Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

চাঁপদানিতে ‘গুরু’ই ভরসা মুজফ্ফরের

মাস দেড়েক আগের ঘটনা। শ্রীরামপুরের মাহেশে শাসক দলের মহকুমা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ।কিন্তু মঞ্চ থেকে কর্মীদের উদ্দেশে কোনও বার্তা নয়, বদলে বিধায়ক আউরে গেলেন শায়েরি। যাঁর উদ্দেশে এই প্রশস্তি, তিনি স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি করলেন, তিনি চাঁপদানির বিদায়ী বিধায়ক মুজফফর খান। এ বারও চাঁপদানিতে তৃণমূলের প্রার্থী।

প্রকাশ পাল
চাঁপদানি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

‘মেরি জান, মেরি মান

উনকা নাম কল্যাণ।’

মাস দেড়েক আগের ঘটনা। শ্রীরামপুরের মাহেশে শাসক দলের মহকুমা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ।

কিন্তু মঞ্চ থেকে কর্মীদের উদ্দেশে কোনও বার্তা নয়, বদলে বিধায়ক আউরে গেলেন শায়েরি। যাঁর উদ্দেশে এই প্রশস্তি, তিনি স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি করলেন, তিনি চাঁপদানির বিদায়ী বিধায়ক মুজফফর খান। এ বারও চাঁপদানিতে তৃণমূলের প্রার্থী। একে ২০১১-র মমতা হাওয়া নেই। তার উপর উল্টোদিকে জোটের প্রার্থী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। সর্বোপরি এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ। ফলে লড়াই বেশ কঠিন। লড়াই জিতে এ বার ‘গুরু’ কল্যাণের মান বাঁচানোই বড় চ্যালেঞ্জ মুজফ্ফরের কাছে। এর মধ্যে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ সারদা থেকে সদ্য হওয়া নারদ। রাজ্যে সারদা নিয়ে শাসকদের বিরুদ্ধে প্রথম ময়দানে নামা মান্নানসাহেবই এখানে বিরোধীদের মূল কণ্ঠস্বর।

‘সারদা থেকে নারদ’ নিয়ে শাসক দল যখন বেশ বেকায়দায় তখন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের অন্দরেই তীব্র ক্ষোভ। গত পাঁচ বছরে দলের কর্মীদের কাছে আড়ালে-আবডালে তাঁর পরিচিতি ‘সানডে ক্লাবের মেম্বার’। কারণ তিনি এলাকার বাসিন্দা নন, কলকাতা থেকে উজিয়ে এসে চাঁপদানিতে প্রার্থী হয়েছিলেন। রবিবার ছাড়া এলাকায় তিনি ডুমুরের ফুল। জনসংযোগে যেখানে দলের কর্মীরাই তাঁকে পাশ মার্ক দিতে নারাজ, সেখানে তিনিই ফের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। বিপক্ষ আব্দুল মান্নানকে অবশ্য ইতিমধ্যেই কল্যাণ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, ‌‘‘চাঁপদানিতে দাঁড়ালে ওঁর জামানত জব্দ হয়ে যাবে।’’

জোটের জটিল পাটিগণিতে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ের এই আসন এমনিতেই এ বার বেশ পিচ্ছিল। তার উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, দাগ কাটার মতো কোনও কাজ করতে পারেননি মুজফফর। বৈদ্যবাটি বা শেওড়াফুলিতে কলেজ নেই। নেই ভাল হাসপাতাল। ভাল মানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। গত পাঁচ বছরে সে সব নিয়ে বিধায়ক একেবারেই উদ্যোগী হননি। দিল্লি রোডের ধারে বাসস্ট্যান্ডের কাজ মাঝপথে থমকে। রাস্তা সংস্কার, ত্রিফলা লাগানোর মতো কিছু কাজ বাদ দিলে তেমন নজরকাড়া কাজ নেই বিধায়কের। শ্রাবণী মেলার সময় হাজার হাজার পুণ্যার্থী বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে জল নিয়ে তারকেশ্বরে যান। তাঁদের সুবিধার্থে বৈদ্যবাটি চৌমাথা এবং দীর্ঘাঙ্গি মোড়ে উচ্চ স্তম্ভে আলো লাগানোর দাবি থাকলেও তা হয়নি। টানা তিনটি আর্থিক বছরে বৈদ্যবাটি পুরসভা এবং পিয়ারাপুর পঞ্চায়েত বিধায়ক কোটার কোনও টাকা কার্যত পায়নি। শ্রীরামপুর পুরসভার যে ৮টি ওয়ার্ড চাঁপদানি বিধানসভায় পড়ে সেখানেও বিধায়কের কাজের ছবি ঝাপসা। দলেরই একাংশের অভিযোগ, যে টুকু কাজ হয়েছে, তা শুধু চাঁপদানি পুর-এলাকায়।

তবে ‘শিষ্য’র জন্য ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নেমে পড়েছেন সাংসদ। গত পুর নির্বাচনে বৈদ্যবাটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অজয়প্রতাপ সিংহ হেরে যান নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো তৃণমূল নেতা প্রবীর পালের কাছে। সেই সময় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কটুক্তি করেন প্রবীরবাবু। সেই প্রবীরকেই জামাই আদর করে দলে বরণ করে এনেছেন কল্যাণ স্বয়ং। এই অবস্থায় দলের মধ্যে আকচা-আকচি প্রকাশ্যে এসে পড়ে। শেওড়াফুলিতে প্রয়াত সাংসদ আকবর খোন্দকারের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে তাঁর স্মৃতি রক্ষা কমিটি। সেই অনুষ্ঠানের ছায়া মাড়াননি মুজফফর। উল্টে অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয় যা তৃণমূলের কর্মীরা ভালভাবে নেননি। তৃণমূল শিবিরের খবর, এখন প্রার্থীকে জেতাতে অজয়প্রতাপবাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন সাংসদ। শাসক দলের কোনও নেতাই অবশ্য দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। অজয়প্রতাপবাবু থেকে দলের শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটি শহর সভাপতি শ্যামলেন্দু মুখোপাধ্যায় সকলেই বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, সে দিকে তাকিয়েই মানুষ আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।’’ মুজফফর নিজেও প্রচারে শুধু ‘উন্নয়ন, উন্নয়ন এবং উন্নয়ন’-এর কথাই বলছেন।

তবে যে যাই বলুন, শাসক দলের সংগঠনের নড়বড়়ে অবস্থা তাতে চাপা থাকছে না। এই সুযোগ কাজে লাগাতে কংগ্রেসের পোড়খাওয়া নেতা আব্দুল মান্নান যে কসুর করবেন না, বলাই বাহুল্য। তার উপর এ বার সঙ্গী সিপিএম তথা বামফ্রন্টের শক্তি। বৈদ্যবাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকেরও ভাল সংগঠন রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মান্নান এলাকাতেই থাকেন। স্থানীয় প্রার্থী হওয়ার সুবিধাও পাবেন। গত বিধানসভায় মুজফফর সিপিএমের থেকে ২৩ হাজার ৩১৩ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য তৃণমূলের কল্যাণ চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র তুলনায় মাত্র ২৪৩৩ ভোটে এগিয়েছিলেন। ওই ভোটে চাঁপদানি থেকে কল্যাণ ৫৪ হাজার ১২৮টি ভোট পান। মোদী হাওয়ায় বিজেপির বাপি লাহিড়ী পেয়েছিলেন ৫১ হাজার ৬৯৫ ভোট। সিপিএমের তীর্থঙ্কর রায় এবং কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৩৯ হাজার ১২২ এবং ২৩ হাজার ৭০১টি ভোট। কংগ্রেস এবং সিপিএমের মিলিত ভোট ছিল ৬২ হাজার ৮২৩।

এ বার মোদী হাওয়ায় তেমন জোর নেই। ফলে ভোটের অঙ্কে চাঁপদানি শেষ পর্যন্ত কার হাতে যায়, সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

chapdani assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy