সজাগ রক্ষীরা। ইভিএম যন্ত্র রাখা হয়েছে সতর্ক প্রহরায়। চাঁচলে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
উত্তরের ছয় জেলায় ভোট মিটে গিয়েছে রবিবারেই। আর তার পর থেকেই শুরু হয়েছে সন্ত্রাস। নানা জায়গা থেকে মঙ্গলবারও মারধর, বোমাবাজির খবর মিলেছে। সোমবারের ঘটনার জেরও রয়েছে নানা জায়গায়। অভিযুক্তদের অনেকেই পলাতক। গণনার পরে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে উত্তরের এখন পরিস্থিতি কী, তার খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
বোমাবাজি চলছেই
বোমার শব্দ যেন থামছেই না কুমারগঞ্জে। মালদহের পুখুরিয়া থানার কুমারগঞ্জে গত রবিবার ভোটের পর থেকে বোমাবাজি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন মঙ্গলবার সকালেও এলাকায় বারবার বোমাবাজি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। আতঙ্কে গত সোমবার থেকে এলাকার বেশিরভাগ দোকানবাজার বন্ধ। সোমবার সকাল থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হলেও, বোমাবাজি চলছেই। খোদ এসডিপিও এলাকায় গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বোমায় কেউ হতাহত না হলেও কংগ্রেস ও আরএসপির মধ্যে ফের যে কোনও সময় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, এলাকার কংগ্রেসের প্রধানের সঙ্গে আরএসপি কর্মীদের বিবাদের জেরেই এলাকা অশান্ত হয়ে উঠেছে। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ হয়েছে। বোমাবাজি হয়েছে। এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ ভোটের পরে পারিবারিক বিবাদে রাজনৈতিক রং লেগেছে বলে জোটের নেতারা দাবি করেছেন।
বুথ থেকে ফিরে মার
ধূপগুড়ির একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন জলপাইগুড়ির শিরিষতলার বাসিন্দা শিক্ষা দফতরের কর্মী গৌর রায়। ভোট সামলে, ইভিএম জমা দিয়ে রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ জলপাইগুড়ি পৌঁছন। গলির সামনে পৌঁছতেই একদল তৃণমূল কর্মী তাঁকে ঘিরে ধরেন বলে অভিযোগ। চাকরিজীবনের গোড়া থেকেই বাম প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সদস্য গৌরবাবু। বছরকয়েক ধরে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে গৌরবাবুর অভিযোগ। মঙ্গলবার কো-অর্ডিনেশন কমিটির জলপাইগুড়ি শাখার প্রতিনিধিরা অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে গিয়ে গৌরবাবুকে মারধরে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান। গৌরবাবুকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বেরিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ধাক্কাধাক্কিতে গৌরবাবুর মেয়ের কোলে থাকা তিন বছরের শিশুও জখম হয়। বাড়ির সামনের দরমার বেড়া ভেঙে যায়। গৌরবাবুকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনায় গৌরবাবুর স্ত্রী তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরাও পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে গৌরবাবু এবং তাঁর দুই আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবারও এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছিল। তবে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর দাসের পাল্টা দাবি, ‘‘ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’
বাইকের বদলা পিস্তল
গত রবিবার ভোটের পরে ইসলামপুরের পণ্ডিতপোতা এলাকায় কংগ্রেস কর্মীদের চিহ্নিত করে ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হাসপাতালে ভর্তি এক কর্মীর পরিস্থিতি গুরুতর বলে অভিযোগ। গত সোমবার রাতে ইসলামপুরের নিরাপদনগর কলোনির এক কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বাইক কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস কর্মীর অভিযোগ, বুথে দলের প্রার্থীর হয়ে এজেন্ট থাকার ‘শাস্তি’ দিতেই বাইক কেড়ে নেওয়া হয়। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, পণ্ডিতপোতা এলাকাতে ভোটের আগে থেকেই কংগ্রেস কর্মীরা হুমকি দিচ্ছে। সোমবার সকালে এলাকার তৃণমূল প্রধানের সাবির আলমের বাড়িতে হামলা চালানোর পাশাপাশি বাড়ি ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ ওঠে। কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পিস্তল নিয়ে তাড়াও করেছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লক সভাপতি মেহেতাব চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের ওই এলাকাতে এতদিন তেমন প্রভাব ছিল না। এবার এলাকায় আমাদের ভাল ভোট হওয়াতেই কংগ্রেস হামলা চালাচ্ছে।’’ অন্য দিকে, কংগ্রসের ইসলামপুরের ব্লক সভাপতি জাকির হুসেন বলেন, ‘‘ভোটের পরে তৃণমূল বুঝেছে, জেতা আসন হাতছাড়া হচ্ছে। তাই আমাদের পোলিং এজেন্টদের মারধর চালাচ্ছে।’’
বিরোধীদের বোমা
গভীর রাতে বাড়ির দেওয়ালে বোমা ছুড়ে তৃণমূলের কর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে। বিরোধীরা অবশ্য হুমকি দেওয়ার পাল্টা অভিযোগও তুলেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতে আলিপুরদুয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরিবারের তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জয়ন্ত চৌধুরী এবং তাঁর মলিনাদেবী-র দাবি, এবারের ভোটে তৃণমূলের হয়ে প্রচার করেছেন তাঁরা। সে কারণেই ভোটের পরে তাঁদের বাড়িতে বোমা মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। জয়ন্তবাবুর মা যূথিকাদেবী অভিযোগ করে বলেন, “তখন রাত দশটা বেজে গিয়েছে। হঠাৎ বাড়ির বারান্দায় আওয়াজ হল। ধোঁয়ার গন্ধ পেলাম। পরে আশেপাশের লোক ছুটে আসে। দেখি বারান্দায় বোমা মেরেছে কেউ।’’ বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকার অবশ্য তৃণমূলের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেউ কোথাও পটাকা ফাটিয়ে থাকবে। পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। ওই পরিবারের অনেকেই কংগ্রেস করতেন বলে জানি। আমি ওই বাড়িতেও গিয়েছিলাম। উল্টে তৃণমূলের তরফে আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কর্মীদের বাড়িতে বোমা পড়েছে বলে শুনেছি।”
হুমকি এবং গরম তেল
বোমা, পিস্তলের পরে বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য ভোটের মরসুমে গরম তেলও অস্ত্র হয়ে উঠেছে। গত রবিবার ভোটের দিন মালদহের বৈষ্ণবনগরের রাজনগর গ্রামে দুই বিজেপি কর্মীকে মারধর দিয়ে গায়ে গরম তেল ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই দুই বিজেপি কর্মী এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। অভিযুক্তরা অধরা। সিপিএমের পোলিং এজেন্ট সন্তোষ রায়কেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভোট পর্ব মেটার পরেই দু’টি অভিযোগ উঠেছে মালদহে। বৈষ্ণবনগরেই সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে শাসানি চলছে বলে অভিযোগ। গণনার পরে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। জোটের নেতাদের অভিযোগ, শাসক দল বুঝতে পারছে তাদের অস্থিত্ব সংকটের মুখে। তাই দাঁত-নখ বের করতে শুরু করেছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy