Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mukul ray

WB election 2021 : টিকিট-বিভূতি পেতে মুকুলবাবার থানে হত্যে তৃণমূলের বঞ্চিত বিধায়কদের

সময়-দল-অবস্থান সবই বদলেছে তাঁর। কিন্তু তিনিই যে তৃণমূলের বঞ্চিতদের কাছে ‘মুশকিল আসান’, তা আরও একবার প্রমাণিত হল।

মুকুল রায়।

মুকুল রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২১ ২১:৩১
Share: Save:

তৃণমূলে থাকাকালীন সকলের কাছে ‘মুশকিল আসান’ ছিলেন তিনিই। গত কয়েক বছরে সময়-দল-অবস্থান সবই বদলেছে তাঁর। কিন্তু এখনও যে তিনিই তৃণমূলের বঞ্চিতদের কাছে ‘মুশকিল আসান’, তা আরও একবার প্রমাণিত হল। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মুকুল রায়ের বাড়িতে বঞ্চিত তৃণমূল বিধায়করা ভিড় জমালেন। তাঁর ভোটে লড়ার টিকিট চান। শুক্রবার দুপুরে কালীঘাট থেকে নীলবাড়ির লড়াইয়ে তাঁর ২৯১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যায়, বাদ পড়েছেন ৬৪ জন বিধায়ক। এরপরেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ-কান্নার পর্ব শুরু হয় তৃণমূলে। মমতার পুরোনো সঙ্গীরাই বেশিরভাগ বাদ পড়েছেন বলে দেখা যায়। সাময়িক ধাক্কা সামলে এবার উদ্যোগ শুরু হয় পাল্টা ধাক্কা দেওয়ার।

বঞ্চিতদের স্মরণে আসে একটি নাম— মুকুল রায়। টিকিট নামক বিভুতি পেতে ‘মুকুলবাবা’-র সল্টলেকের থানে ভিড় জমাতে শুরু করেন বেশিরভাগ বঞ্চিত বিধায়করা। একদা তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর ছিলেন মুকুল। তখন তাঁর হাতেই ছিল টিকিট দেওয়ার ক্ষমতা। এখন তিনি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। টিকিট দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ততখানি আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক এবং জল্পনা আছে। কিন্তু তাতে কি আর বঞ্চিতদের থামানো যায়! তাঁরা গিয়ে ভিড় করেন সেই মুকুলের কাছেই। সেই উদ্যোগের ‘নান্দীমুখ’ করেন জোঁড়াসাকোর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীনেশ বাজাজ। দলনেত্রী ও দলের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুকুলের সল্টলেকের বাড়িতে যান তিনি। সেখানেই মুকুলের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, আর তৃণমূল নয়। এবার বিজেপি-র হয়েই কাজ করবেন তিনি।

রাত ঘনানোর সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলের সঙ্গে একে একে যোগাযোগ শুরু করেন সোনালি গুহ, শীতল সর্দার, জটু লাহিড়িরা। মমতার প্রার্থিতালিকা থেকে বাদ পড়েছেন পুড়শুড়ার বিধায়ক নুরুজ্জমান ও জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক আব্দুল গনি। রাতের দিকেই তাঁরাও প্রকাশ্যেই এসে মুকুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিজেপি-তে যোগদান করার ইচ্ছে প্রকাশ করে যান। ১৯৯৬-২০১৬— পর পর চারবার হাওড়া জেলার সাঁকরাইল থেকে বিধায়ক ছিলেন শীতল। তিনি এবং সাঁকরাইলের মহিলা নেত্রী ঝুমঝুম নস্কর দেখা করেন মুকুলের সঙ্গে। এমন নয় যে, শুধুমাত্র বিধায়করাই মুকুলের বিধাননগরের বাড়িতে হানা দেন। টিকিটের প্রত্যাশায় থাকা তৃণমূল নেতারাও মুকুলের কাছে এসে দলবদলের ইচ্ছা প্রকাশ করে যান। মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি কর্মী শনিবার জানান, ‘‘টিকিট পেতে ব্যর্থ তৃণমূল নেতারা সারারাত মুকুলদার সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন। এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে সারারাত দাদা ঘুমোতে যেতে পারেননি। একসময় নিজেই বলেছেন, ‘এবার একটু ঘুমোতে দাও, সবার সব কথাই আমি শুনব’। কিন্তু কে শোনে কার কথা!’’

হাওড়ার শিবপুরের পাঁচবারের অশীতিপর বিধায়ক জটু লাহিড়ি টিকিট না পাওয়ার পরে পরেই শুক্রবার অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ‘নির্দল প্রার্থী’ হয়ে দাঁড়ানো যায় কি না সে বিষয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু এক অভিজ্ঞ নেতা তাঁকে পরামর্শ দেন, এই বয়সে আর নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তাঁর উচিত হবে না। বরং বিজেপি-তে গিয়ে নিজের রাজনৈতিক কার্যকারিতার প্রমাণ দিন। সকালেই অনুগামীদের নিয়ে মুকুলের বিধাননগরের বাড়িতে যান শিবপুরের বর্ষীয়ান বিধায়ক। মুকুলের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বের পরেই ঘোষণা করে দেন, ‘‘আমি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছি এবং আজীবন বিজেপি-ই করব।’’ মুকুল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, উত্তর থেকে দক্ষিণ— সব জেলা থেকেই মুকুলের কাছে ঘনঘন ফোন আসছে তৃণমূল নেতাদের। কেউ বা টিকিটের দাবি নিয়ে কেউ বা যোগদানের। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘এই সমস্ত বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা মুকুলের দরজায় ভিড় জমাচ্ছেন টিকিটের প্রত্যাশায়। কিন্তু বিজেপি তো আর তৃণমূলের মতো দল নয়, যে এলেই টিকিট পাওয়া যাবে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, দলে যোগদানের কথা বললেও মুকুল’দা কাউকেই টিকিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না। সেই শর্তে যদি কেউ আসতে চান, তা হলে তাঁকে দলে নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ২ মে-র আগে পুরো তৃণমূলটাই ফাঁকা করে দেবেন মুকুলদা!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy