কুমড়ো দিয়ে চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি, ডাল, সাদা ভাত আর রুই মাছ। ভোট দিলেই এ বার মুড়ির প্যাকেট ধরানোর ব্যবস্থা রেখেছে অনেক জেলাই। সোমবার কামদুনি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দুপুরে পুরোদস্তুর ভোজেরই আয়োজন করলেন। ভোট দিয়ে এসে পাত পেড়ে শাসকের ভোজ খেয়ে গেল গোটা গ্রাম। ছিলেন না শুধু মৌসুমী-টুম্পা কয়ালদের মতো অল্প কয়েক জন।
গ্রামের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এই কামদুনিই শাসকের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল তিন বছর আগে। তখন থেকেই তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে গ্রামবাসীদের একতায় চিড় ধরানোর চেষ্টা শুরু। এক সময় যে কামদুনি রাজনৈতিক নেতাদের পথ আটকেছিল, নিহত মেয়েটির যে পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছিল চাকরির টোপ— ক্রমে সেই গ্রাম, সেই পরিবারকে মুঠোয় আনতে অনেকটাই সফল হয় শাসক দল। সরকারি চাকরি নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন থেকে সরে যায় নিহতের পরিবার। গ্রাম ছেড়েও চলে যায় তারা। শাসক দলের শান্তি-কমিটি গ্রামের বাকি বাসিন্দাদেরও পাশে টানার চেষ্টা চালিয়ে যায়। সেই চেষ্টা যে অনেকটাই সফল, এ দিনের ভোজ সেটাই প্রমাণ করল বলে মনে করছেন বিরোধীরা। প্রতিবাদ আন্দোলনে ভাটা পড়েছিল অনেক দিনই। এ বার শাসকের ভোজে ঢালাও যোগ দিয়ে কামদুনি দেখিয়ে দিল, তিন বছর আগের চেয়ে সময় পাল্টেছে অনেকটাই।
এ দিন বেলা ১২টার পর থেকেই কেউ বাচ্চার হাত ধরে, কেউ স্নান সেরে নতুন জামা কাপড় পরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে এসেছেন। সোমবার সকাল থেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ভোট করানোর পাশাপাশি ব্যস্ত ছিলেন ভোজের আয়োজনে। মাটির উনুন তৈরি করে বড় বড় ডেকচি, কড়াইয়ে সকাল থেকেই রান্নায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের স্থানীয় সমর্থক এবং তাঁদের পরিবারের মহিলাদের। পরে বেলা বাড়তেই লোকজনকে ধরে ধরে খাওয়ার জায়গায় পাঠিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। দু’দিন আগে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এসেছিলেন, এ দিন দুপুরে যেন কোনও বাড়িতে হাঁড়ি না চড়ে। ভোট দিয়েই যেন সকলে মণ্ডলপাড়ায় গিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে আসেন।
মৌসুমী-টুম্পা কিন্তু বিস্মিত নন। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার পরে মৌসুমীর বক্তব্য, ‘‘যেখানে মেয়েটির পুরো পরিবারই বিক্রি হয়ে গেল, সেখানে গ্রামের মানুষ তো শাসক দলের ভয়ে ভোট দেবেই। তবে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা আজও মনে মনে শাসক দলকে সহ্য করতে পারেন না।’’ টুম্পা ভোট দিতে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ির গ্রামে। তাঁরও একই কথা, ‘‘মেয়ের পরিবারই বদলে গেলে গ্রামবাসীদের কী করে দোষ দেব?’’ যে আন্দোলনকারীরা এ দিনের ভোজে গেলেন তাঁদেরও জবাব ওটাই। ‘‘মেয়ের পরিবার নিজেদের বিবেক বিক্রি করে দিল। সেখানে আমরা কেন শাসক দলের রোষানলে পড়তে যাব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy