মোদী-শাহের নজর কাড়াই লক্ষ্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিগেডে প্রথম বার নন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও তিনি এসেছেন কলকাতার এই ময়দানে। কিন্তু ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিলের সঙ্গে ২০২১-এর ৭ মার্চের অনেক ফারাক। তখন বাংলার দুই সাংসদের বিজেপি এখন ১৮। দলবদলের খেলায় ৩ বিধায়কের বিজেপি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। তখন তৃণমূল থেকে আসা মুকুল রায় শুধু ছিলেন। এখন শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে অনেক বড় তালিকা। তাই রবিবার মোদীর ব্রিগেড সমাবেশে নিজেদের অতীতের সঙ্গে তুলনা নয়, ভিড়ের অঙ্কে অন্য দলের ‘নজির’ ভাঙাই লক্ষ্য বিজেপি-র। তবে গেরুয়া শিবির সেটাও মানতে চাইছে না। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রত্যয় ভরা দাবি, ‘‘রবিবারের সমাবেশের এমন চেহারা হবে, অতীতে যার কোনও নজির নেই।’’ মোদীকে চমকে দেওয়াই শুধু নয়, সেই সঙ্গে অমিত শাহকেও খুশি করতে হবে। কারণ, তাঁর নির্দেশেই চলছে নীলবাড়ির লড়াইয়ে যাবতীয় কর্মসূচি। অমিতের থেকে সম্মানজনক ‘গ্রেড’ পেতে হবে রাজ্য নেতৃত্বকে।
২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি ব্রিগেডে ২৩টি দলের যৌথ সমাবেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে যেটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিজেপি-র কাছে। এর পরে সেই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মোদীকে নিয়ে ব্রিগেড সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু জমায়েত তেমন করা যাবে না বুঝেই তা বাতিল হয়। পরে ৮ মার্চ সেই সভা হয়। তবে তাতে যে বিশাল কিছু সমাগম হয়েছিল, তেমন দাবি বিজেপি-ও করে না। সদ্যই ব্রিগেড সমাবেশ করেছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। ২৮ ফেব্রুয়ারির সেই সমাবেশের জমায়েত নজর কেড়েছিল। তার পরেই বিজেপি-র সমাবেশ। স্বাভাবিক ভাবেই একটা তুলনা আসবে। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র বক্তব্য, তুলনার দরকার হবে না। দেশ-বিদেশে অনেক বড় বড় সমাবেশ করা মোদীকে চমকে দিতে চান তাঁরা।
ব্রিগেডে মঞ্চ বাঁধার কাজ যবে থেকে শুরু হয়েছে তারও আগে থেকে শুরু হয়েছে জমায়েতের পরিকল্পনা। বিজেপি-র দাবি, কলকাতা ছাড়া হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনার উপরে বেশি দায়িত্ব থাকলেও কর্মী-সমর্থকরা আসবেন দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান থেকেও। এ ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার মধ্যে বীরভূম, নদিয়া থেকেও প্রচুর সমর্থককে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সব জেলা থেকেও ট্রেনে ও বাসে করে আসছেন কর্মীরা। ব্রিগেড সমাবেশকে ‘পাখির চোখ’ করা বিজেপি শুধু সভা করে প্রচার নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়েও সাধারণ মানুষের কাছে ব্রিগেডে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। শনিবার কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায়, বাজারে, পার্কে গিয়ে সমাবেশে আসার জন্য বিজেপি-র ভাষায় ‘পত্রক’ (লিফলেট) বিলি করেছেন খোদ রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কাটিয়ে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা শুক্রবার ভোর রাতে কলকাতায় ফিরেই নেমে পড়েন প্রচারে। দিলীপ থেকে শুভেন্দু— একের পর এক সাংগঠনিক বৈঠক ও সমাবেশ করেছেন ব্রিগেড সফল করার জন্য। আগেই থেকেই বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করে দেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুরা। রবিবার মাঠ ভরাতে দলের ১৮ জন সাংসদের নিজের নিজের এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিজেদের তো বটেই সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে আসা বিধায়কদেরও ‘লক্ষ’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সব জেলা থেকেই বাসে করে কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় শুক্রবার।
কিন্তু ব্রিগেড সমাবেশকে এত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন বিজেপি? দলের নেতারা বলছেন, এটা অমিত শাহর নির্দেশ। ব্রিগেড যাতে সফল হয় তার জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহের ঘোষিত কর্মসূচি বদল করেছেন। কলকাতা সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্য নেতাদের ব্রিগেড ভরানোর ‘হোমটাস্ক’ দিয়ে রেখেছেন। এক নেতার কথায়, ‘‘কেমন ভিড় হচ্ছে সে দিকে নজর রাখবেন অমিতজি। ওঁর কাছে এটা আমাদের পরীক্ষাও।’’ আর তাতেই চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলার বিজেপি ব্রিগেড।
ইদানীং কালে এর আগে কখনও ব্রিগেড ভরানোর চ্যালেঞ্জই নেয়নি বিজেপি। সদ্য বিজেপি-তে যোগ দেওয়া এক বিধায়কের কথায়, ‘‘আগে তো বিজেপি-তে তেমন অভিজ্ঞ নেতাই ছিলেন না যাঁরা লোক টানতে পারেন। এখন সেটা আমরা সবাই মিলে করে দেখিয়ে দেব। এটা আমার মতো নতুনদের কাছেও চ্যালেঞ্জ।’’
মোদী-শাহর নেতৃত্বাধীন বিজেপি-র কাছে এটা দ্বিতীয় ব্রিগেড সমাবেশ হলেও অতীতে সে নজির রেখেছেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা। ইতিহাস বলছে, ১৯৮৮ সালে ‘রাজীব হঠাও’ ডাক দিয়েছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ‘বিরোধী কনক্লেভ’-এর সেই মঞ্চে বসুর হাতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাজপেয়ীও। ছিলেন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ। তবে বিজেপি প্রথম ব্রিগেডে সমাবেশ করে ১৯৯০ সালে। ছিলেন বাজপেয়ী, আডবাণীর সঙ্গে ছিলেন সুষমা স্বরাজ, উমা ভারতীরা। রামমন্দির আন্দোলনের সেই সময়ে ব্রিগেডে বড় সমাবেশই করেছিল বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy