একজন গত পাঁচ বছরের বিধায়ক ও অন্যজন গত তিনবছর ধরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। সরকারি অনুষ্ঠান কিংবা দলীয় সভায় দু’জনেই পাশাপাশি বসে মঞ্চ আলো করে থাকেন। জেলার রাজনীতিতে দু’জনই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সর্বোপরি দু’জনের নামের মধ্যে অনেকটাও মিল। একজন বিধায়ক সুকুমার দে, অন্য জন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরা।
কিন্তু নন্দকুমার এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় শাসক দলের এই দুই নেতার ঠান্ডা লড়াইয়ের কথা। এক সময় ব্লক যুব কংগ্রেস সভাপতি পদে থাকা সুকুমার দে প্রথম দিন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন। নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের হয়ে বিরোধী দলনেতাও হয়েছিলেন। বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে নতুন নন্দকুমার বিধানসভা গঠনের পর ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হন সুকুমার দে। বামফ্রন্ট প্রার্থী ব্রহ্মময় নন্দকে হারিয়ে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি।
আর দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের হয়ে গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান পদে থাকা সুকুমার বেরা ২০১২ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন। আর শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও দুই নেতার নিজস্ব অনুগামী রয়েছে ব্লকের প্রতিটি এলাকায়।
এ বার বিধানসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণার আগে দুই নেতার পাশাপাশি তাঁদের অনুগামীদের দিন কেটেছে চরম উৎকণ্ঠা । তবে দলের প্রার্থী তালিকায় ফের বিধায়ক সুকুমার দে’র নাম স্থান পায়। তাতে অবশ্য প্রকাশ্যে কোন ক্ষোভ প্রকাশ করেনি বিরোধী শিবিরের নেতা। এমনকি দুই শিবিরের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দল বেঁধে দেওয়াল লিখন থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন। কিন্তু এতদিন ধরে আড়ালে-আবডালে দুই নেতার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই যে এখন উদ্বেগের কারণও হয়েছে তার টের পাচ্ছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও।
তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার দের বক্তব্য, ‘‘এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে কিছু নেই। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে আমার কোন মত বিরোধ নেই। আমরা সবাই একসাথে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বর্তমান সরকারের আমলে গত পাঁচ বছরে নন্দকুমারে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তুলে ধরেই প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
আর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধানসভার প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই।’’
এবার ভোটের মুখোমুখি তিন প্রার্থী।
দুই তৃণমূল নেতা প্রকাশ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ অস্বীকার করলেও শাসক দলের চিন্তা বেড়েছে আরও একটি কারণে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মতে, বিধায়ক ও পঞ্চায়েত সমিতির কোন্দলের মাঝে দলের একাংশ কর্মী বিরোধী শিবিরে ভিড়েছে। আর শাসক দলের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে বাম–কংগ্রেস জোটের সমর্থনে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থী সিরাজ খানও। মাস খানেক আগেও সিরাজ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত ছিল। সেই সিরাজ এ বার নন্দকুমার বিধানসভায় বাম -কংগ্রেস জোটের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হওয়ায় শাসক দলের সঙ্গে লড়াই জমে উঠেছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
সিরাজের দাবি, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল সরকার ও নন্দকুমার বিধানসভা এলাকায় গত পাঁচবছর ধরে তৃণমূলের বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও এলাকায় সড়ক বেহাল হয়ে রয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থাও ভাল নয়। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এর বিরুদ্ধেই আমার লড়াই।’’
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থী সুকুমার দে পেয়েছিলেন ৫০.৯৪ শতাংশ ভোট। বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৪৪.২০ শতাংশ ভোট। আর ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট। সেখানে বাম-কংগ্রেসের জোটের হিসেব বলছে তারা পেয়েছিল প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট।
শাসক দলের যুযুধান দুই শিবিরের আপাত মিলন হলেও শেষ জয়ের হাসি কে হাসেন তাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy