Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

নারদ-তদন্তে এত দিনে শুধু দু’টি ফোন

অবশেষে সামান্য হলেও নড়ে বসল লোকসভার নীতি কমিটি।নারদ-নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে তাঁদের স্টিং অভিযানের মূল ভিডিও ফাইলটি আজ চেয়ে পাঠাল নীতি কমিটি। যদিও সরকারি ভাবে এখনও কোনও চিঠি পাননি ম্যাথু। শুধু দু’টি ফোন পেয়েছেন। একটি লোকসভার নীতি কমিটির সচিবালয়ের কাছ থেকে। অন্যটি রাজ্যসভার সচিবালয়ের কাছ থেকে। তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি লোকসভার নীতি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে দু’সপ্তাহ আগেই। এটুকু নড়ে বসতেই এত দিন লেগে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, তদন্তের অন্তিমে পৌঁছতে না জানি কত দিন লেগে যাবে! বিরোধীরা বলছেন, এ সব লোক দেখানো সক্রিয়তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

অবশেষে সামান্য হলেও নড়ে বসল লোকসভার নীতি কমিটি।

নারদ-নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে তাঁদের স্টিং অভিযানের মূল ভিডিও ফাইলটি আজ চেয়ে পাঠাল নীতি কমিটি। যদিও সরকারি ভাবে এখনও কোনও চিঠি পাননি ম্যাথু। শুধু দু’টি ফোন পেয়েছেন। একটি লোকসভার নীতি কমিটির সচিবালয়ের কাছ থেকে। অন্যটি রাজ্যসভার সচিবালয়ের কাছ থেকে। তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি লোকসভার নীতি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে দু’সপ্তাহ আগেই। এটুকু নড়ে বসতেই এত দিন লেগে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, তদন্তের অন্তিমে পৌঁছতে না জানি কত দিন লেগে যাবে! বিরোধীরা বলছেন, এ সব লোক দেখানো সক্রিয়তা।

লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বাধীন লোকসভার এই কমিটির অন্যতম সদস্য ভর্তুহরি মহতাব। তিনিও আজ জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে তদন্তের ‘প্রাথমিক প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছে মাত্র। কমিটির সদস্যরা এই নিয়ে প্রথম কবে বৈঠকে বসবেন তার দিনক্ষণ এখনও স্থির হয়নি।

নারদ-নিউজের হুল-ভিডিও সামনে আসার পর থেকেই এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবিতে সরব রয়েছেন বিরোধীরা। অভিযোগ তুলেছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিজেপি-তৃণমূল আঁতাঁত হয়েছে। বিষয়টি লোকসভার নীতি কমিটিতে পাঠানোর পিছনেও রয়েছে একই অভিসন্ধি। কেননা উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস সরকারের বিধায়ক কেনাবেচা নিয়ে স্টিং অপারেশনের ভিডিও প্রকাশ হতেই বিদ্যুৎগতিতে পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্র। ওই ভিডিও খাঁটি কি না রাতারাতি তার পরীক্ষা করিয়েছিল। অথচ নারদ-কাণ্ডে সেই ক্ষিপ্রতার ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচারেও বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা তাই বিজেপি-তৃণমূল ‘ম্যাচ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ তুলছেন। আজ ম্যাথুকে ফোন করার কথা জেনেও সিপিএমের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, এখনও লোকসভার নীতি কমিটির বৈঠকই ডাকা হয়নি। রাজ্যসভার নীতি কমিটির কাছেও পাঠানো হয়নি বিষয়টি। সিপিএমের এই সাংসদের কথায়, ‘‘উত্তরাখণ্ডে তৎপরতা ও পশ্চিমবঙ্গে নীরবতা— মানুষ বুঝতে পারছেন নারদ-কাণ্ড ধামাচাপ দিতে দিদিভাই-মোদীভাই কতটা সক্রিয়।’’

অন্য বিরোধী নেতারাও মনে করছেন, আসলে চাপের মুখে পড়েই বিজেপি কিছুটা লোকদেখানো ভাবে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধছে। আপাত সক্রিয়তা দেখাতে ফোনে ভিডিও চেয়েছে নীতি কমিটি।

এই স্টিং ভিডিওর বাছাই করা কিছু অংশই এ পর্যন্ত প্রকাশ করেছে নারদ-নিউজ। নীতি কমিটির সচিবালয় থেকে ফোন করে এ দিন মূল তথা অসম্পাদিত ভিডিও ফাইল চাওয়া হয়েছে। ম্যাথু জানিয়েছেন, তাঁর ঠিকানাও জেনে নিয়েছে সচিবালয়। বলা হয়েছে, শীঘ্রই এই ব্যাপারে সরকারি চিঠি যাবে। ম্যাথুর বক্তব্য, ‘‘আমার ফাইল তৈরিই রয়েছে। সরকারিভাবে চিঠি পেলেই গিয়ে যাবতীয় নথি দিয়ে আসব।’’

এখন প্রশ্ন উঠছে, কবে ওই ভিডিও ফাইল নিয়ে বৈঠকে বসবে নীতি কমিটি?

খুব শীঘ্রই যে সেটা হচ্ছে না, তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে বিজু জনতা দলের লোকসভার নেতা ভর্তুহরির কাছ থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘এখনই কোনও বৈঠক ডাকা হয়নি। এটা তদন্তের একেবারে প্রাথমিক ধাপ। নিয়ম হল, সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া নথি ও তথ্য সংগ্রহ করবে কমিটির সচিবালয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাছে গোটা বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। অভিযোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা খতিয়ে দেখা হবে। তার পরে কমিটির সদস্যের কাছে গোটা বিষয়টি পেশ করা হবে।’’

ম্যাথু জানাচ্ছেন, রাজ্যসভার সচিবালয় থেকেও ফোন করে তাঁর কাছে মূল ভিডিও চাওয়া হয়েছে। ঘুষের বিষয়টি রাজ্যসভার নীতি কমিটিতে পাঠানোর কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবু কেন ভিডিও চাইছে তারা? রাজ্যসভার তরফে এখনও এ বিষয়ে কিছু বলা না হলেও ম্যাথু জানাচ্ছেন, তাঁদের স্টিং-ভিডিও প্রকাশের পরে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন রাজ্যসভায় অভিযোগ এনেছিলেন, নারদ-অর্থের সঙ্গে দুবাইয়ের যোগ রয়েছে। ম্যাথুর ফোন থেকে বারবার দুবাইয়ের নম্বরে যোগাযোগ করা হয়েছে— এমন অভিযোগও করেন তিনি। এর পর পাল্টা অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লেখেন ম্যাথু। সেই সূত্রেই তাঁর কাছে ভিডিও ফাইল চাওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

ফাইল চাওয়া নিয়ে ফোনাফোনি শুরু হলেও আদতে তদন্ত নিয়ে কেন্দ্র কতটা আন্তরিক, সেই প্রশ্নটা তুলছেন অনেকেই। সময়ই যার জবাব দেবে।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy