হয় আমাদের ভোট দাও, না হলে বাড়িতে বসে গুড়-জল খাও! সোমবার দ্বিতীয় দফার ভোটে শাসক তৃণমূল এমনই কৌশল নিয়েছে বলে নালিশ পৌঁছেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। যে কমিশন পশ্চিমবঙ্গে নির্বিঘ্ন, নিশ্চিন্ত ভোট করানোর জন্য শুরু থেকেই ঢাক পিটিয়েছে। কিন্তু প্রথম দফায় একাধিক অভিযোগের পরে স্পষ্ট, ওই দিন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ ছিল না। এই অবস্থায় কমিশন আরও একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও ঘরপোড়া রাজ্যবাসীর প্রশ্ন, এত কথার পরেও শাসক দলের গুড়-জলের কৌশল রুখে ভোটারদের নির্ভয়ে বুথে আনা যাবে কি?
প্রথম দফার ভোটে জঙ্গলমহলের ১৮টি কেন্দ্রের বেশ কিছু বুথে অস্বাভাবিক ভোটের হারে বিস্মিত কমিশন। সে বিষয়ে খোঁজখবরও করা হচ্ছে বলে কমিশনের তরফে ইঙ্গিত মিলেছে। প্রথম পর্বের ভোট শেষ হওয়ার পর বহু বুথে ভূতের নেত্য নিয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। ভয় এবং ভূত মোকাবিলায় কমিশন যাতে আরও বেশি সক্রিয় হয়, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলি দাবিও জানিয়েছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর কাছে। বিরোধীদের অভিযোগ পেয়ে কমিশনের প্রধান সচিব আর কে শ্রীবাস্তবকে দু’দিনের সফরে চার জেলায় পাঠিয়েছিলেন জৈদী। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান এবং নদিয়ার ভোট প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন শ্রীবাস্তব। শনিবার দিল্লি ফিরে জৈদীকে রিপোর্ট দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলব না। তবে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ ভোট করা।’’ এ দিন জৈদী রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীলকুমার গুপ্তর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।
দ্বিতীয় দফার আগে কমিশনের বাড়তি দাওয়াই কী?
এক কমিশন কর্তা জানান, প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছিল রাস্তাঘাটে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখতে না পাওয়া নিয়ে। এ বার যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে চার পাশে আরও বেশি দেখা যায়, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সন্ত্রস্ত এলাকাগুলিতে হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী, নয় ডিএম, এসপি, এসডিও, বিডিও বা পুলিশ অফিসারেরা গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সন্ত্রস্ত এলাকাগুলির মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য রিটার্নিং অফিসারের দফতর বার বার খোঁজ নেবে। খবর পেলেই বাহিনী পৌঁছে তাঁদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’’
দ্বিতীয় দফার ভোটে তৃণমূল যে বিরোধী ভোটারদের বুথমুখোই হতে দেবে না, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোটের সময় কী ভাবে ভোটের আগের দিন সিপিএমের এজেন্টদের বাড়িতে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছিল, তা নারদ নিউজের গোপন ক্যামেরায় কবুল করেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ বারে এক কাঠি এগিয়ে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দলীয় বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘যদি দেখেন পাঁচ-সাতটা বাড়ি আমাদের ভোট দেবে না, তা হলে তাদের ভোট দিতে যাওয়ারই দরকার নেই! তাদের বলে দেবেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী আর নির্বাচন কমিশন তো ভোট পর্যন্ত! তার পর কী হবে?’’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, শাসক দল আর বুথে ঢুকে ভোট লুটের জন্য অপেক্ষা করবে না। তার আগেই চিহ্নিত বিরোধী ভোটারদের হুমকি দিয়ে বাড়িতেই আটকে রাখবে তারা।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বিরোধী ভোটারদের আটকে দেওয়ার এই পরম্পরা এ রাজ্যে নতুন নয়। বাম জমানাতেও বহু এলাকায় এমনই হতো। সেই কাজ যারা করত, তাদের বেশির ভাগই এখন তৃণমূলে!
বিরোধীদের সেই অভিযোগ মাথায় রেখে বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদের দুই জেলার যে সব এলাকাকে অতিস্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে ভোটারদের সাহস জোগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন শ্রীবাস্তব। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী যেন যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হয়। এ নিয়ে কোনও অভিযোগ কমিশন বরদাস্ত করবে না।’’
প্রথম দফায় খুব বেশি বাহিনী যে টহলদারিতে ছিল না, তা মেনেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক কর্তা সঞ্জীব দ্বিবেদী। তিনি জানান, তাঁর অধীনে থাকা চার কোম্পানি অর্থাৎ প্রায় ৪০০ জওয়ানের প্রায় ৩০০ জন ৩৬টি বুথের ভিতরে ডিউটিতে ছিলেন। বাকিদের মধ্যে জনা পঞ্চাশ টহলদারিতে ছিলেন।
এ বারে কথা তো অনেক হচ্ছে! মিলছে আশ্বাসও। কিন্তু শাসকের ‘গুড়-জল’ ঠেকানো যাবে কি? না হম্বিতম্বিই সার? এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy