সাগরে বহু জায়গায় সমুদ্র বাঁধের অবস্থা এখনও এমনই। নিজস্ব চিত্র।
মুড়িগঙ্গা নদীর উপরে একটা সেতু চেয়েছিলেন মানুষ।
তারপরে কত জোয়ার-ভাটা খেলল নদীতে। চর পড়ে আটকালো কত বার্জ। পাঁচ কিলোমিটার নদীপথ পেরোতে কখনও সখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় মানুষকে। আটকে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। কর্মস্থলে যেতে বিভ্রাটে পড়েন কত মানুষ। হাটে-বাজারে ফসল বেচতে গিয়ে নাজেহাল হন মানুষ।
শোনা যায়, সাগর থেকে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে যত ফোন গিয়েছিল, তার সিংহভাগই নাকি ছিল সেতুর দাবি। ভোট এলে বহু প্রতিশ্রুতি মেলে সেতু নিয়ে। মেলে না শুধু জলজ্যান্ত সেতুটুকু।
তবে শুধু সেতু নয়। সাগরের মানুষের আরও বহু দাবি-দাওয়াই ভেসে গিয়েছে মুড়িগঙ্গার স্রোতের টানে। সমুদ্র ও নদীবাঁধের বিস্তীর্ণ অংশ পাকা হল না এখনও। ফলে ভাঙন অব্যাহত। বহু চাষজমি গিয়েছে জলের তলায়।
অভিযোগ, দু’বারের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার চোখে চোখ রেখে সে সব কথা অবশ্য বলার সাহস পান না মানুষ। তাঁর প্রতাপে তটস্থ অনেকেই। বিরোধীদের অভিযোগ, সামান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে বিধায়কের দরবারে গেলেও আগে রাজনীতির রং দেখা হয়। অন্য দলের লোককে দূর দূর খেদিয়ে দেওয়া হয়। দলের একাংশও বিধায়কের মেজাজকে ভয় পান। বছরখানেক আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু যুবক বিধায়কের কুশপুতুলও দাহ করেছিলেন।
বিরোধীদের আরও অভিযোগ, কাটমানির রাজত্ব চলছে সাগরে। ঠিকাদারের থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন না নিয়ে বিধায়ক কোনও কাজ হতে দেন না। চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বঙ্কিম হাজরা, এমন অভিযোগও আছে। নিকাশি খাল সংস্কার না হওয়ায় চাষবাসের সমস্যা আছে বলে অভিযোগ। রাস্তাঘাট কিছু তৈরি হলেও আজও পর্যন্ত নিকাশি খালের এক ঝুড়িও মাটিও কাটা হয়নি।
এলাকার সিপিএম নেতা মিলন পড়ুয়া বলেন, ‘‘সারা সাগর দ্বীপে বিভিন্ন নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে রয়েছে। ঘোড়ামারা দ্বীপ ভাঙতে ভাঙতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মুখে। ফি বছর বহু এলাকা নোনা জলে প্লাবিত হয়ে পানের বরজের ক্ষতি হচ্ছে। সে দিকে নজর নেই বিধায়কের। মুড়িগঙ্গায় চর কাটার নামে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে।’’ ঘোড়ামারায় আছড়ে পড়েছিল আমপান। বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয় এলাকায়। তারপরে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ ওঠে। মিলন বলেন, ‘‘শাসক দলের নেতা-কর্মী, আত্মীয়-পরিজনেরা সমস্ত টাকা লুট করে নিয়েছেন।’’
সাগরের বিজেপি নেতা অশোক নায়ক, বিকাশ কামিলাদের অভিযোগ এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। সেতু তো হলই না। বেকারদের কোনও কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি বিধায়ক। বহু মানুষ ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন। আমপান বা বুলবুলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা টাকা পাননি বলে অভিযোগ তাঁদের। গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা আছে। অভিযোগ, লকডাউনে এলাকায় ফিরে কাজ পাননি বহু পরিযায়ী শ্রমিক।
বিরোধীদের দিস্তে দিস্তে অভিযোগ পাত্তা দিতে নারাজ বঙ্কিম। বরং ফিরিস্তি দিলেন নিজের কাজের। তাঁর কথায়, ‘‘গত ১০ বছরে সাগর ও নামখানায় প্রায় ৫৫টি স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়নের করেছি। সাগরে পুণ্যার্থীদের জন্য কটেজ, দোকানদারদের জন্য স্টল করা হয়েছে। কোম্পানিরচর, সুমতিনগর, শিবপুর, ধবলাট, নগেন্দ্রগঞ্জ ও ধসপাড়া-সহ একাধিক এলাকায় পানীয় জলের প্রকল্প করা হয়েছে। এই বিধানসভা এলাকায় ৪৩ কিলোমিটার কংক্রিটের ও ৮৫ কিলোমিটার ডবল সোলিং ইটের রাস্তা হয়েছে। বটতলা নদীর উপরে সেতু নির্মাণ হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে প্রায় ১১১ কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ হয়েছে।’’
নদী ও সমুদ্র বাঁধ মেরামতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘নামখানায় মৌসুনি দ্বীপে পাকা বাঁধ তৈরির জন্য ২০ কোটি ও বঙ্কিমনগর সুমতিনগরে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয়েছে। গত দু’বছরে ১২টি খালের সংস্কার করা হয়েছে।’’ মুড়িগঙ্গার উপরে সেতুর প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী পৈলানের সভায় ওই সেতু তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। টানা ড্রেজিং চলায় মুড়িগঙ্গায় আপাতত ভেসেল ভালই চলছে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। আমপানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে স্বজনপোষণের বিষয়ে বিধায়ক বলেন, ‘‘এটা বিজেপি মিথ্যা প্রচার করছে।’’ কিন্তু বিরোধীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠছে? বঙ্কিমের কথায়, ‘‘ওরা তো এমন বলবেই। আমার কাছে কেউ এলে দল দেখি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy