ছিল দু’টি। হল ছ’টি!
বিরোধী জোটের ধাক্কায় হুগলি নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের!
হুগলির ১৮টি আসনের মধ্যে বামেদের দখলে থাকা দু’টি নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তায় ছিল শাসক দল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, মমতাকে ভাবাচ্ছে আরও চারটি আসন! তাই ওই ছ’টি আসনে প্রচারের জন্য তিনি জেলা নেতৃত্বকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
চাঁপদানি, চণ্ডীতলা, পুরশুড়া, বলাগড়, পাণ্ডুয়া এবং গোঘাট— হুগলির এই ছ’টি আসনকেই এ বার নজরবন্দি করেছেন মমতা। কেন? দলের একাংশ মানছে, পাণ্ডুয়া এবং গোঘাটে বামেদের শক্তি বেশি। কিন্তু এ বার জোটের ফলে চাঁপদানি, চণ্ডীতলা, পুরশুড়া এবং বলাগড় তৃণমূলের পক্ষে অনেকটাই নড়বড়ে। এখনও ঘর গুছিয়ে ওঠা যায়নি। তাই কোনও রকম শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না বলে দলনেত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।
দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘১৮টিতেই জিতব। কিন্তু ওই ছ’টি আসনের ক্ষেত্রে আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না। তাই নেত্রীর নির্দেশ মতো প্রচারে জোর বাড়ানো হয়েছে। নেত্রী হুগলিতে পদযাত্রাও করবেন।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে— চাঁপদানি, চণ্ডীতলা, পুরশুড়া এবং বলাগড় গত পাঁচ বছর তাদের দখলে থাকলেও এ বার জোট-হাওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। চাঁপদানিতে জোটপ্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। সারদা থেকে নারদ— প্রতিটি ঘটনাতেই যিনি তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে বেআব্রু করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। তার উপরে তৃণমূলের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ তলে তলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। ওই কেন্দ্রের মধ্যে বৈদ্যবাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন ভাল। তাঁদের নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায় যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন মান্নানের প্রচারে। তার উপরে বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক মুজফ্ফর খানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এলাকার বহু মানুষের অভিযোগ, বিধায়ককে কালেভদ্রে দেখা যায়। কিন্তু মান্নান এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পক্ষে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও অনুকূলে রয়েছে। তা ছাড়া, চাঁপদানিতে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে যে ব্যবধানে তৃণমূল জিতেছিল, লোকসভা
ভোটে সেই ব্যবধান এক ধাক্কায় তলানিতে চলে আসে। তাই দলকে মমতার কড়া বার্তা— ‘‘চাঁপদানিতে কোনও ভাবেই মান্নানকে জিততে দেওয়া যাবে না।’’
আবার চণ্ডীতলা, পুরশুড়া এবং বলাগড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তাঁদের বিপাকে ফেলতে পারে, তা ঠারেঠোরে স্বীকার করছেন তৃণমূল নেতারা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই পুরশুড়ায় গত বারের জয়ী পারভেজ রহমানের জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী করেছে এম নুরুজ্জামানকে। কিন্তু ‘বহিরাগত’ নুরুজ্জামান কতটা সামাল দিতে পারবেন, সে প্রশ্ন রয়েছে
দলেরই অন্দরে। চণ্ডীতলায় আবার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল শক্তি হারিয়েছে। পক্ষান্তরে, সংগঠনকে অনেকটাই মজবুত করে নিতে পেরেছে সিপিএম। একই ছবি বলাগড়েরও। বলাগড় ব্লকের বেশির ভাগ পঞ্চায়েতের ক্ষমতা রয়েছে বামেদের হাতেই।
তাই, এ বার হাওয়া নিজেদের অনুকূলে আনতে নেত্রীর নির্দেশে কোমর বাঁধছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। ছ’টি আসনে দলকে উতরে দেওয়ার জন্য অনেকেই নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন। আর তাঁদের কাণ্ড দেখে আড়ালে হাসছেন বিরোধী জোটের নেতারা। তাঁদের টিপ্পনী, ছ’টির বাইরের অনেক আসনও তৃণমূলকে ভোগাবে। সিঙ্গুর-তারকেশ্বর-চন্দননগরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উত্তরপাড়ায় বিদায়ী বিধায়ক অনুপ ঘোষালের কাজকর্ম, খানাকুলের ইকবাল আহমেদকে নিয়ে নারদ-ফুটেজ— পাল্টে দিতে পারে অনেক হিসেব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy