Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
প্রহার

তৃণমূলের ‘হুমকি’ রুখে বুথমুখো মমতা

আরও এক রুখে দাঁড়ানোর গল্প। শনিবার, ষষ্ঠ দফা ভোটের আগের রাতে তাঁর বাড়ি এসে জনা চারেক যুবক শাসিয়ে বলেছিল, ‘শোনো, ভাল চাও তো শনিবার বুথের দিক মাড়িও না। চেনোই তো দলের ছেলেদের।

ভোট দেওয়ার পরে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মমতাদেবী। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে।

ভোট দেওয়ার পরে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মমতাদেবী। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

আরও এক রুখে দাঁড়ানোর গল্প।

শনিবার, ষষ্ঠ দফা ভোটের আগের রাতে তাঁর বাড়ি এসে জনা চারেক যুবক শাসিয়ে বলেছিল, ‘শোনো, ভাল চাও তো শনিবার বুথের দিক মাড়িও না। চেনোই তো দলের ছেলেদের। তোমার মেয়েকে ধর্ষণ করে দিতে পারে।’ এমনটাই অভিযোগ বেহালার ফকিরডাঙার মমতা পাত্রের। সেখানেই শেষ নয়। মমতাদেবীর আরও অভিযোগ, ওই চার জন তাঁর ছেলেকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলে, কথা না শুনলে বিপদ বাড়বে। বাইরে বেরোলেই ছেলে খুন হয়ে যাবে।

তবু শাসানি আটকাতে পারেনি মমতা পাত্র ও তাঁর পরিবারকে। সকাল হতেই জোট প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে বুথে পৌঁছে যান মমতাদেবীর স্বামী অসীম পাত্র। আর সকাল ৯টার আগেই স্থানীয় আলিপুর বয়েজ ও গার্লস স্কুলে গিয়ে ভোট দিয়ে আসে পুরো পরিবার। ততক্ষণে বেহালার আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে ওই পরিবারের উপরে ‘তৃণমূলের’ একদল যুবকের শাসানির কথা। সাতসকালেই বেহালা পূর্বের ওই বাড়িতে হাজির হন জোট-সমর্থিত ‘আক্রান্ত আমরা’র প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘ভয়ঙ্কর ঘটনা। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে।’’ অন্য দিকে, বেহালা পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ঘটনায় রং চড়ানো হচ্ছে। জোকায় সিপিএমের সংগঠন তলানিতে ঠেকায় ওরা উল্টোপাল্টা বলতে শুরু করেছে।’’

ঠিক কী হয়েছিল? মমতাদেবী জানান, অসীমবাবু যে জোট প্রার্থীর এজেন্ট হচ্ছেন, তা জানতেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তাঁর অভিযোগ, অসীমবাবুকে রোখাই ছিল ওঁদের উদ্দেশ্য। মমতাদেবীর কথায়, ‘‘শুক্রবার তখন রাত প্রায় ১২টা। আমরা খাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। হঠাৎই জনা চারেক যুবক বাড়ির সামনে আসে। সকলে নেশা করে এসেছিল।’’ ওদের দু’জনকে চেনেন মমতাদেবীরা। বললেন, ‘‘দু’জন আমাকে বলল, ‘স্বামীকে ডেকে দাও।’ বললাম, উনি বাড়ি নেই। এর পরেই ওরা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করতে আমি গেট আটকে দাঁড়িয়ে পড়ি। ওরাও জোর করে ঢোকার চেষ্টা করে।’’ মমতাদেবীর মেয়ের অভিযোগ, ‘‘মায়ের উপরে চড়াও হয় ওরা। তা আটকাতে আমি ও দাদা এগিয়ে যাই। ওরা আমাদের মারে। অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকে। তবুও গেট আটকে থাকি আমি ও মা।’’ মমতাদেবী জানান, সে সময়ে বাইরে অপেক্ষারত আরও দু’জন তাদের সঙ্গীদের বলে, ‘পুলিশ আসতে পারে, চলে আয়।’ তা শুনেই ওরা পালায়।

কেন এই আক্রমণ?

তারও ব্যাখ্যা মিলেছে এলাকায়। বেহালার জেমস লং সরণি থেকে সরু কংক্রিটের পথ ধরে কিছুটা গেলেই ফকিরডাঙা। এলাকায় ফাঁকাডাঙা বলে পরিচিত। পাশের পাড়ার বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, ‘‘অসীমবাবুদের পরিবার বরাবর সিপিএম। অসীমবাবুর বাবাও বাম আমলে ২০ বছর পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। এলাকায় তাঁর প্রভাব রয়েছে। বরাবরই দলের এজেন্ট হন অসীমবাবু। গত পুরভোট থেকে তাঁকে জব্দ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে তৃণমূল। সে বারও ভয় দেখানো হয়েছিল। কাজ হয়নি। এ বার অসীমবাবুর স্ত্রী-ছেলেকে শাসিয়ে কাজ হাসিল করতে চেয়েছিল তৃণমূলের ওই কর্মীরা।’’

কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে যে এতটা প্রতিবাদ আসতে পারে, সেটা আঁচ করেনি তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে ওই পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়নি। তবে অম্বিকেশবাবুর পক্ষ থেকে কমিশনে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। তার কপি পাঠানো হয়েছে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছেও।

এ দিন বিকেলে ফকিরডাঙায় গিয়ে দেখা গেল, আতঙ্কে ভুগছে গোটা পরিবার। মমতাদেবীর ভয় তাঁর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। বললেন, ‘‘ওঁরা তো বাইরে পড়তে যায়। সেটাই চিন্তার।’’ তবে কোনও কারণেই তিনি ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে রাজি নন। বললেন, ‘‘যত দিন দেহে রক্ত থাকবে, নিজের ভোট নিজেই দেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy