দুপুরে সূর্যবলয় দেখার পরই বদলে গেল তাঁর মেজাজ।
সকাল থেকে চিন্তিত মুখে ফিরে এল হাসি। ভোট শেষ হওয়ার সময় পর্যন্ত দিব্যি থাকল সেটা। নিজের গত কয়েকটা ভোটের দিনের নিয়ম নিজেই ভেঙে এক বার নয়, দু’বার ঘর ছেড়ে বাইরে এলেন এ বারের রাজ্য বিধানসভা ভোটের সব থেকে হেভিওয়েট প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কালীঘাটের ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মমতার বাড়ি সকাল থেকেই ছিল শুনশান। নিরাপত্তা রক্ষী আর অফিস কর্মীরা বাদ দিয়ে কেউ কোথাও নেই। নির্মল মাঝির মতো কেউ কেউ মুখ দেখাতে এসে বসে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। মমতার এ বারের ভোট লড়াইয়ের সেনাপতি দুই ভাই, কার্তিক আর স্বপনের নেতৃত্বে সকলেই দিদিকে জেতাতে ভোরেই বুথে বুথে নেমে পড়েছেন ভোট যুদ্ধে। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পাড়ার বুথ অফিসে এক নিকটাত্মীয়কে দিয়ে নির্দেশ পাঠালেন তৃণমূল নেত্রী, বুথে ভোটার পাঠাও।
ভোট দিতে যাওয়া ছাড়া মমতা তাঁর দশ বাই দশ ওয়াররুম ছেড়ে প্রথম বাইরে বেরোলেন সাড়ে বারোটা নাগাদ। ভোটের কাজে নয়, সূর্যকে ঘিরে রাখা শনিবারের অবাক করা রামধনুর বলয় দেখতে। চোখে রোদ চশমা লাগিয়ে নিজের ট্যাবে ছবি তোলার পর পাশে দাঁড়ানো সাদা পোশাকের এক নিরাপত্তা রক্ষীকে স্বগোতোক্তির মতোই বলে ফেললেন, ‘‘সূর্যের তেজটা কত কমে গেছে দেখেছ? এ বার গরমটা মনে হয় কমবে।’’ তার পরে হেসে দ্রুত পায়ে আবার ঢুকে গেলেন নিজের ঘরে।
সকাল থেকেই মমতার কেন্দ্র ভবানীপুরের নানা প্রান্ত থেকে খবর এসেছে নিরন্তর। বাইরের নানা জায়গা থেকেও ফোন এসেছে অবিরাম। নিজেও ফোনে খোঁজ নিয়েছেন ভোটের। কোথাও ভোট কম পড়ছে। কোথাও অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনী বা পুলিশের অতিসক্রিয়তার। সবাইকে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে বলছেন। সোনালি গুহর মতো কেউ কেউ ধমকও খেয়েছেন। নিজের কেন্দ্র ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট খুব কম পড়ছে বলে সেখানকার নেতাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর মাঝে বাড়ির মেয়েরা চা, মুড়ি বা ফলের রস পাঠিয়েছেন দিদির ঘরে। আগের দিনই বাড়িতে ডেকে পোলিং এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘‘গোটা দেশ আমার কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। কোথাও যেন কোনও গণ্ডগোল না-হয়। শুধু আমাদের ভোটাররা ভোট দিলেই জিতে যাব। মাথা ঠান্ডা রেখে ভোটটা করতে হবে।’’
সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ শান্তিতে ভোট হয়েছে জানার পর অন্য দিনের মতোই বাড়ির সামনের সব আলো নিভিয়ে খুশি মনে শুরু করে দিলেন সান্ধ্য-হাঁটা। সঙ্গে পরিবারের এক জন। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট চলল সে হাঁটা। তার মধ্যেই ফোনে নির্দেশ, প্রেস কনফারেন্সে কী বলতে হবে। ‘‘গভর্নমেন্ট আমরা গড়ছি বলে দাও। ১৯ মে সবাই ধুলোর মতো উড়ে যাবে। মানুষ যে বাংলার বাইরে থেকে আসা লোকজনদের অত্যাচার সত্ত্বেও ভোট দিয়েছেন, সে জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাও!’’
মমতা যে এ রকম বলবেন সেটা বোঝা গিয়েছিল অবশ্য ভোট দিতে যাওয়ার সময়ই। বিকেল চারটের মিনিট পাঁচেক আগে বেরোলেন বাড়ি থেকে। খোঁজ নিলেন, মিডিয়ার ভিড় কেমন? বুথে কি ভিড় আছে? বাড়ির ২০ জন ভোটারের সকলেই কি ভোট দিয়েছেন?
মিত্র ইনস্টিটিউশনের বুথ মিনিট পাঁচেক। রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে বুথে যাওয়ার পথে পরিচিত সাংবাদিকদের দেখে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘কী হল, কী হল? এত হইচই কীসের?’’ বোঝা গেল না, কী বলতে চাইলেন। বেরোনোর সময় দু’আঙুলে ‘ভি’ দেখালেন অন্তত পাঁচ বার।
তা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘ওটা দেখাতে হয় বলে দেখাচ্ছেন। ভবানীপুরেই উনি হারবেন!’’ তা শুনে মমতার অতি ঘনিষ্ঠ এক নেতার মন্তব্য, ‘‘দিদি নিশ্চিত না হয়ে
কখনও ‘ভি’ দেখান না। আগের লোকসভার ভোটেও ভোট দিয়ে ভিকট্রি চিহ্ন দেখিয়েছিলেন। ফলটা মনে আছে তো!’’
বিরোধীরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন— দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে জিতলেও ভবানীপুরে কিন্তু বিজেপির চেয়ে পিছিয়েই ছিলেন দিদির দলের প্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy