Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

মমতার আব্দারে উল্টে শেষ লগ্নের ঢেউ জোটেই

আশ্বস্ত তো বটেই। নারায়ণগড়, বেলদা, সবংয়ের বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা প্রভূত ধন্যবাদও দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে! পশ্চিম মেদিনীপুরে পিঠোপিঠি দুই আসন নারায়ণগড় ও সবং এ বার তাঁর যে কোনও মূল্যে চাই, বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সবং স্কুল মাঠে সভা শেষে সূর্য-মানস। শনিবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

সবং স্কুল মাঠে সভা শেষে সূর্য-মানস। শনিবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
বেলদা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

আশ্বস্ত তো বটেই। নারায়ণগড়, বেলদা, সবংয়ের বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা প্রভূত ধন্যবাদও দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে!

পশ্চিম মেদিনীপুরে পিঠোপিঠি দুই আসন নারায়ণগড় ও সবং এ বার তাঁর যে কোনও মূল্যে চাই, বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় ছুটে এসেছেন মোট ৮ বার! তার মধ্যে সর্বশেষ আব্দার করেছেন শুক্রবার নারায়ণগড়ে। আর মুখ্যমন্ত্রীর সেই আকুল আহ্বানের ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢেউ উঠল দুই কেন্দ্রে জোটের মিছিলে। প্রচারের শেষ লগ্নে লাল এবং তেরঙা পতাকার একাকার ভিড়, মিছিলে-সমাবেশে বিপুল লোকের সামিল হওয়া দেখে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে স্বস্তির শ্বাস নিলেন জোট-শিবিরের দুই তারকা-প্রার্থী।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র হামেশাই কটাক্ষ করেন, মুখ্যমন্ত্রী যা বলবেন, ধরে নিতে হবে তার উল্টোটাই সত্যি! মুখ্যমন্ত্রী যদি বলেন ‘ছোট্ট ঘটনা’, বুঝতে হবে বড় কিছু ঘটেছে। তাঁর কেন্দ্র নারায়ণগড়ে এসে সূর্যবাবুকে হারিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আবার বলে ফেলেছিলেন, ‘‘উল্টে দেবেন না তো?’’ বেলদা থেকে সবং পর্যন্ত শনিবার দিনভর জোটের প্রচারে ভিড় দেখে সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দেবেন মানুষ। উল্টেই দেবেন!’’

শুরু হয়েছিল বেলদা থেকে। সিপিএম প্রার্থী সূর্যবাবুকে নিয়ে মিছিলে হাজির ছিলেন এআইসিসি-র সম্পাদক এবং এ রাজ্যে কংগ্রেসের সহ-পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদ খান। বেলদার মিছিলের বহরকে অবশ্য ছাপিয়ে গেল তার পরেই নারায়ণগড় থানা থেকে বিধানসভা কেন্দ্রের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত রোড-শো। শাকিলকে পাশে নিয়ে খোলা মিনিট্রাকে সূর্যবাবু আর যত দূর চোখ যায়, ঝান্ডা এবং ঢাক-ঢোল নিয়ে আগলখোলা জনতা! মিছিল শেষে শাকিল যে জন্য বললেন, ‘‘বাংলার মানুষ তৈরি আছেন। উদ্ধত মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা জবাব দেবেন।’’ সূর্যবাবু অবশ্য এ সবে বিশেষ আপ্লুত হওয়ার লোক নন। তিনি বরং কর্মী-সমর্থকদের হুঁশিয়ার করেছেন, ‘‘যে ভাবে শাসক দল ঝাঁপিয়েছে, ভোটের দিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে বুথ পাহারা দিতে হবে। বাসরঘরে কোনও ভাবে কালনাগিনীকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না!’’

বিকালে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার জন্য যৌথ সভা করতে সবংয়ে সূর্যবাবুকে অবশ্য ঢুকতেই দিতে চাইছিল না পুলিশ! শাকিল ও কংগ্রেস নেতা মনোজ পাণ্ডেকে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগড় থেকে সবং যাওয়ার পথে পুলিশি বার্তা এল, তেমাথানি মোড়ে নিহত তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানার দেহ নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। ওখান দিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস নেতারা গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। মদনমোহনচকে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার ধারে গাছতলায় বসতে হল সূর্যবাবুদের। চেয়ার এনে দিলেন স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা। অপেক্ষার সময়টুকু স্থানীয় সংগঠনের তত্ত্ব-তালাশ নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছিলেন রাজ্য সম্পাদক। এর পরে সবংয়ের ওসি সেখানে হাজির হয়ে জানালেন, কোনও ভাবেই নাকি যাওয়া যাবে না। সূর্যবাবু দু’বার অনুরোধ করলেন, প্রচারের সময় শেষ হয়ে আসছে। তাঁকে যেতেই হবে। শেষমেশ পুলিশের সম্মতির অপেক্ষা না করে রওনা দিলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, তেমাথানি মোড়ে পৌঁছে দেখা গেল সেখানে উত্তেজনার কিছুই নেই! তৃণমূলের ফাঁকা মঞ্চ পড়ে আছে শুধু। সিপিএমের অভিযোগ, সমাবেশে যাওয়া আটকাতেই এমন চাল চেলেছিল স্থানীয় পুলিশ।

সবংয়ে পৌঁছনোর পরে শুধুই আবেগ আর অভিনন্দন! স্কুল-মাঠের সমাবেশে দাঁড়িয়ে মানসবাবু বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা হয়েছে সবং আর নারায়ণগড় তাঁর চাই। যে ভাষায় কথা বলছেন, এখানকার মানুষ শুনেছেন। এর পরে ১১ তারিখ অগ্নিপরীক্ষা! আপনারা গণতন্ত্রকে বাঁচান।’’ জোটের নৈতিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার পাল্টা তৃণমূল নেত্রীর নীতিবোধ নিয়েই এ দিন আক্রমণ করেছেন সূর্যবাবু। আর শেষে সবংয়ের কংগ্রেস প্রার্থীর হাত ধরে জনতার কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ‘‘কমরেড মানস ভুঁইয়াকে, হ্যাঁ সচেতন ভাবেই কমরেড বলছি, রেকর্ড ভোটে জিতিয়ে মানুষের জোটকে শক্তিশালী করুন!’’ মাঠে তখন কান পাতা দায়। আর আকর্ণবিস্তৃত হাসি ছেয়ে গিয়েছে মানসবাবুর মুখে!

প্রাণ খুলে এ দিন হেসেছেন শাকিলও। কংগ্রেসের স্বল্প পরিচিত এক কেন্দ্রীয় নেতাকে মিছিলে-সভায় বরণ করে নিয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। নারায়ণগড়ের সিপিএম কার্যালয়ে শাকিলকে নিজের পাশে বসিয়ে ভাত, উচ্ছেভাজা, শাক, মাছ, দই খাইয়েছেন সূর্যবাবু। মেদিনীপুর এবং গোটা বাংলার রাজনৈতিক ভুগোল-ইতিহাস বুঝিয়েছেনও। শাকিলের কথায়, ‘‘আমি বিহারি মানুষ। বাংলার এত কিছু জানতামই না!’’ কংগ্রেস শিবিরেই গুঞ্জন, দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে জোটের পালে বাতাস দেওয়ার সুযোগটা আসলে ‘মিস’ করলেন অধীর চৌধুরী! শাকিল তো উপরি!

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy