোমা পড়ে। সেখানেও অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এর পরে আবার অম্বিকেশ মহাপাত্রের এক এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠল হরিদেবপুরে।

কী হয়েছিল?

হরিদেবপুরের নবপল্লি বাইশ বিঘার বাসিন্দা, পেশায় ক্ষৌরকার দীপক শীল মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে নিজের দোকানে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, নির্দল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ার কারণে মন্টু মারধর করেন দীপক শীলকে। প্রহৃতের অভিযোগ, ‘‘নির্দল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ার কারণে ভোটের আগে থেকেই আমাকে তৃণমূলের তরফে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দোকান যাওয়ার পথে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মন্টু মণ্ডল আমার পথ আটকান। আমাকে চড়, ঘুষি মারা হয়।’’ এই ঘটনার পরে দীপকবাবু হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মন্টু মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। দীপক শীল এ দিন বলেন, ‘‘অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরে জামিন নেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছি। আমার বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, শিশুকন্যা রয়েছে। বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় হচ্ছে। আক্রমণকারীরা আমাকে ক্রমাগত এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়ে চলেছে।’’

আর অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, ‘‘ভোটের পর থেকেই বিরোধীদের কর্মী-এজেন্টদের উপরে শাসক দলের সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাতে একই ভাবে বেহালার কৈলাস পণ্ডিত লেনে আমার নির্বাচনী এজেন্টের বাড়ির সামনে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বিরোধী দলের উপরে বারবার আক্রমণের ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তার দাবিতে আমি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি।’’

কিন্তু বেহালা (পূর্ব)-এ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বারবার মারধরের অভিযোগ উঠছে কেন?

মেয়র শোভনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘আমার এখানে সিপিএমের কোনও প্রার্থী নেই। রাজনৈতিক লড়াইও নেই। কিন্তু বারবারই একটা বির্তক সৃষ্টি করা হচ্ছে। যার ছুতো ধরে এক দল সমাজবিরোধী এলাকায় ঢুকে পড়ছে।’’ তাঁদ দাবি, ব্যক্তিগত লড়াইকেও রাজনৈতিক মোড়কে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। মঙ্গলবার হরিদেবপুরের ঘটনা তেমনই বলে দাবি মেয়র শোভনবাবুর। বিরোধী প্রার্থী প্রত্যক্ষ রাজনীতিমনস্ক হলে এমনটা হতো না বলে মনে করেন শোভনবাবু। এ বিষয়ে বেহালার ১৭৮, ১২৮ ও ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দার বক্তব্য, শুধু তৃণমূলের নয়, এলাকায় অনেক সিপিএমের নেতা-কর্মীও মেয়রের ‘কব্জায়’। আলিমুদ্দিনের একাধিক কর্তাও তা জানেন। তাই বেহালায় ‘অশান্ত’ পরিবেশ সৃষ্টির পিছনে অন্য কারও হাত রয়েছে কি না, সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy