আলমপুরে বাড়ির দরজায় রুনা। ছবি: উৎপল সরকার।
তাঁর শুধু একটাই দাবি, স্বামীকে যারা খুন করেছে, তাদের কঠোর সাজা চাই। কিন্তু সেই অভিযুক্তদের জেল থেকে ছাড়া পেয়েই দলের নেতাদের সঙ্গে ভোটের প্রচার করতে দেখে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তিনি।
তিনি রুনা লায়লা খাতুন। রায়না ২ ব্লকের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সভাপতি, নিহত শেখ আব্দুল আলিমের স্ত্রী। ২০১৫ সালের ১০ মে রায়নার আলমপুরে নিজের বাড়ির সামনেই খুন হন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আলিম। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই তাঁকে খুন হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। খুনে অভিযুক্ত ২৭ জনই সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। বুধবার নিজের বাড়িতে বসে বারবার একটাই কথা বলছিলেন রুনা, ‘‘এক বছর হয়ে গেল উনি চলে গিয়েছেন। দল ছাড়া কিছু ভাবতেন না। অথচ, এর মধ্যে পার্টি একটাও স্মরণসভা করল না!’’
স্বামীকে হারিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদর্শ করে দলে রয়ে গিয়েছেন রুনা। কিন্তু স্বামী-খুনে অভিযুক্তেরা দলের আশ্রয় পাচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। ক্ষুব্ধ রুনা বলেন, ‘‘দু’বার কালীঘাটে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। তাঁর দেখা পাইনি। সুব্রত বক্সী আশ্বাস দিয়েছিলেন, খুনিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্ত কিছুই তো হল না। এখন সিবিআইয়ের উপর ভরসা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’
বড় ছেলে শেখ ফারহান আলমপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া। বাবা বেঁচে থাকাকালীন বর্ধমানে একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়ত। কিন্তু এখন আর ছেলেকে দূরের স্কুলে পাঠানোর সাহস পান না রুনা। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী খুনে অভিযুক্তেরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে লাগাতার আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ছেলেকে মেরে ফেলার কথাও বলছে। থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’ ঘটনার ৫৪ দিনের মাথায় পুলিশ যে চার্জশিট দিয়েছিল তাতে মূল অভিযুক্ত সৈয়দ কলিমুদ্দিন ওরফে বাপ্পার বাড়ি আলিমের বাড়ির সামনেই। রুনার অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামী খুন হওয়ার পরেই বাপ্পাকে পুলিশ গ্রেফতার করল। সাত মাস জেল খাটল। অথচ, এখন তাকেই দল প্রশ্রয় দিচ্ছে। কেন খুনিদের ভোট-প্রচারে ব্যবহার করা হল?’’
তাঁর স্বামীকে খুনে অভিযুক্তেরা রায়না বিধানসভার আটটি পঞ্চয়েতের চারটিতে (গোতান, বরবইনান, উচালন ও কাইতি) গত তিন মাস ধরে দাপিয়ে প্রচার করেছে বলে অভিযোগ রুনার। তিনি বলেন, ‘‘ভোট-প্রচারে ওই সমস্ত কেন্দ্রে আমিও ছিলাম। যারা আমার স্বামীকে খুন করল তাদেরই কি না পাশাপাশি থাকব! দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অনেক বার আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’
রুনা জানান, তাঁর আপত্তিতে আলমপুরে সভা করেনি তৃণমূল। তাঁর কথায়, ‘‘সভা হলে আমার স্বামীকে খুনে অভিযুক্তেরা মঞ্চ কাঁপাত। অভিযুক্ত ২৭ জনের মধ্যে ১১ জনই আলমপুরের বাসিন্দা। অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল, সভা করার জন্য। আমি বাধা দিয়েছিলাম।’’ আলিমের বৃদ্ধ বাবা শেখ বনি আলমের প্রশ্ন, ‘‘ছেলের খুনিরা অবাধে ভোটের প্রচারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু আছে কি?’’
তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘আব্দুল আলিমের পরিবারের প্রতি আমাদের দলের সহানুভূতি আছে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী যে সব অভিযোগ করেছেন, সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy