মোবাইল হাতে ব্যস্ত বাহিনীর জওয়ান। ছবি: শৈলেন সরকার।
কোথাও বুথ পাহারায় দাঁড়িয়ে রাজ্য পুলিশ। কোথাও আবার কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও পাহারা অপেক্ষা মোবাইলেই বেশি খুটখাট করতে দেখা গেল জওয়ানদের। বিরোধীদের দাবি, এলাকায় এলাকায় টহল দিতেও দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সোমবার আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ভোটে দিনভর কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে এমনই বিভিন্ন টুকরো টুকরো ছবি দেখা গেল। বাঁকুড়ার তালড্যাংরা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির পর এ বার শিল্পাঞ্চলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।
বুথের বাইরে তখন ভোটের লাইন। ভোটারদের দাবি, কুলটি বিধানসভা কেন্দ্রের সাঁকতোড়িয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ২১৬ ও ২১৭ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নজরে পড়েনি। বাহিনী নেই কেন? ২১৬ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তাপস ঘোষের জবাব, ‘‘আছে তো। বোধ হয় এ দিক সেদিকে গিয়েছে।’’ বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সালানপুর ঘিয়াডোবা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের ৯৫, ৯৬ ও ৯৭ নম্বর বুথের বাইরে আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের কর্মীদের। এই বিধানসভারই যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশনের বিভিন্ন বুথে গিয়ে দেখা যায় দরমের দুপুরে বসে ঝিমোচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। বিরোধীদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও দুর্গাপুর শহর লাগোয়া কালীগঞ্জ, টেটিখোলা, শঙ্করপুর প্রভৃতি এলাকায় সকালবেলায় এজেন্ট বসাতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হয়। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও। সিপিএমের অভিযোগ, সালানপুরের জেমারি গ্রামের ৬০, ৬১, ৬২, ৬৪ নম্বর বুথের ভোটারদের যাতায়াতের রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করছিল একদল যুবক। কিন্তু তখন বিশ্রাম নিতে দেখা গিয়েছ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের।
বেশ কয়েকটি এলাকায় আবার বুথরক্ষার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে জিনসপত্র কিনতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ।
বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার দরবার করা সত্ত্বেও ভোটের চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে টহল দিতে দেখা যায়নি।
বেনাচিতির টিএন ইনস্টিটিউশন। বুথের সামনে দেখা নেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর। বরং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দিনভর ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল ভোটারদের লাইন ঠিক করছেন। বুথ পাহারার দায়িত্বে ছিলেন রাজ্য পুলিশের কর্মীরা। অথচ মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক শঙ্খ সাঁতরা জানিয়েছিলেন, কমিশনের নিয়ম অনুসারে বুথের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ভোটারদের লাইন দেখাশোনার জন্য রাজ্য পুলিশের কর্মীরা থাকবেন।
বিরোধীদের বক্তব্য, বেশ কয়েকটি জায়গায় গোলমালের খবর মেলার পরে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। যেমন, সকাল সাড়ে ৯ টা নাগাদ ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুল, জিএন টাইপ বেসিক স্কুল, ৪০ নম্বরের ওয়ার্ডের ডিপিএল বয়েজ হাইস্কুল ও ডিপিএল গার্লস হাইস্কুলের বুথে বেশ কয়েকজন যুবককে দেখা যায় ভোটারদের লাইন দেখাশোনা করছেন। এরপরেই বিষয়টি নিয়ে সরব হতে দেখা যায় বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা উমাপদ দাস জানান, বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানোর কিছুক্ষণ পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। দুপুর আড়াইটা। বিরোধীরা অভিযোগ করে, তামলা এলাকায় একটি বুথে তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী গিয়ে ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী উপস্থিত থেকেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এরপরই ভোটারেরা প্রতিবাদ করেন। এক মোটরবাইক আরোহীকে পাকড়াও করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। তবে এ দিন কিছুটা আলাদ ছবি দেখা যায় দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতির সারদাপল্লি প্রাথমিক স্কুলের তিনটি বুথে। চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে বুথের ভিতরে দেখা যায়। ভোটকেন্দ্রের গেটে তিন জন রাজ্য পুলিশের কর্মী মোতায়েন চিলেন। নিয়ম মেনেই প্রত্যেকের পরিচয়পত্র দেখে তবেই দেওয়া হয় বুথে ঢোকার অনুমতি।
শাসক, বিরোধী উভয় পক্ষই কেন্দ্রী।য় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘প্রয়োজনীয় তৎপরতা দেখাতে পারেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেও সন্তোষজনক ফল মেলেনি।’’ জামুড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী ভি শিবদাসনের আবার দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী সিপিএম, বিজেপির কথায় চলেছে।’’ যদিও জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সব নির্দেশিকা এসেছে, তা পালন করা হয়েছে।’’
(সহ প্রতিবেদন: সুব্রত সীট)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy