হামলার পরে বাড়িতে আতঙ্কিত স্নিগ্ধাদেবী। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
অবাধ ভোটের বাতাবরণে স্পষ্ট ব্যতিক্রম হাওড়া।
উত্তর হাওড়া কেন্দ্রে সোমবার, ভোটের দিন সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে গিয়ে ক্যামেরার সামনে দুই বুথে ছাপ্পা মেরে গটমটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ ও হাওড়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী।
মঙ্গলবার আর একটি ঘটনায় হাওড়ার বামনগাছিতে ‘বামপন্থী’ এক ভোটারের পরিবারকে আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই স্থানীয় ভোটারের বাড়িতে দু’দফায় আক্রমণ চালিয়েছে তারা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই পরিবারটি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অবশ্য কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সোমবার ভোটের লাইন দীর্ঘক্ষণ ধরে এগোচ্ছে না দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন উৎপলবাবু। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ উৎপলবাবুর বাড়িতে হানা দিয়ে ভাঙচুর, তাণ্ডব চালায় তৃণমূল কর্মীরা। দু’দফায় আক্রমণ করা হয় ‘বামপন্থী’ উৎপল দত্তের বাড়িতে। অভিযোগ, প্রথমে তাঁর একটি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। তিনি পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরে তারা আবার ফিরে আসে। এ বার তিরিশ জনের একটি বাইকবাহিনী শাবল দিয়ে গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে উৎপলবাবুর মোটরবাইক ভেঙে দেয়। এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি করে ভেঙে দেওয়া হয় সমস্ত জানলার কাচ। অভিযোগ, বড় বড় ইট গিয়ে পড়ে বাড়ির ভিতরেও। উৎপলবাবুর স্ত্রী স্নিগ্ধা দত্ত এবং ছেলে শুভজিৎ তখন বাড়িতে ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, যারা উৎপলবাবুর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তারা সকলেই এলাকার তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। দিনেদুপুরে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালালেও বাধা দেওয়ার সাহস হয়নি এলাকার বাসিন্দাদের। ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরেই থানা হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার বেলা তিনটে নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার লিলুয়া থানা এলাকার বামনগাছি বি রোডে। উত্তর হাওড়া বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত ওই অঞ্চলের চারটি বুথ হয়েছিল স্থানীয় অরবিন্দ স্কুলে। সকাল থেকেই ওই ভোটকেন্দ্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ জ্যাম ও রিগিং-এর অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী নেতারা। একই ভাবে ভোটার লাইনে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়েও একটুও এগোতে না পারায় প্রতিবাদ করেছিলেন এলাকার বাসিন্দা উৎপল দত্ত। অভিযোগ, বি রোডের বাসিন্দা উৎপলবাবুকে সোমবার রাতেই এলাকার তৃণমূল কর্মীরা শাসিয়ে গিয়েছিল। তারা বলেছিল, প্রতিবাদের ফল ভাল হবে না।
মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে উৎপলবাবু এবং পরিবারের লোকজন দেখেন, বাড়ির লাগোয়া তাঁদের যে ফাস্ট ফুড সেন্টারটি ছিল সেটি কারা ভাঙচুর করে গিয়েছে। এই ঘটনার পরে রেলকর্মী উৎপলবাবু স্থানীয় লিলুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এসে তদন্ত করে। এর পরে অন্য দিনের মতো উৎপলবাবু অফিসে বেরিয়ে যান।
এর পরে বেলা তিনটে নাগাদ দুষ্কৃতীরা আবার ফিরে আসে। একটি বাইকবাহিনী তাঁদের বাড়ি আক্রমণ করে। ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা স্নিগ্ধাদেবী ও শুভজিৎকে লক্ষ করে অশ্রাব্য গালিগালাজও করে বলে অভিযোগ। তাঁদের দোকান ভাঙার কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে কেন, তা-ও জানতে চায় দুষ্কৃতীরা।
স্নিগ্ধাদেবী বলেন, ‘‘আমি আর ছেলে কোনও রকমে দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে ছিলাম। না হলে ওরা আমাদের মেরে ফেলত। আমরা বামপন্থী। সেটাই কী আমাদের অপরাধ? দিদি তো বদলা নয় বদল চেয়েছিলেন। এই কি সেই বদল?’’ তিনি জানান, ঘরের দরজাও ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, আক্রমণকারীরা সবাই এলাকার তৃণমূলকর্মী। তিনি দুপুরের ঘটনা ফোনে উৎপলবাবুকে জানান। পুলিশের কাছে উৎপলবাবু ফের অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও আবার আক্রমণের আশঙ্কা করছে তাঁর পরিবার। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের হয়তো পাড়ায় থাকতে দেবে না। আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। খুন করারও হুমকি দিয়েছে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এলাকায় টহলা বাড়ানো হয়েছে। দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy