মুড়ি-ভোজ। ইলামবাজারের গ্রামে মুড়ি-ঘুগনি দিচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। রবিবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
মুড়ির রাজনীতি ক্রমে যেন সংক্রমণের চেহারা নিচ্ছে।
রাজ্যে বিধানসভার প্রথম দিনের ভোটে জঙ্গলমহলে দেখা গিয়েছিল, শাসক দলের শিবিরে মুড়ি দিয়ে চেনা হচ্ছে ভোটারদের। দ্বিতীয় দিন বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলেও ছবিটা বদলায়নি। এ বার অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমেও একই দৃশ্য। যেন নীরব স্লোগান চলছে—‘ভোট দাও, মুড়ি খাও’। নলহাটি থেকে শুরু করে ময়ূরেশ্বর, দুবরাজপুর থেকে শুরু করে বোলপুর— রবিবার বুথের আশপাশে তৃণমূলের শিবির থেকে ফের বিলি হল মুড়ি। সঙ্গে ঘুগনি, তেলেভাজা, এমনকী, মিষ্টিও।
নলহাটি কেন্দ্রের করণজি গ্রামের রাস্তায় সকালে সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে প্লাস্টিকে মোড়া মুড়ি ও ঘুগনি নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন যুবক। বুথের কাছে তৃণমূলের শিবিরের পাশের একটি খামারবাড়িতে তখন শ’খানেক লোক। অনেকে শালপাতায় মুড়ি-ঘুগনি খাচ্ছিলেন। কেউ বাড়িতে খাবেন বলে প্লাস্টিকে ভরছিলেন।
ব্যাপার কী? এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা মর্জিনা বিবির
স্বামী ইমানুর রহমান বলেন, ‘‘ভোট মানেই পরব। তাই এ দিন সবার মিলেমিশে খাওয়ার আয়োজন!’’ তবে দলের কর্মীদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, আগে থেকেই তাঁরা চিহ্নিত করে ফেলেছেন, কারা তাঁদের ভোট দেবেন। সেই হিসেব মোতাবেক বিলি হচ্ছে মুড়ি। কিন্তু বুথে জোড়াফুলের বোতাম না টিপেও যদি কেউ আসেন মুড়ি-ঘুগনি নিতে? এ বার জবাব, ‘‘দাদা, এলাকায় তো বছরভর আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। রিস্ক নেবে না কেউ।’’
ময়ূরেশ্বর কেন্দ্রের হাফিনা গ্রামে দেখা গেল, অনেকে স্টিলের থালা-বাটি হাতে আলপথে এক কিলোমিটার হেঁটে বুথে যাচ্ছেন। কেন? জবাব আসে, ‘‘ভোট দিলেই যে জলখাবারের ব্যবস্থা করেছে জোড়াফুল। জানেন না?’’
বোলপুর শহরে পূর্ণিদেবী চৌধুরী মহিলা কলেজের বুথের পাশে, ইলামবাজার বনভিলা গ্রামেও
শাসক দলের তরফ থেকে অঢেল মুড়ি-ঘুঘনি বিলি হয়েছে। কোথাও ঘুগনি বাড়ন্ত হওয়ায় জুটেছে দু’চামচ করে চানাচুর।
মুড়ি, ঘুগনির সঙ্গে গরমাগরম তেলেভাজা বিলি করছিলেন দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের সেকেন্দ্রাবাদ গ্রামের তৃণমূলকর্মীরা। কিন্তু তাঁদের কপাল মন্দ। বুথের কাছে খাবার নিতে আসা মানুষের ভিড় দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা উনুন ভেঙে দেন বলে অভিযোগ।
মুড়ি-ঘুগনির প্রতিদানে ইভিএমে জোড়াফুলে ছাপ পড়ল তো? তৃণমূল কর্মীদের আত্মবিশ্বাসী সওয়াল, ‘‘পড়বে না মানে! ওঁরা তো সব আমাদেরই ভোটার।’’ বিরোধীরা অবশ্য সে সব শুনে মুচকি হাসছেন। রহস্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন ময়ূরেশ্বর থানার নিশতে গ্রামের এক প্রৌঢ়। তিনি বললেন, ‘‘মুড়ি নিয়েছি। কিন্তু ভোট দিয়েছি নিজের মতো।’’
নলহাটি কেন্দ্রের প্রার্থী তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের দিদির আমলে রাজ্যে মুড়িভাজা আর তেলেভাজা শিল্পই হয়েছে। ভোটারদের মন পেতে সেই শিল্পই ওঁদের ভরসা। জোটের বাজারে তৃণমূলের অস্তিত্ব এখন নড়বড়ে, তাই যে ভাবে ভোটারদের নিজেদের দিকে টানা যায়, সে চেষ্টা করছে।’’
ঘটনাচক্রে, নলহাটির করণজিতে এ দিন দীপকবাবুর দলের শিবিরের কর্মীদেরও ভোটারদের মুড়ি-ঘুগনি বিলি করতে দেখা গিয়েছে। ওই শিবিরের ফব কর্মীদের দাবি, ‘‘অনেকেই তো জলখাবার না খেয়ে ভোট দিতে আসেন। তাঁদের জন্যই চাট্টি খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy