একে জোট। তার উপরে নারদ! চাপ বেশ ভালই।
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র, এক সময়ের দাপুটে ছাত্র ও শ্রমিক নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় তবু তরমুজের মতোই রঙিন আর ঠান্ডা! মুখে তাঁর সব সময় হাসি। রসবোধও মন্দ নয়। তাঁর একডালিয়া এভারগ্রিনের মতোই চিরসবুজ তিনি! বাম জমানায় কংগ্রেসের ভিতরেই তাঁকে তরমুজ (বাইরে সবুজ, ভিতরে লাল) বলে নিন্দে করলেও বিরোধী থেকে সাংবাদিক— প্রায় সকলের সঙ্গেই তাঁর ভাল সম্পর্ক। এখনও। একটু ভয়ডরহীনও বলা চলে। ধরা ধরা গলার আওয়াজ নিয়েই নয়ের দশকে সুইমিং পুলে নেমে পড়েছিলেন মুনমুন সেনের সঙ্গে—চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস্ টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময়ে।
কংগ্রেস-তৃণমূল, দল বদলেছেন বেশ কয়েক বার। কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা কমেনি রাজ্য রাজনীতিতে। অন্তত নারদের আগে পর্যন্ত।
সুব্রতবাবু এখন নিজে স্বীকার করুন আর না-করুন, নারদ-কাণ্ডের পরে অনেকেই মনে করছেন, তাঁর মতো ঝানু রাজনীতিক ও কৃৎকৌশলে পারদর্শী নেতারও পচা শামুকে পা কাটল। তার উপরে আবার তৃণমূল নেত্রী বলে বসেছেন, প্রার্থী ঘোষণা করা না হয়ে গিয়ে থাকলে তিনি নারদ নিয়ে ভাবতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নারদ-কলঙ্কিতদের টিকিট না দেওয়ার ভাবনা বালিগঞ্জ কেন্দ্রের শহুরে, শিক্ষিত, অভিজাত ভোটারদের ‘ভাবনাকে’ উস্কে দেবে না তো, এই প্রশ্ন এখন অনেকেরই মনে। হয়তো সুব্রতবাবুর মনেও। মুখে অবশ্য বলছেন, ‘‘নারদ নিয়ে আমি কিচ্ছু বলব না এখন। যা বলার, ৩০ এপ্রিলের পরে বলব।’’
মুখের হাসি চাপের মুখেও ধরা আছে। তবে হাসিটা যেন একটু ঝিমিয়ে পড়া। জোটের অঙ্ক মুখে মানেন না তিনি। তা হলে কেন বলছেন, ‘‘রাজ্যে যদি বাম-কংগ্রেসের জোট জেতেও সেই সরকার দু’বছরের বেশি টিকবে না। তখন আমরাই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরব!’’ তা হলে কি মনে মনে তিনি এই জোট সরকারের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না?
সুব্রতবাবু মুখে বলছেন, বাঘনখ লুকিয়ে রেখে জোট করলে তাকে জোট বলে না! তাকে বলে রাজনৈতিক ধান্দাবাজি। জোট করতে গেলে বড় হৃদয় লাগে। সেই জোটকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সময় লাগে। লাগে একটা গ্রহণযোগ্য ‘মুখ।’ বাম-কংগ্রেসের এই জোটে সেই মুখ কে? তাঁর কথায়, ‘‘এই জোটের ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান আমরা লিখব!’’ আবার
পরের মুহূর্তেই বলছেন, ‘‘এই জোট অনেকটা সফল হবে উত্তরবঙ্গে।’’
বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের কৃষ্ণা দেবনাথ। সুব্রতবাবুর দাবি, এই কেন্দ্রে সিপিএমের ছেলেরা নাকি কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচারে ততটা স্বচ্ছন্দ নন বলে পাশের কসবা কেন্দ্রে জোটপ্রার্থী শতরূপ ঘোষের হয়ে কাজ করছেন। অর্থাৎ দেওয়ালে-প্রচারে তাঁর প্রতিপক্ষ অনেক পিছিয়ে। তাঁর কেন্দ্রের ২৫০-৩০০ ক্লাবের সঙ্গে তিনি যুক্ত বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। প্রচারে বেরিয়ে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। যদিও বিরোধী প্রচার সম্পর্কে সুব্রতবাবুর দাবি নস্যাৎ করে কৃষ্ণাদেবী বলছেন, ‘‘সিপিএমের ছেলেরা খুব বেশি করে আমার সঙ্গে রয়েছেন। তাঁরা আমার হয়ে জোরদার প্রচার করছেন। আসলে সুব্রতবাবু ভয় পেয়ে এ সব বলছেন!’’
বিরোধীরা তো বটেই, দলের মধ্যেও নিন্দুকেরা বলে থাকে, সুব্রতবাবুর মতো অভিজ্ঞ বিধায়ককে আজকাল চালনা করছেন কয়েক জন কাউন্সিলর। সেই সব কাউন্সিলরের কিছু ‘কাজকর্মে’ খুশি নন দলের একটা বড় অংশ। অভিযোগ, বালিগঞ্জ প্লেসের একটি নামী রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে ওই কাউন্সিলরদের কারও কারও হাত ছিল। তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে সুব্রতবাবুর যুক্তি, ‘‘অলিগলিতে ঘুরতে গেলে জল, আলো নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়। তাই কাউন্সিলরেরা সঙ্গে থাকলে সুবিধা হয় আমার।’’
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হিসেবে ভালই কাজ করেছেন সুব্রতবাবু, স্বীকার করে থাকে বিরোধীদের একাংশও। এক বার তাঁর দফতরের জন্য টাকা আদায় করতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের পাশের ঘর বুক করেছিলেন কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে। জয়রাম তখন কলকাতায়। দলনেত্রী জয়রামের সঙ্গে সুব্রতবাবুর সখ্য পছন্দ করতেন না, তাই ওই ব্যবস্থা! দুই পুরনো বন্ধুর মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়া ওই আড্ডা থেকেই নিজের দফতরের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ আদায় করেছিলেন সুব্রতবাবু। এই সুব্রতবাবুকেই প্রশাসনিক কাজে বিশ্বাস করেন মমতা। তবে রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বাস করেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে সুব্রতবাবু মৌন থাকছেন!
ভোটকে একটা যুদ্ধ বলেই মনে করেন তিনি। সেই যুদ্ধে কাউকে জমি ছাড়তে রাজি নন। কিন্তু নারদের পাল্লায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ভোট-যুদ্ধে প্রতিপক্ষের পরাক্রম বাড়তে পারে, তা-ও জানেন হাড়ে হাড়ে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy