সৌমিক হোসেনের সঙ্গে কামরুজ্জামান (বাঁ দিকে)।— ফাইল চিত্র
তার বাড়বাড়ন্ত যাঁর হাত ধরে তিনি এখন চুপ। মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন বলছেন, ‘‘একটা প্রাপ্তবয়স্ক লোক কোথায় গিয়েছে, সেটা আমি কী করে বলব বলুন তো!’’ স্পষ্টই বিরক্ত শোনাচ্ছে তাঁর গলা।
তাঁর পুত্র, ডোমকলের প্রার্থী, সৌমিক হোসেনও দিন কয়েক আগে বাবার সুরেই বলেছিলেন, ‘‘ও কি বাচ্চা ছেলে যে ওকে শেল্টার দেব!’’
পিতা-পুত্র দু’জনেই জানেন না, ডোমকলে দলের অন্যতম ‘মুখ’ কামরুজ্জুমান কোথায়। তবে, শুধু দলীয় কর্মীরাই নন, গোটা ডোমকল জানে, হরিডোবার কামরুর উত্থান মান্নানের হাত ধরে। তাকে টাউন কংগ্রেসের সভাপতি করার পরে, ডোমকলে লড়াই করতে আসা ছেলের ‘দায়িত্ব’ বিশ্বস্ত কামরুর হাতেই সঁপে দিয়েছিলেন মান্নান। তার পর যথা সময়ে তার মাথা থেকে হাতও তুলে নিয়েছেন তাঁরা।
তৃণমূলের ডোমকল এলাকার এক প্রভাবশালী নেতা যা শুনে বলছেন, ‘‘একেই বলে সময়ে হাত ধুয়ে ফেলা!’’ কামরুকে ‘লালন পালন’ করে বড় করে এখন চিনতে না পারা, রাজনীতিতে এ খেলা নতুন নয়। তবে ভোটের সকালে খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়া কামরুকে যে এত তাড়াতাড়ি ঝে়ড়ে ফেলবে তৃণমূল, তা দলীয় কর্মীরা ভাবতেই পারেননি।
আর তাই, কামরু কোথায়, জানতে চাইলে বেজায় চটছেন তাঁরা। তবে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, কামরু রয়েছেন, দলেরই আশ্রয়ে। জেলার বাইরে দক্ষিণবঙ্গের এক ডেরায়। তা নিয়ে অবশ্য জেলা পুলিশ বিশেষ মুখ খুলতে চায়নি।
দলের নেতারা জানাচ্ছেন, মান্নান হোসেন কংগ্রেসে থাকার সময় থেকেই কামরুর সঙ্গে তার পরিচয়। ডোমকলে সেই সময়ে কামরু ছিল পরিচিত কংগ্রেস-মুখ। অস্ত্র-সহ এক বার পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিল সে। তবে দল বদলের পরে মান্নানের ছায়ায় সে-ও পা বাড়িয়েছিল তৃণমূলে। আর দিন কয়েকের মধ্যেই জুটে গিয়েছিল ডোমকল টাউন কংগ্রেসের সভাপতির পদ।
শাসক দলে যোগ দেওয়ার পরে অপরাধ জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগও যে ক্রমশ বেড়ে উঠছিল, পুলিশই সে কতা কবুল করছে। জানাচ্ছে, ছোটখাট ‘অপারেশন’-এ হাত পাকাতে শুরু করেছিল সে। এলাকার দুষ্কৃতীরাও অষ্টপ্রহর তাকে ঘিরে থাকত। ইটভাটার মালিক থেকে ডোমকলে বাড়ি সঙ্গে গাড়ি ব্যবসা— সব মিলিয়ে ঘুরপথে অল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তির মালিকও হয়ে উঠেছিল সে। অথচ এই কামরুই আগে দিন গুজরান করত নিতান্তই লেপ তোষকের ব্যাবসা করে বলে জানা গিয়েছে। তবে শাসক দলে নাম লেখানোর পরেই ইটভাটার দৌলতে ফুলেফেঁপে ওঠে সে।
বছর দু’য়েক আগেও এক বার ইটভাটায় অগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল সে। পরে আত্মসমর্পণ করলেও জামিন পেতে দেরি হয়নি। দীর্ঘদিন ফেরার ছিল কামরু। পরে আত্মসমর্পণ করে সে। বিরোধীরা বলছেন, ক্ষমতার আঁচে জামিন পেতেও দেরি হয়নি তার। সেই আঁচ কত দিন স্থায়ী হয়, সেটাই দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy