সমাধান চাই। ডাকঘর মোড়ে পথ অবরোধ করে ঘোষণা অরিন্দম ভট্টাচার্যের। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
কোথাও জোট প্রার্থীকে মারধর, কোথাও সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে শাসানি-মারধর, কোথাও আবার বিজেপি প্রার্থীর বাড়ির সামনে বোমা। প্রত্যেকটি ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তবে কি ভোটের আগে ভয় পাচ্ছে শাসক শিবির? না হলে তৃণমূলের এলাকা বলে পরিচিত শান্তিপুর, চাকদহ, চাপড়া, হরিণঘাটা, গয়েশপুরে তৃণমূল এত মরিয়া হয়ে উঠছে কেন? বিরোধীদের দাবি, জোট মাথাচাড়া দিতেই ভয় পেয়ে তৃণমূল এ সব করছে। আর তৃণমূল সেই একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে, ‘‘সব মিথ্যে। সব সাজানো।’’
শান্তিপুর
সোমবার রাতে শান্তিপুরের সূত্রাগড় ফকিরপাড়া এলাকার সিপিএম কর্মী নজরুল বিশ্বাসকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে রাত সাড় বারোটা নাগাদ নজরুলের বাড়িতে যান শান্তিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্য ও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সৌমেন মাহাতো। সঙ্গে ছিলেন দুই দলের বেশ কয়েক জন কর্মী। প্রায় একই সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় শান্তিপুর থানার পুলিশ।
অরিন্দমবাবু কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিককে কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর নামে অভিযোগ জানান। পুলিশ চলে যেতেই তৃণমূলের লোকজন অরিন্দমবাবুর উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। মারধরের পাশাপাশি তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। অরিন্দমবাবুর অভিযোগ, ‘‘একজন আমার মাথা লক্ষ্য করে লোহার রড দিয়ে মারতে আসে। মাথা সরিয়ে নিলে রড এসে পড়ে কাঁধের উপরে। তৃণমূলের এক দুষ্কৃতী তলোয়ার নিয়ে কোপাতে আসছিল। আমার ভাই বাধা দিতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছে।’’
খবর পেয়ে ফের পুলিশ আসে। ততক্ষণে অবশ্য দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এরপর শান্তিপুর থানার ওই পুলিশকর্মীদের আটকে রাখা হয়। অরিন্দমবাবুর অভিযোগ, ‘‘সব কিছু জানার পরেও পুলিশ আমাদের বিপদের মধ্যে ফেলে চলে যায়। তারা আমাদের উপরে হামলার সুযোগ করে দিয়েছিল।’’
ঘটনা জানাজানি হতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে শান্তিপুরের ডাকঘর মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস ও সিপিএম। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে শান্তিপুরে ওসিকে অপসারণের দাবি তোলে বিক্ষোভকারীরা। ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন অরিন্দমবাবু। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ মঙ্গলবার ওসি পার্থপ্রতীম রায়কে অপসারণ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে বলেন, ‘‘এটা সিপিএমের পুরনো খেলা। প্রতি বার ওরা ভোটের আগে এমন নাটক করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বানানো গল্প।’’
গয়েশপুর
সিপিএমের সক্রিয় কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতের ওই ঘটনার প্রতিবাদে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা মঙ্গলবার দুপুরে কল্যাণী মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। তবে তাঁদের দাবি, ওই ঘটনার পরে ভীত নয়, বরং প্রতিরোধ গড়ে তুলছে গয়েশপুরের সিপিএম কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে ভাবেই তাঁদের বুথে যাওয়া তৃণমূল আটকাতে পারবে না।
গয়েশপুর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বরাবরই সিপিএমের পোলিং এজেন্ট হন শ্যামল পাল। তবে গত পুরসভা এবং লোকসভা ভোটে তিনি পোলিং এজেন্ট হতে পারেননি। এখন তিনি ফের আগের মতোই এলাকার সমর্থকদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং, মিছিল করছেন। তিনি আগাম জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ বারে পোলিং এজেন্ট তিনিই হবেন। তাঁর অভিযোগ, দিন কয়েক আগে রাতে দলীয় কার্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে আটকে পোলিং এজেন্ট না হওয়ার জন্য হমকি দেয়। সে দিন তাঁকে মারধরও করা হয়।
সোমবার রাতে ফের তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় এক দল দুষ্কৃতী। শ্যামলবাবুর অভিযোগ, তারা সকলেই তৃণমূল আশ্রিত। এ দিন তারা বাড়ির জানালা ভাঙচুর করে। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায়, ভোটের দিন তিনি বাড়ি থেকে বেরোলে, প্রকাশ্যে খুন করা হবে তাঁকে।
সিপিএমের প্রার্থী অলকেশ দাসের অভিযোগ, তৃণমূল বুঝতে পেরেছে তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আর সেই কারণে এ ভাবে চমকে, ধমকে তারা জিততে চাইছে। গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি মরণ দে অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘সব মিথ্যে অভিযোগ।’’
হরিণঘাটা
সোমবার রাতেই হরিণঘাটার বিজেপি প্রার্থী সুরেশ সিকদারের বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয়। সুরেশবাবু জানান, রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ দুষ্কৃতীরা এসে তাঁর বাড়ির সামনে পর পর দুটি বোমা মারে। ওই বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, তাঁকে ভয় দেখিয়ে ভোটের ময়দান ছাড়া করার জন্য তৃণমূল এ সব করিয়েছে। ঘটনার পরেই সুরেশবাবু পুলিশে খবর দেন। সকালে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষককেও খবর দেওয়া হয়। তিনি এসে স্প্লিন্টারও সংগ্রহ করে নিয়ে যান। সুরেশবাবু বলেন, ‘‘আমি প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলের অসুবিধা হচ্ছে। সেই জন্যই ওরা এ সব করছে।’’ যা শুনে হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ বলেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থীর জন্য আমাদের অসুবিধা হবে, তেমন দিন আসবে না। আসলে উনি নিজের গুরুত্ব বাড়াতে এমন মিথ্যে অভিযোগ করছেন।’’
চাকদহ
আরএসপি-র পাঁচ কর্মীকে মারধর ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে চাকদহের উত্তর পাঁচপোতা এলাকার ঘটনা। জখম ওই পাঁচ কর্মীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, চাকদহের বিভিন্ন এলাকায় জোটের কর্মীদের তৃণমূল ভয় দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ দিন রাত আটটা নাগাদ উত্তর পাঁচপোতার ওই আরএসপি-র কার্যালয়ে হামলা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তারা সকলেই তৃণমূলের লোক। সেই সময় ঘরে জনা দশেক কর্মী ছিলেন। জখম ওই কর্মীরা জানান, ঘরে ঢুকে ওরা ভাঙচুর শুরু করে। ভয়ে কয়েকজন পালিয়ে যায়। পাঁচ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
আরএসপি-র চাকদহ লোকাল কমিটির সম্পাদক বিশ্বনাথ সাহা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় আমরা শক্তিশালী। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের থেকে এ বার ওই এলাকায় সিপিএম প্রার্থী অনেক বেশি ভোট পাবে। এটা বুঝতে পেরে তৃণমূল তাণ্ডব চালিয়েছে।’’ চাকদহের সিপিএম প্রার্থী বিশ্বনাথ গুপ্ত বলেন, ‘‘তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তাই ওরা সন্ত্রাস করতে চাইছে।’’
চাকদহের তৃণমূল প্রার্থী রত্না ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা নয়, ওরাই এ বারে হেরে যাবে বুঝতে পেরে এ সব নাটক করছে। বরং ওরাই আমাদের একজন কর্মীকে মারধর করেছে।’’
চাপড়া
চাপড়াতেও দলের সভা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সিপিএম কর্মীরা। সোমবার রাতে তাঁদের তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। দলীয় সূত্রে খবর, জখম চার কর্মীকে চাপড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়েছে। চাপড়ার জোট প্রার্থী সিপিএমের সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “সভা শেষে ফেরার পথে শাসক দলের হাতে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে।” অভিযোগ মানতে চাননি চাপড়ার তৃণমূল প্রার্থী
রুকবানুর রহমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy