Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

জঙ্গলমহলের মুড়ি-শিবির এ বার বাঁকুড়া, বর্ধমানেও

‘দিদি’ দু’টাকা কিলো দরে চাল দিচ্ছেন। ভাইয়েরা এক ধাপ এগিয়ে দিলেন চাল-ভাজা, থুড়ি, মুড়ি। সোমবার, দ্বিতীয় পর্বের ভোটের দিন ৩৫ টাকা কেজি দরে মুড়ি কিনে বুথের সামনে জাঁকিয়ে বসলেন ভাইয়েরা।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত সীট
বাঁকুড়া ও পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

‘দিদি’ দু’টাকা কিলো দরে চাল দিচ্ছেন। ভাইয়েরা এক ধাপ এগিয়ে দিলেন চাল-ভাজা, থুড়ি, মুড়ি।

সোমবার, দ্বিতীয় পর্বের ভোটের দিন ৩৫ টাকা কেজি দরে মুড়ি কিনে বুথের সামনে জাঁকিয়ে বসলেন ভাইয়েরা। দোসর হিসেবে কোথাও ঘুগনি, কোথাও কাঁচালঙ্কা-ছোলা। গ্লাস ভর্তি জল। শর্ত একটাই, জোড়া ফুলের বোতাম-ই টিপতে হবে।

জঙ্গলমহলে ভোটে এমনই ছবি দেখা গিয়েছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়, বিনপুর বা গোপীবল্লভপুরে। এ দিন সকালে সেই সংস্কৃতির ছোঁয়াচ দেখা গেল, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, ওন্দা ও বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর পূর্বেও।

বাঁকুড়ার পাইকপাড়া ভিকুরডিহি প্রাথমিক স্কুলের বুথের দু’দিকে এ দিন চলছিল এমনই দু’টো ‘মুড়ি শিবির’। চত্বরে চার জন আধা-সেনা। তাঁদের চোখের সামনেই চলছে শিবির। সেখানে অনেক ভোটারই ঘুগনি-মুড়ি খেয়ে গল্পে মশগুল।

ওই বুথের সামনে চাষ জমির উপরে আরও একটি শিবির। জমির আলে তৃণমূলের পতাকা পোঁতা। এক তৃণমূল কর্মী বললেন, “চায়ের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু একটু আগেই পুলিশ এসে বলল, ‘চা দেওয়া যাবে না’। বিরোধীদের চোখে পড়ছে। তাই ওটা বন্ধ করে দিয়েছি।”

কথার মধ্যেই বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা হাঁটতে হাঁটতে হাজির হলেন শিবিরে। এক তৃণমূল কর্মী জানতে চাইলেন, “কি গো মাসি, দু’নম্বর বোতামটা (তৃণমূল প্রার্থীর ইভিএম বোতাম) টিপেছ তো? ভুল হয়নি তো?” একগাল হেসে বৃদ্ধার জবাব, “তোরা তো বলে দিয়েছিলি। ভুল করব কেন? এখন মুড়ি দে। বাড়ি ফিরি’’, বলতে বলতে আঁচল পেতে দিলেন বৃদ্ধা। বলা রয়েছে দু’নম্বর টিপতে, কেউ অন্য বোতাম টিপলে বুঝবেন কী করে? উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের টিপ্পনি, ‘‘দাদা, বিশ্বাসে মিলায় মুড়ি। ভোটের পরে বাহিনী চলে গেলে তো আমাদের সঙ্গেই থাকতে হবে। মাসিমা সেটা ভালই জানেন।’’

কিন্তু বুথের সামনে তৃণমূলের ‘মুড়ি-শিবির’ দেখেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী? বাঁকুড়া বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার অসীমকুমার বালার জবাব, “সকাল থেকে এ সব শিবির নিয়ে বহু অভিযোগ পেয়েছি। অন্তত ১৫টি মুড়ি-শিবির তুলে দিয়েছি। এটারও ব্যবস্থা করছি।”

দুর্গাপুর পূর্বের গোপালপুরের বুথে ভোট দেওয়ার পরে তৃণমূলের শিবিরে গেলে মুড়ির প্যাকেটের সঙ্গে কাঁচালঙ্কা, ছোলা মিলেছে। পাণ্ডবেশ্বরের দান্য গ্রামের বুথের বাইরে এক শিবিরে শুধু মুড়ি নয়, গামছা বিলির অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূল দাবি করেছে, তারা নয়, ওই শিবিরের উদ্যোক্তা গ্রামবাসী। তবে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তুফান মণ্ডল সে দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘এটা পুরো তৃণমূলের ছক। এখন ধাপ্পা দিচ্ছে।’’ পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী জিতেন তিওয়ারির বক্তব্য, ‘‘বিভ্রান্তি ছড়াতে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।’’

ওন্দার রতনপুর বাজারের এক হোটেলে সোমবারের মেনুতে ভাতই ছিল না। সিপিএমের দাবি, তৃণমূল ওই হোটেলে এ দিন ভোটারদের মুড়ি খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেছে। শর্ত একটাই— ‘ভোট দাও, মুড়ি নাও’। এই আয়োজন নিয়ে রাখঢাকের বালাই নেই। তৃণমূলের স্থানীয়
নেতারা বলছেন, ‘‘একটা দিন তো করতেই হতো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy