সেই মুচলেকা।
আশঙ্কাটা ছিলই। কার্যত হলও তাই। হালিশহরে তিন বছরের শিশুর উপরে হামলাকারীদের মদতদাতা নেতারা প্রমাণ করলেন, হালিশহরে ত্রাসের রাজত্ব বহাল রাখার চেষ্টা চালাতে কসুর করবেন না তাঁরা।
অভিযোগ, ওই নেতাদের চাপেই সায়ন্তিকার বাবা শ্যামল ঘোষ বুধবার মুচলেকা লিখে দিলেন: তাঁর বাড়িতে হামলা করেনি তৃণমূলের কোনও কর্মী। ব্যক্তিগত গোলমালের জেরেই তাঁর তিন বছরের শিশুটি মার খেয়েছে বলেই মুচলেকায় লিখেছেন তিনি।
কোলের শিশু সায়ন্তিকাকে নিয়ে দেবশ্রী ভোট দিতে এসেছিলেন বাপের বাড়িতে। ভোটের আগের রাতে তাঁদের বাড়িতে হামলা করে জনা আটেক দুষ্কৃতী। লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় দেবশ্রী ও তাঁর বাবা টিটু সমাজপতিকে। রেহাই পায়নি ছোট্ট সায়ন্তিকাও। হাত মুচড়ে দেওয়া হয় তার। বাঁশের ঘা পড়ে পায়েও। এর পরেও অবশ্য ভোট দেওয়া আটকানো যায়নি দেবশ্রীর। প্রশাসনের নিরাপত্তায় মেয়েকে কোলে নিয়েই ভোট দিয়ে এসেছিলেন তিনি। দুষ্কৃতীদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে তাঁর সঙ্গে ভোট দিতে গিয়েছিলেন এলাকার আরও কিছু মানুষও।
দেবশ্রীরা ভয় উপেক্ষা করে ভোট দিলেও, এলাকায় দুষ্কৃতীরা যে তাঁদের ছেড়ে দেবে না—এই আশঙ্কা অবশ্য সে দিনই প্রকাশ করছিলেন অনেকেই। দেবশ্রী বাবা টিটু সমাজপতি মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভোটকেন্দ্রে। কিন্তু তিনি নিজে ভোট দিতে সাহস পাননি। দেবশ্রীর ছোটভাই তো ভোটকেন্দ্রেও পা রাখতেও ভরসা পাননি। পুলিশ কর্তাদের সামনেই হাতজোড় করে বলেছিলেন, ‘‘দিদি তো শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। আমাদের তো এখানে থাকতে হবে। পুলিশ তো আর সব সময় পাহারা দেবে না।’’ তখনই বোঝা গিয়েছিলে আতঙ্কের পাথর কতটা চেপে বসেছে এলাকার মানুষের মনে। দৃশ্যতই গোটা এলাকা তখন ছিল সুনসান। দেবশ্রী পুলিশি পাহারায় ভোট দিতে যাওয়ার তোড়জোড় করতে ধীরে ধীরে কয়েকটি বাড়ি থেকে লোক বের হতে শুরু করেন। তাঁদের কয়েকজনই পুলিশি পাহারায় দেবশ্রীর সঙ্গে গিয়েছিলেন ভোট দিতে।
দেবশ্রীর স্বামী হালিশহর পুরসভার কর্মী। তিনি থাকেন ওই অন্য পাড়ায়। এলাকাবাসীর একাংশ জানান, দেবশ্রীর একরোখা মূর্তি দেখে এলাকার তৃণমূল নেতারা ঘাবড়ে যান। এর পরেই তাঁরা ‘কামদুনি লাইন’ নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন। কামদুনিতে কলেজছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের পরে তাঁর পরিবারকে প্রথমে ভয় দেখিয়ে, পরে চাকরি দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ ভাবেই তাঁদের মুখ বন্ধ করা হয়েছিল বলে কামদুনির প্রতিবাদীদের অভিযোগ। হালিশহরের শিশুকে মারধরের ঘটনায় শোরগোল শুরু হওয়ায় শাসকদলের নেতারা সেই পথই ধরেছেন বলে এলাকাবাসীর একাংশ জানান। অভিযোগ, দেবশ্রীকে বাগে আনতে না পেরে, তাঁর স্বামীর উপরে চাপ তৈরি করা হয়। তাঁর চাকরি নিয়েও ভয় দেখানো শুরু হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত মুচলেকা দিতে বাধ্য হন দেবশ্রীর স্বামী শ্যামল।
কী লেখা হয়েছে মুচলেকায়?
শ্যামল লিখেছেন, ‘‘আমি লিখিত দিচ্ছি যে আমার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে মিডিয়া যে প্রচার আনছে তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়, সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বলে আমি মনে করি। ....বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি যে ভুয়ো তথ্য সম্প্রচার না করার জন্য ও টিভি ক্যাপশন না দেখানোর জন্য।’’
শ্যামলকে দিয়ে এই মুচলেকা লেখানো হচ্ছে, তখন দেবশ্রী রয়েছেন এবিপি আনন্দের শো-এ। ওই অনুষ্ঠানে
সে রাতের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। যাঁরা ভোট লুঠ করতে চায়, তাদের ভোট না দেওয়ার জন্য আবেদনও জানান তিনি।
মঞ্চ থেকে নেমে তিনি ভাইয়ের ফোন পেয়ে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে দিয়ে এই মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘চাপ দিয়ে আমার স্বামীকে দিয়ে এই মুচলেকা লেখানো হয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা মেরে গেল, আর এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার হয়ে গেল! আমিও এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’
মুচলেকা লেখার ঘটনা সম্পর্কে কী বলছেন শ্যামল?
এ দিন রাতে তিনি বলেন, ‘‘আমি পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে সামান্য রোজগার করে দিন গুজরান করি। রাজা দত্ত ওই পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান। তিনিই আমাকে ডেকে ওই লেখার উপরে সই করতে বলেন।
উনি যা বলেছেন তা-ই করেছি।’’
শ্যামলের এই অভিযোগ সম্পর্কে কী বলেছেন এলাকার তৃণমূল নেতা রাজা দত্ত? তাঁর বক্তব্য, ‘‘শ্যামল আমার কাছে এসে এই লেখা দিয়ে গিয়েছে। আমার কিছু করার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy