Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ভোটার কার্ড কেড়েছে শাসক, ভোটেই জবাব নাছোড় নাড়ুর

কী রে, কাকে ভোট দিবি? বুথ থেকে পাঁচশো মিটার দূরে পথ আটকাল দুই তৃণমূল কর্মী। হলদিয়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শালুকখালির বাসিন্দা নাড়ু গায়েনের সাদা মনে কাদা নেই। পেশায় ভ্যান চালক নাড়ু তাই জবাব দিলেন, ‘‘সিপিএমকে দেব।’’

ভোট দিয়ে ফিরছেন নাড়ু গায়েন। হলদিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

ভোট দিয়ে ফিরছেন নাড়ু গায়েন। হলদিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৪:৩২
Share: Save:

কী রে, কাকে ভোট দিবি?

বুথ থেকে পাঁচশো মিটার দূরে পথ আটকাল দুই তৃণমূল কর্মী। হলদিয়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শালুকখালির বাসিন্দা নাড়ু গায়েনের সাদা মনে কাদা নেই। পেশায় ভ্যান চালক নাড়ু তাই জবাব দিলেন, ‘‘সিপিএমকে দেব।’’

অভিযোগ, এ কথা শুনেই হাত গুটিয়ে তেড়ে আসে দুই তৃণমূল কর্মী। শুরু হয় মারধর। তারপর শার্টের পকেট ছিঁড়ে কেড়ে নেওয়া হয় নাড়ুর সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র আর ভোটার স্লিপ।

পালাবদলের হলদিয়া ‘তৃণমূলের গড়’। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার সাহস সেখানে ক’জনের হয়! সেই সাহসটাই অবশ্য দেখালেন নাছোড় নাড়ু।

মারধরের পরে এক মুহূর্ত নষ্ট না করে তিনি রওনা দেন শালুকখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩০ নম্বর বুথে। সেখানেই ভোট ছিল নাড়ুর। বুথ পাহারায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান আর পুলিশ কর্মীদের গিয়ে সবটা বলেন তিনি। যারা নাড়ুর পথ আটকেছিল, তাদের খোঁজার চেষ্টাও করে পুলিশ। তবে নাগাল মেলেনি। ততক্ষণে বুথ থেকে খবর চলে গিয়েছে সেক্টর অফিসে। চলে এসেছেন এলাকার দায়িত্বে থাকা সেক্টর অফিসার সত্যরঞ্জন দাস। কিন্তু ভোটটা দিতে হলে তো একটা পরিচয়পত্র লাগবে!

নাড়ু তাই ফের বাড়ি রওনা দিলেন। খুঁজেপেতে বের করলেন আধার কার্ড। তারপর ফের বুথের পথে হাঁটা। ভোট দিয়ে বেরিয়ে নাড়ুর মুখে চওড়া হাসি। বললেন, ‘‘সিপিএমকে ভোট দেব শুনেই ওরা বলল, ‘ভোট দিতে যাবি না’। ভোটার কার্ডও কেড়ে নিল। কিন্তু আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার ভোট আমি দেবই।”

ভোটারের অদম্য ইচ্ছে দেখে খুশি সেক্টর অফিসার সত্যরঞ্জনবাবুও। তিনি নাড়ুকে পরামর্শ দেন, “এ বার তো ভোটটা দিয়ে দিলেন। কিন্তু ভোটার কার্ডটা ফিরে পাওয়ার জন্য কিন্তু আপনাকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে হবে।’’ নাড়ুও ঘাড় নাড়েন, ‘‘আমি থানাতেও যাব।’’

নিজের ভোট নিজে দেওয়ার মরিয়া জেদ এ বার নির্বাচন পর্বে বারবারই দেখা গিয়েছে। কল্যাণীতে মার খেয়েও বুথমুখো হয়েছেন দম্পতি, কচি মেয়েকে তৃণমূলের লোকজন মারধরের পরেও তাকে কোলে নিয়েই ভোট দিয়ে এসেছেন হালিশহরের দেবশ্রী ঘোষ। শেষ দফা ভোটে সেই তালিকায় জুড়ল হলদিয়ার নাড়ুর নামও।

হলদিয়া শহরের সুতাহাটা লাগোয়া টালির চালের বাড়িতে দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার বছর চল্লিশেকের নাড়ুর। কিছু জমিজমা আছে। আর ভ্যান চালিয়ে দিনে আয় হয় মেরেকেটে দেড়শো টাকা। সেই পুঁজিতেই দিন গুজরান। নাড়ুর ভয় ভাঙা জেদ এ দিন সাহস জুগিয়েছে তাঁর পরিজনদেরও। ভোট দিয়ে এসেছেন ওই ভ্যান চালকের স্ত্রী আর দুই ছেলে। ছোট ছেলে বুদ্ধদেব মণ্ডল বললেন, ‘‘বাবা সাহস করে ভোট দিয়ে এসেছিল বলে পরে আর ওরা আমাদের আটকায়নি।’’

শাসক দল অবশ্য মারধর করে ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ মানছে না। হলদিয়া শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি, পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডলের দাবি, “শালুকখালির ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের বিরুদ্ধে বানিয়ে এ সব বলা হচ্ছে।”

যা শুনে হলদিয়ার জোট প্রার্থী সিপিএমের তাপসী মণ্ডল বলছেন, ‘‘কে সত্যি বলছে, আর কে মিথ্যে তা সকলে জানে। তৃণমূল যত মানুষকে আটকাবে তত প্রতিরোধ বাড়বে। নাড়ুদের ঠেকানোর সাধ্য ওদের নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy