সারি সারি। ফুলকুসমায় মমতার সভা। ছবি: উমাকান্ত ধর
মঞ্চে তখন সবে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখে মনে হচ্ছে, মেজাজটাও প্রসন্ন। মঞ্চে উঠেই নীচে সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকা বাউল শিল্পীদের উঁকি মেরে দেখে মুখে খেলে গেল হাসি। তার পর মঞ্চে বসে তাঁর সফর সঙ্গী বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেনকে বক্তৃতা করতে এগিয়ে দিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, তালড্যাংরার প্রার্থী সমীর চক্রবর্তীদের সঙ্গে খানিক আলাপ-আলোচনা। মুনমুনের বক্তব্য শেষ হতেই কর্ডলেস মাইক্রোফোনে বক্তা হিসেবে মমতার নাম ঘোষণা করেন সমীরবাবু।
দলনেত্রীর হাতে মাইক হাতে তুলে দেন সমীরবাবু। বক্তৃতার শুরু থেকেই অবশ্য আক্রমণের সুর চড়াচ্ছিলেন মমতা। এরই মাঝে ব্যারিকেডের সামনে মঞ্চের ডান দিকের তৃণমূল কর্মীদের নেত্রীকে দেখার হুড়োহুড়ির জেরে চিৎকারে মেজাজ আরও বিগড়োয় তাঁর। এক সময় বলেই ফেললেন, “একটু আস্তে। এত কথা বললে মাইকে গলা আসছে। আস্তে। চিৎকার করতে করতে গলা ধরে গেল। কত চিৎকার করব আর! আমাকে তো রেগুলার করতে হচ্ছে। আমিও তো একটা মানুষ!’’
এ বার চেঁচামেচি একটু কম হল। মমতাও বলে উঠলেন, ‘‘দেখেছো, আমার ভাইয়েরা কত সুন্দর চুপ হয়ে গেল। মেয়েরা কত সুন্দর চুপ হয়ে বসে আছে। এই তো লক্ষ্মী ছেলে।’’ নেত্রীর কাছে কড়া ধমক খেয়ে সাময়িক শান্ত হলেও দলের ‘লক্ষ্মী ছেলে’দের লক্ষ্মীপনা বেশিক্ষণ থাকল না। আবার শুরু হল হুড়োহুড়ি ও হইহট্টগোল। সেই হট্টগোল থামাতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে অরূপবাবু, সমীরবাবু এবং তাঁর স্ত্রী স্ত্রী কৃষ্ণা চক্রবর্তী আসরে নামলেন। তাতেও কাজ হল না। সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে দলের কর্মীদের কিছুটা বাদানুবাদ হচ্ছে দেখে ফের হাল সামলাতে নামলেন তৃণমূল নেত্রী। নির্দেশ দিলেন, “ভাই সিভিক ভলান্টিয়াররা একটু চুপ করুন তো। আস্তে! তোমরা ওদের (দর্শকদের) নিজের মতো থাকতে দাও। আর নিজেরা নিজের মতো থাক।’’ দিদি সিভিক ভলান্টিয়ারদের বকেছেন দেখে উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা উল্লাসে চিৎকার জুড়ে দেন। তা দেখে মমতা বলেন, “এই তোমরাও আস্তে। ওরাও (সিভিক ভলেন্টিয়ার) আমাদের ছেলে! ওরা তো তোমাদের চুপ করাতে গিয়েছিল। ওদের বকছো কেন? তোমাদেরই ঘরের ছেলে।’’
মমতার এই বক্তব্যকেই হাতিয়ার করেছে বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, সিভিক ভলান্টিয়াররা যে তাঁদেরই লোক, তা প্রকাশ্যে মেনে নিলেন তৃণমূল নেত্রী। এই নির্বাচনে বিরোধীরা একাধিক বার সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছে। পুরুলিয়ার বলরামপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়েও রুট মার্চ করানোর অভিযোগ উঠেছে। তালড্যাংরা কেন্দ্রেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন করানো হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএমের বিদায়ী বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্র। এ দিন মমতা সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘নিজের লোক’ বলে ফেলায় বিতাঁদের অভিযোগ মান্যতা পেল বলেই দাবি বিরোধীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy