Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিরোধে প্রযুক্তিই হাতিয়ার বামেদের

রবিবারের দুপুর। প্রবল গরমে মাথার উপর পাখা ঘুরছে বটে কিন্তু তার সম্বল আওয়াজটুকুই। মাথা নিচু করে দলীয় কার্যালয়ে বসে রয়েছেন তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক কমিটির এক নেতা। মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে ঘামটা মুছে নিচ্ছেন। সামনে বসে রয়েছে গেঞ্জি পরা একটা ছেলে।

ইভিএম মেশিন সংগ্রহ করছেন ভোট কর্মীরা (উপরে), এক ফাঁকে বিশ্রাম পুলিশ কর্মীর (নিচে)। ঘাটালের কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

ইভিএম মেশিন সংগ্রহ করছেন ভোট কর্মীরা (উপরে), এক ফাঁকে বিশ্রাম পুলিশ কর্মীর (নিচে)। ঘাটালের কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৩
Share: Save:

রবিবারের দুপুর। প্রবল গরমে মাথার উপর পাখা ঘুরছে বটে কিন্তু তার সম্বল আওয়াজটুকুই। মাথা নিচু করে দলীয় কার্যালয়ে বসে রয়েছেন তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক কমিটির এক নেতা। মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে ঘামটা মুছে নিচ্ছেন। সামনে বসে রয়েছে গেঞ্জি পরা একটা ছেলে। ওই নেতার সামনে বসেই বলে চলেছে সে, ‘‘আগে যেমন হাতে টাকা গুঁজে দিলেই কাজ চলে যেত, এ বার অতটা করা যাচ্ছে না। জলদি বলুন তো কী করব?’’ খানিক চুপ করে থাকলেন তৃণমূলের ওই নেতা। তারপর বললেন, ‘‘নিজের দিকটা আগে দেখবে। পরিস্থিতিও আমাদের অনুকূলে নেই। ভেবে কাজ করবে।’’ ছেলেটি চলে যেতেই একরাশ বিরক্ত নিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘‘নেতাদের কবে থেকে খবর দিচ্ছিলাম, পরিস্থিতি ভাল নয়। এতদিনে ঘুম ভাঙল! যা হওয়ার হবে।’’

দ্বিতীয় দফা ভোটের আগের দিন শাসকদলের কার্যালয়ের এমন ছবিই জানান দিচ্ছে কিছুটা চাপেই রয়েছে তৃণমূল। কারণ প্রতিরোধ গড়ে তুলছে বিরোধীরা। তৃণমূলের ভোট-কৌশলের খবর পেয়ে রীতিমতো প্রশিক্ষণ ও দলীয় কর্মীদের হাতে মোবাইল দিয়ে প্রতিরোধে নেমেছে সিপিএম। আবার ঠিক তথ্য দেওয়ার পরও প্রশাসন তৎপর না হলে ভোটের দিনই অবস্থান-বিক্ষোভ করার কড়া হঁশিয়ারিও দিয়েছে বামেরা। ভোটের সময় যত এগোচ্ছিল, ততই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পাচ্ছিল বিরোধীরা। ফলে এলাকায় সংগঠনও চাঙ্গা করে নিয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম জোট।

ঘাটাল-সহ মহকুমার তিনটি বিধানসভাতেই ছবিটা একই। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই এলাকার খবর পাওয়ার পর থেকে তৃণমূল নেতারা কখনও মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন, কখনও চেঁচামেচি করছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, প্রতি বিধানসভায় ১৫-২০টি করে গ্রাম দখল করে নিয়ে ভোটটা করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের। তখনও বিরোধীদের সংগঠন এত শক্ত হবে বোঝা যায়নি। শাসক দলের ঘাটাল ব্লকের এক শ্রমিক নেতার কথায়, “আসলে প্রথমের দিকে সিপিএম কাউকেই কিছু বুঝতে দেয়নি। ভোটের ঠিক দু’দিনের মাথায় যখন আমরা বুঝতে পারলাম, তখন আর হাতে সময় নেই। তবু শেষ চেষ্টা করা হবে।’’

তৃণমূলের ওই সিটু নেতার কথা অকপটে স্বীকারও করলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরাও। বলেন, “মহকুমার তিনটি বিধানসভাতেই আমাদের দিকে পাল্লা ভারী। তৃণমূলেরই বহু নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। আমরা দলেরই কাউকে বলিনি। আর এখন সাধারন মানুষ নিজেরাই আমাদের সঙ্গে বেরোচ্ছেন, আর তাতেই ভয় পেয়েছে তৃণমূল।’’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রতি বুথেই আমাদের কর্মীরা থাকবেন। সামান্য গণ্ডগোল হলেই কমিশনে জানানো হবে। আমরা সতর্ক রয়েছি।’’

প্রশ্ন, ভোট নিয়ে শাসক দল এত উদ্বেগে কেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের কোন্দল একটা বড় কারণ। তারপর বিরোধীদের একটা ভোট তো রয়েইছে। সঙ্গে কংগ্রেসও যোগ হয়েছে। সব এলাকাতেই প্রার্থী সহ প্রার্থীদের অনুগামীদের সঙ্গে বিরোধ থাকায় দলের একটা অংশ বিরোধীদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর সেটাই চিন্তায় ফেলেছে শাসক দলকে।”

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 tmc left front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy