হাজরা মোড়ে দীপা দাশমুন্সির নির্বাচনী প্রচার সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র ও সোমেন মিত্র। মঙ্গলবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
নারায়ণগড়ে জিতলে ডালের বড়া খেতে চেয়েছিল ভবানীপুর। এ বার ভবানীপুর জিতলে ইতিহাস গড়ার হাতছানি দেখাল নারায়ণগ়়ড়!
বিরোধী দলনেতার কেন্দ্রে গিয়ে তাঁকে হারানোর কাতর আর্জি জানিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ষষ্ঠ পর্বের ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা আহ্বান জানালেন, ‘‘এক হাতে সংবিধান নিয়ে অন্য হাতে বিধানসভা ভাঙচুরের নির্দেশ দিয়েছেন, এমন এক জনকে আর দয়া করে বিধানসভায় পাঠানোর ভুলটা করবেন না! তা হলে সেটা ভবানীপুরের কলঙ্ক হবে!’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দীপা দাশমুন্সিকে প্রার্থী করে ভবানীপুরের লড়াই এ বার জমিয়ে দিয়েছে বিরোধী জোট। শাসক শিবিরের সর্বময় নেত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, তার জন্য জোট শিবিরের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। কংগ্রেস প্রার্থী দীপার এজেন্ট করা হয়েছে সিপিএম নেতা রণেন গঙ্গোপাধ্যায়কে, সঙ্গে বিশেষ দায়িত্বে পল্টু রায়চৌধুরী। সারদা থেকে নারদ, উড়ালপুল বিপর্যয় থেকে জাল ছবি-কাণ্ড— নানা ঘটনায় কোণঠাসা তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে জোটের আবহ আরও পোক্ত করতে মঙ্গলবার রাতে মমতার খাস তালুক হাজরা মোড়ে একত্রে সভা করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ছিলেন দুই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যও। যেখানে অধীর বলেছেন, ‘‘মেদিনীপুরে গিয়ে উনি (মমতা) ডালের বড়া খেতে খেয়েছিলেন। কথা দিচ্ছি, ১৯ মে-র পরে আপনার বাড়িতে বড় বড় তালের বড়া পাঠিয়ে দেব!’’
জোটের শর্ত মেনে কংগ্রেসের প্রার্থীদের হয়ে লাগাতার প্রচার করলেও খাস কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে এই প্রথম প্রচারে গেলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। রাত হয়ে যাওয়ার পরেও উৎসুক ভিড়ের উদ্দেশে তাঁর সরাসরি বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে স্বৈরাচারের উৎস মুখ্যমন্ত্রী। স্বৈরাচারের কাঠামোকে ভাঙতে মুখ্যমন্ত্রীকে পরাস্ত করতে হবে। তা হলেই ইতিহাস হবে!’’ সিঙ্গুর থেকে বাধা পেয়ে ফেরার পরে ২০০৬ সালে মমতার উপস্থিতিতে বিধানসভার লবিতে ভাঙচুরের কথা মনে করিয়ে দিয়েই তৃণমূল নেত্রীকে আর বিধানসভায় না পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন সূর্যবাবু।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তো আছেই। কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের অন্য নেতাদের জন্য চারটে হেলিকপ্টারের প্রাত্যহিক খরচ জোগাড় হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যবাবু। দীপা যে ভাবে ভবানীপুরের অলি-গলির ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষের কাছে ভোট-প্রার্থনা করছেন, মানুষের অভিযোগ শুনছেন, তাতে তৃণমূল নেত্রীর উদ্বেগ কিঞ্চিৎ বাড়ছে বলে শাসক দলেরই একটি সূত্রের ইঙ্গিত। তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াতেই সূর্যবাবু এ দিন সারদা থেকে নারদ-কাণ্ডের নেপথ্যে মুখ্যমন্ত্রীকেই মূল মাথা বলে চিহ্নিত করেছেন। দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে মমতা অপসারণের ডাক দিয়ে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘নতুন সরকার হলে কান জোর সে ধরো! এমন হ্যাঁচকা টান মারতে হবে, যাতে মাথা বেরিয়ে আসে। মাথা এখনও বাইরে আছে যে!’’
তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট-লুঠের যে অভিযোগ বারবার বিরোধীরা তুলেছেন, সে প্রসঙ্গেই হাজরার সভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপবাবুর প্রতিশ্রুতি, ‘‘ভবানীপুরের মানুষ পরিবর্তন ঘটাতে পারলে কথা দিচ্ছি, ক্ষমতায় এসে তদন্ত করে প্রমাণ করব যে পুরভোটে তৃণমূল কী পরিমাণ ভোট চুরি করেছিল।’’
কয়েক দিন আগে ভবানীপুরে এপিডিআর-এর সভায় অনুমতি দিয়েও তা বাতিল করেছিল পুলিশ। ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানো এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি নিয়ে ভবানীপুরের ভোটারদের সচেতন করতে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস থেকে হাজরা-ল্যান্সডাউন মোড় পর্যন্ত এ দিন মিছিল করেন এপিডিআর-এর সদস্য এবং কৌশিক সেন, সমীর আইচ, সনাতন দিন্দা, বোলান গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy