প্রতীকী ছবি।
পাঁচ বছরে তিনি দু’বার রং বদল করেছেন। কিন্তু এ বারের রং যেন ঈষৎ ঘোলাটে।
বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোটের জোরে গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় বিশ হাজার ভোটে শান্তিপুরের তিন দশকের নেতা, তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে-কে ধরাশায়ী করেছিলেন তিনি। তার পর সেই তৃণমূলের দিকেই পা বাড়ান। এখন আর একটা ভোট যখন শিয়রে, ফের জার্সি পাল্টে বিজেপির ঘরে হাঁটা দিয়েছেন বিদায়ী বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য।
এখন শান্তিপুরের নিপাট বাতাসে যে কয়েকটি মোক্ষম প্রশ্ন ঘুরছে তার দু’একটি এ রকম:
প্রশ্ন ১ — অরিন্দম কি শান্তিপুরে বিজেপির টিকিট পাবেন?
প্রশ্ন ২ — বিজেপির টিকিট পেলে কি তিনি জিতবেন?
অরিন্দম বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে শান্তিপুরে একাধিক জায়গায় তৃণমূলের তরফে মিষ্টি বিলি করা হয়েছিল। এই সব নেতাকর্মীদের দাবি, তাঁরা বস্তুত ‘রাহুগ্রাস’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত পাঁচ বছরে অরিন্দম নিজের যে মূর্তি দেখিয়েছেন, তাতে যে দলের হয়ে তিনি দাঁড়াবেন, তাদের পরাজয় নিশ্চিত। দুষ্কৃতীদের তোল্লাই দেওয়া থেকে শুরু করে সরাসরি খুন বা সন্ত্রাসের মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে গিয়েছে। তার উপরে, তৃণমূল প্রার্থী হলে অজয়-গোষ্ঠীর ‘অসহযোগিতা’র সমূহ সম্ভাবনা তো ছিলই। গত পাঁচ বছর এই দুই গোষ্ঠীর অবিরত দ্বন্দ্বের সাক্ষীই তো থেকেছে শান্তিপুর!
অরিন্দম বিজেপিতে চলে যাওয়ায় তৃণমূলের একাংশে যেমন স্বস্তির দখিনা বাতাস বয়ে গিয়েছে, অন্য পারে ক্ষোভে চিড়বিড়িয়ে উঠেছে বিজেপির একাংশ। পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস ও বিজেপি কর্মী খুনের কথা তুলে তাঁর যোগদানের বিরোধিতা করেন স্থানীয় বহু নেতাকর্মী। পরে ‘পরিবর্তন যাত্রা’র সময়ে দলের জেলা সভাপতি এবং সাংসদের ছবি ছাড়া নিজের নামে ফ্লেক্স ছাপিয়েও একাংশের বিরাগভাজন হন অরিন্দম। শান্তিপুর থেকে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ রওনা হওয়ার সময়েও তাঁকে দেখা যায়নি। সেই সময়ে তিনি নাকি ছিলেন অন্য জেলায় ‘দলীয় কর্মসূচি’তে। সম্প্রতি তিনি শান্তিপুরে যে কয়েকটি সভা করেছেন, সেগুলিতেও দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি সে ভাবে। সেই কর্মসূচি নিয়েও দলের অন্দরেই বিতর্ক হয়।
ফলে অরিন্দমের শান্তিপুরে প্রার্থী হওয়ার পথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয়, তা বলাই বাহুল্য। বরং দলীয় চর্চায় অন্য কয়েকটি নাম সম্ভাব্য দাবিদার হিসেবে উঠে আসছে। দলের একাধিক পুরনো নেতা রয়েছেন সেই তালিকায়। যেমন দলের বিধানসভার আহ্বায়ক পদ ছেড়ে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন শান্তিপুর শহরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক স্বপন দাস। প্রার্থিপদের জল্পনায় রয়েছে দলের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত কর বা জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা নিরঞ্জন বিশ্বাসের নামও। সুব্রত অবশ্য বলছেন, “এ সব বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা নেই। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তার সঙ্গেই আছি।” একই কথা বলছেন নিরঞ্জনও।
প্রশ্ন ৩ — তৃণমূলের প্রার্থী কে?
অরিন্দম বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তো বটেই, আগে থেকেও এ বারের প্রার্থিপদের জোরালো দাবিদার ছিলেন শান্তিপুরের আড়াই দশকের বিধায়রক অজয় দে। কিন্তু চৈত্রের হাওয়া সম্ভবত তাঁর অনুকূল নয়।
প্রথম কারণ, তৃণমূল এ বার যে ভাবে প্রবীণদের একাংশকে ‘বিশ্রাম’ দিয়ে নবীন প্রার্থীর দিকে ঝুঁকছে বলে খবর, তাতে অজয় দে-র মতো প্রবীণ প্রার্থীর কপাল পুড়তে পারে।
দ্বিতীয় কারণ, তাঁর প্রতি বর্তমান জেলা নেতৃত্বের মনোভাব। বিধায়কের অরিন্দমের সঙ্গে তাঁর বিবাদের ক্ষেত্রে কার্যত অরিন্দমেরই পক্ষ নিয়েছেন নেতৃত্ব, অজয়ের ডানা ছেঁটে ক্রমশ ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে অরিন্দমের। তা সত্ত্বেও অরিন্দম যখন দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, গয়েশপুরে কর্মিসভায় অজয়ের নাম না-করেও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র মন্তব্য করেছেন, “এক জন গিয়েছে, অন্য জন গেলে আমি বাঁচি।” প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জেলা সভানেত্রীর যদি কোনও ভূমিকা থাকে, তা অজয়ের অনুকূলে না যাওয়াই অতএব প্রত্যাশিত। দলনেত্রী নিজে তাঁকে চাইলে অবশ্য অন্য কথা।
অজয় দে যদি প্রার্থী হতে না হন, বিকল্প কে? মহুয়া বলেছিলেন, তৃতীয় কাউকে তুলে আনবেন। কে সেই ‘তৃতীয়’ তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর চর্চা হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি কৌশিক প্রামাণিক, শহর তৃণমূলের সহ-সভাপতি সুব্রত ঘোষের নাম ঘোরাফেরা করছে নানা মহলে। যদিও এঁরা সকলেই একবাক্যে বলছেন সেই রুটিন বাক্য, অজয় দে নিজেও যা বলছেন — “দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মেনেই কাজ করব।”
আর অরিন্দম? শাসক দলের একটি অংশের মতে, যিনি বিজেপির হয়ে দাঁড়ালে নাকি তৃণমূলেরই লাভ?
অরিন্দম বলছেন, “তৃণমূলকে হারানোর অভ্যেস আছে। পাঁচ বছর আগেও হারিয়েছি।”
তফসিলি সভা
রানাঘাট: তৃণমূলের তফসিলি সংগঠনের কর্মিসভা হল বুধবার। রানাঘাটে আয়োজিত এই সভায় সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তাপস মণ্ডল-সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy