রানিবাঁধে বিজেপির সভার ফাঁকেই ভক্তের আবদারে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন গায়ক-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ছবি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।
আর দু’দিন পরেই ভোট। তার আগে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে প্রচারের শেষ লগ্নে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ঝড় তোলার চেষ্টা করল তিন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল, বাম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপি। শুক্রবার তিন শিবিরেই তিন মহারথী জঙ্গলমহলে জনসভা করেন। নেতাদের তাতিয়ে দেওয়া বক্তব্যে জমে উঠল ভোটপ্রচার।
এ দিন দুপুরে প্রথমে রানিবাঁধ, পরে তালড্যাংরায় জনসভা করেন বিজেপি-র সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ খাতড়ার এটিম ময়দানে সভা করেন। বিকেলে সভা করেন তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সিমলাপালের ভূতশহরে। বাবুল সুপ্রিয় এবং শুভেন্দু, দু’জনেই হেলিকপ্টারে চড়ে এক কেন্দ্র থেকে আর এক কেন্দ্র ঘুরেছেন। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ মহম্মদ সেলিম এ দিন হিড়বাঁধ ও খাতড়ায় সভা করেন। তিনি অবশ্য আকাশপথে নয়, ঘুরলেন গাড়িতে।
শাসকদলের নেতার বক্তব্যে ছিল, ৩৪ বছরের বাম-রাজত্বের অপশাসন এবং বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে পাঁচ বছরে উন্নয়নের খতিয়ান। বিরোধী দুই নেতার গলাতেই শোনা গিয়েছে, সারদা থেকে নারদা, টেট-কেলেঙ্কারি থেকে কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার কাহিনি। তবে, সভায় ভিড়ের পাল্লায় অবশ্য এগিয়ে থেকেছেন তৃণমূলের সাংসদ শুভেন্দুই।
বেলা ১১টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও বাবুলের হেলিকপ্টার যখন এ দিন রানিবাঁধের মাঠ ছুঁল, তখন ঘড়ির কাঁটা দু’টোর ঘরে। গায়ক সাংসদকে দেখতে অবশ্য অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষায় ছিল আমজনতা। ভিড়ও ভালই হয়েছিল। রাজ্যে একের পর এক কাণ্ডে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়ানোর প্রসঙ্গে তীব্র কটাক্ষ করে বাবুল বলেন, “তৃণমূলের নেতারা কী ভাবে টাকা নেয়, তা ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। আপনারা তা দেখেছেন। রাজ্যে এমন একটা সরকার চলছে, যার নেতারা তাঁদের নেত্রীর হাওয়াই চটি দেখিয়ে নিজেরাই কোটিপতি হচ্ছেন!’’ তালড্যাংরার সভাতেও একই সুর শোনা গিয়েছে বাবুলের।
তালড্যাংরার ভূতশহরে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু আধিকারীর সভায় উপচে পড়া ভিড়। ছবি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।
অন্য দিকে, খাতড়ার সভায় উপচে পড়া ভিড়ে প্রথম থেকেই বিরোধীদের চড়া সুরে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী সাংসদ শতাব্দী রায়। দক্ষিণ বাঁকুড়ায় প্রচার বলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই শুভেন্দুর বক্তৃতায় উঠে এসেছে জঙ্গলমহলে মাওবাদী নাশকতার কথা। জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর কারিগর যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “৩৪ বছর তো বামফ্রন্ট সরকার ছিল। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কতবার জঙ্গলমহলে এসেছেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬০ বার জঙ্গলমহলে এসেছেন। রাতে থেকেছেন। মাওবাদী সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর জঙ্গলমহলে এখন শান্তি ফিরেছে।’’ বিঁধেছেন সিপিএম ও কংগ্রেসের জোটকেও। বলেছেন, “ভাবতে অবাক লাগে, হাওড়ার আমতার কেন্দুয়ায় ১৩ জন কংগ্রেস কর্মীর হাত কেটেছিল যে সিপিএম, তার সঙ্গেই কংগ্রেস জোট করেছে!’’ বিজেপি-কেও এক হাত নিয়েছেন তিনি।
জঙ্গলমহলের সব আসন দখল করা এ বার তৃণমূলের লক্ষ্য। কারণ, গত বার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের তিন কেন্দ্রের ভোটারেরাই মুখ ফিরিয়েছিলেন মমতার থেকে। সে কথা মাথায় রেখে এ বার জঙ্গলমহলে প্রচার করেছেন যুব তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং খোদ মমতাও। এ বার এলেন আর এক শীর্ষ নেতা শুভেন্দু। এ বার ভোটে তৃণমূলেরই সরকার হবে দাবি করে শুভেন্দুর দাবি, “আমরা ২৫০টি আসনে জিতে ফের মা-মাটি-মানুষের সরকার গড়ব। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের এই তিনটি আসন গতবার আমরা সামান্য ভোটে হেরেছিলাম। এ বার জিতবই।’’ তবে, নারদ-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়ালেও সে প্রসঙ্গ একবারও তোলেননি শুভেন্দু।
শুভেন্দুর আক্রমণের পাল্টা এ দিনই সন্ধ্যায় দিয়েছেন সাংসদ তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতা মহম্মদ সেলিম। হিড়বাঁধ ও খাতড়ার দু’টি ভিড়ে ঠাসা সভায় সেলিম বলেন, “তৃণমূল দলটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। দলের মন্ত্রী, সাংসদরা জেল খাটছেন। তার পরেও দিদি সততার বুলি আওড়াচ্ছেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর টিপ্পনী, “আগে দিদি বলতেন, আমরা ভোটের জন্য চাঁদা তুলি না। ছবি বিক্রির টাকায় দল চালাই। চটাচট ছবি আঁকব। ফটাফট বিক্রি করব। এখন তো উনি ছবিও আঁকছেন না। বিক্রি হবে কোথায়। যারা কিনতো তারা সবাই এখন তো জেলে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার পাল্টা হিসাবে সেলিম বলেন, “যাঁরা লুঠের টাকা মেরে কোটিপতি হয়েছে, বাড়ি গাড়ি করেছে, তাদের হিসাব আমরাও ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy