নারদ নিয়েই ভোটের বাজার তোলপাড়। তাই এ যাবৎ সারদা-কাণ্ড নিয়ে তেমন মুখে খুলতে দেখা যায়নি ‘দিদি’কে। কিন্তু চাঁপদানিতে গিয়েও তিনি সারদা নিয়ে চুপ থাকেন কী করে! প্রতিপক্ষ যেখানে আব্দুল মান্নান!
সেই মান্নান, যাঁর উদ্যোগে লগ্নি সংস্থার প্রতারিতদের একজোট করে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে প্রায় দু’বছর আগে জনস্বার্থে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। ধরা পড়েন তৃণমূলের অনেক রাঘব-বোয়াল। সেই মান্নান এ বার চাঁপদানিতে জোটের প্রার্থী। তাই, শনিবার নির্বাচনী সভা থেকে মান্নানের উপরে মনের সুখে গায়ের ঝাল মিটিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার দিল্লি গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার টাকার উৎস নিয়ে। মান্নানের বিরুদ্ধে পাল্টা একটি লগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন। দিয়েছেন তদন্তের হুঁশিয়ারিও।
মমতা বলেন, ‘‘জোড়া শালিক মান্নান আর বিকাশ (ভট্টাচার্য) রোজ দিল্লি যাচ্ছে কোর্ট-কেস করতে। কোথা থেকে টাকা পাও সব জানি। ভবেশ কে? (ভবেশ মজুমদার একটি লগ্নি সংস্থার কর্ণধার) তা-ও জানি। মমতাকে চোর বানাতে নেমে পড়লে! তৃণমূলের সঙ্গে লাগতে এসো না।’’
মমতার তোপকে স্বাগতই জানিয়েছেন মান্নান। তিনি বলেন, ‘‘সাহস থাকলে হাইকোর্ট বা সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের জন্য উনি বলুন। তবে ক্ষমতায় আসার পরে ওঁর, ওঁর ভাই আর ভাইপোদের ঠিক কত গুণ সম্পত্তি বেড়েছে তারও তদন্ত হোক। উনি দিশাহারা হয়ে গিয়েছেন। ওই সব বলে আমাদের ছেলেদের আরও উজ্জীবিতই করে গেলেন।’’
সারদা-কাণ্ড সামনে আসে ২০১৪ সালে। সুপ্রিম কোর্টে প্রতারিতদের হয়ে সেই মামলা লড়ছেন সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য। গত দু’বছরে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন সাংসদ এবং মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তাঁদের মধ্যে বিদায়ী মন্ত্রী মদন মিত্র এবং সাংসদ কুণাল ঘোষ এখনও জেলে। সারদা-কাণ্ড যে দু’বছর ধরে শাসক দলকে স্বস্তি দিচ্ছে না, তা বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিন আরও একবার তা সামনে এল।
চাঁপদানিতে উন্নয়নের ফিরিস্তি বাদ দিলে আগাগোড়া সারদা প্রসঙ্গ তুলে মমতা মান্নানকে বিঁধেছেন। মমতার হুঙ্কার, ‘‘২০০২ সালে সারদা তৈরি হয়। তখন তো তুমি বিধায়ক। চোখে কি ঠুসো পরে বসেছিলে? কেন শুধু ২০১১ সাল থেকে তদন্ত হবে? আপনি, মান্নানবাবুও ছাড় পাবেন না। সুজন (চক্রবর্তী), বুদ্ধর (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) মতো বন্ধুদের ছাড় দিতে দিতে ২ থেকে ১০ সাল বাদ দিলেন। একটা ভবেশ মুখ খুললেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’
সিবিআই সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে ‘সারদা রিয়েলটি’র জন্ম হয়। সেই সংস্থার হয়েই বাজার থেকে টাকা তুলত সারদা। সেই তদন্তই চলছে। মান্নান দাবি করেন, মমতা যে সময়ের কথা বলছেন, তা তিনি হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বর্ষীয়ান কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, ‘‘আদালত যদি ২০০২ সাল থেকে তদন্তের কথা বলত, আমরা মেনে নিতাম।’’ লগ্নি সংস্থার কর্তার সঙ্গে মমতার তোলা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন মান্নান। তাঁর দাবি, ‘‘হ্যাঁ, ওঁকে জানি। মমতা যেটা জানেন না, ওঁর বিরুদ্ধেও আমি অভিযোগ জানিয়েছি।’’ আইনজীবী বিকাশবাবু বলেন, ‘‘মমতার হাতে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। ভবেশকে খুঁজে বের করুন। আমরাই খুশি হব।’’
কিন্তু এত দিন পরে কেন সারদাকে টেনে মান্নানকে বিঁধলেন মমতা?
রাজনৈতিক শিবিরে এই প্রশ্ন ওঠার আগেই মঞ্চ থেকে উত্তরও দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, ‘‘গত বার বলেছিলাম, বদলা চাই না। এ বারও বলছি বদলা নেব না। তবে উত্তর চাই। তুমি আমায় বিঁধবে, চোর বলবে? আমি ছেড়ে দেব? অনেক সহ্য করেছি। আর নয়।’’
যা শুনে জোটের এক নেতার টিপ্পনী, এখানে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই ঝাল মিটিয়েছেন দিদি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy