Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রশংসার বানেও ভেসে যাননি টুলটুলি

গত দু’দিনে তাঁদের মেলবক্স উপচে পড়ছে ই-মেলে। দুঃসাহসী কাজ করে দেখানোর জন্য কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছেন, তো কারও শুভেচ্ছা বার্তা তাঁর স্বামীর জন্য।

অস্ত্রোপচারের পরে শিবু দাস। স্বামীকে দেখতে হাসপাতালে টুলটুলি দাস। শনিবার কল্যাণীতে। —নিজস্ব চিত্র।

অস্ত্রোপচারের পরে শিবু দাস। স্বামীকে দেখতে হাসপাতালে টুলটুলি দাস। শনিবার কল্যাণীতে। —নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

গত দু’দিনে তাঁদের মেলবক্স উপচে পড়ছে ই-মেলে। দুঃসাহসী কাজ করে দেখানোর জন্য কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছেন, তো কারও শুভেচ্ছা বার্তা তাঁর স্বামীর জন্য।

এমনটা যে ঘটতে পারে, তা ভাবতেও পারেননি মধ্য তিরিশের তরুণী টুলটুলি দাস।

গত বৃহস্পতিবার ভোট দিতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁর স্বামী, পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক শিবু দাসের দু’টো হাতই ভেঙে দিয়েছিল তৃণমূলের ভৈরব-বাহিনী। রেয়াত করা হয়নি তাঁকেও। কিন্তু দমে যাননি কল্যাণীর বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা শিবু। দু’হাতে প্লাস্টার

করিয়ে এসে ভোট দিতে যান তিনি, সঙ্গে টুলটুলি।

এর পরের ঘটনা সকলেরই জানা। ভোটে গুন্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের ‘মুখ’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন শিবু-টুলটুলি। তাই অভিনন্দনের বান ডেকেছে।

যদিও দু’টো দিন বাড়ি-ডাক্তার করে এক রকম ঘোরের মধ্যেই কেটে গিয়েছে টুলটুলির। শনিবার কল্যাণীর একটি নার্সিংহোমে শিবুর দুই হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার মধ্যে বাড়ি-হাসপাতাল-বাচ্চা সামলে সকালেই আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় পড়ে নিয়েছেন প্রীতিকুমার

সেনের লেখা। জেনেছেন, গত বছর বিধাননগর পুর নির্বাচনে মার খাওয়া সেই প্রবীণেরও ‘শ্রদ্ধার পাত্র’ হয়ে উঠেছেন তাঁরা।

আর এত ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান পেয়ে যেন খানিক অস্বস্তিতেই পড়ে গিয়েছেন। ‘‘বিশ্বাস করুন, কোনও বাহবা পাওয়ার জন্য আমরা রুখে দাঁড়াইনি’’— বলেন টুলটুলি। তার পরই চোয়াল শক্ত করে যোগ করেন, ‘‘পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী বা নির্বাচন কমিশন, কেউই ভয় কাটাতে পারবে না। ভয় কাটাতে হবে নিজেদেরই। যেমনটা করে দেখিয়েছিলেন সল্টলেক এবি ব্লকের প্রীতিকুমার সেন।’’

ভোটের আগের রাতেই শিবু-টুলটুলির বাড়িতে শাসিয়ে গিয়েছিল বাহুবলীরা। তা-ও তাঁরা ভোট দিতে গিয়েছিলেন। টুলটুলি বলেন, ‘‘আমরা তো বাড়িতেও নিরাপদ নই। তা হলে আর কীসের ভয়ে লুকিয়ে থাকব? ভয় কাটাতে না পারলে বরং আরও চেপে বসতো। আর, ওদের একটা শিক্ষা দেওয়াও দরকার ছিল।’’

টুলটুলিরা কিন্তু মোটেই বিপ্লবী গোছের কিছু নন। নিতান্তই ছাপোষা। পাঁচ বছরের মেয়ে আর ন’মাসের ছেলেকে বাড়িতে রেখে ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। জানেই মেরে দিত যদি? কী হতো ওই শিশুদের?

টুলটুলি বলছেন, ‘‘চারপাশে যা চলছে, ভয় তো লাগেই। কিন্তু আমরা যদি ভয়ে কুঁকড়ে যাই, ছেলেমেয়েদের কী শেখাব? ওরা তো জীবন যুদ্ধে আগেই হেরে বসে থাকবে!’’

কেন তাঁরা সে দিন নিশানা হয়ে গেলেন? ‘সিপিএমের লোক’ বলে?

এ দিনই শিবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন পলিটেকনিক শিক্ষকদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব পলিটেকনিক টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএফপিটিএ)-র রাজ্য শাখার সম্পাদক পঙ্কজ মণ্ডল। তিনি জানান, রাজ্যে পলিটেকনিক শিক্ষকদের দু’টি সংগঠন রয়েছে। তাঁদের সংগঠনে তৃণমূল ছাড়া প্রায় সব দলই রয়েছে। অন্যটি তৃণমূলের। শিবু কিন্তু কোনও সংগঠনেরই সদস্য নন।

পঙ্কজ বলেন, ‘‘উনি যে কোনও দলের লোক নন, এতেই তা প্রমাণ হয়ে যায়। শিবুকে আমি যতটুকু চিনি, উনি প্রতিবাদী মানুষ। তাঁর স্ত্রী-ও যে ভাবে তাঁকে সঙ্গত করেছেন, বাহবা জানাতেই হয়।’’ সুদূর বিশাখাপত্তনমে বসে শিবুর জন্য রাজ্য সরকারের থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্রশেখরও। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন।

অস্ত্রোপচার শুরু হওয়ার আগে পঙ্কজবাবুরাই শিবুর হাতে তুলে দেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা ই-মেলের একগুচ্ছ প্রিন্ট। তাঁদের সাহসিকতায় যে সর্বত্র সাড়া পড়ে গিয়েছে, জানিয়ে দেন তা-ও। জানান, এই লড়াইয়ে তাঁরাও শিবু-টুলটুলির পাশে আছেন।

অস্ত্রোপচারের ঝক্কিতে শিবু কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। টুলটুলি জানান, প্রীতিকুমারবাবুর মতো মানুষেরা যে তাঁদের দেখে নতুন করে মনে জোর পাচ্ছেন, এটা জেনে তাঁরা খুব খুশি। সুযোগ পেলে এক বার প্রীতিবাবুর সঙ্গে দেখাও করতে চান তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

shibu and tultuli das assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy