Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

জেলের মন্দিরে দু’বেলা কালীর পুজোয় মগ্ন মদন

আলিপুর জেল সুপারের উল্টো দিকের অফিস ঘরের বড় টেবিল থেকে শুরু করে আসবাব— সব আগের মতোই আছে। নেই শুধু বিকেলে মদন মিত্রের চেনা দরবারটা। ভোটের আগে ১০ দিনের প্যারোল চেয়েছিলেন।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

আলিপুর জেল সুপারের উল্টো দিকের অফিস ঘরের বড় টেবিল থেকে শুরু করে আসবাব— সব আগের মতোই আছে। নেই শুধু বিকেলে মদন মিত্রের চেনা দরবারটা। ভোটের আগে ১০ দিনের প্যারোল চেয়েছিলেন। অনুমতি মেলেনি। তার পরেই নির্বাচন কমিশনের কড়া নির্দেশ পৌঁছয় জেলে। ফলে, চেনা ছবিটা এখন উধাও। এখন নিয়ম মেনে সপ্তাহে দু’দিন পরিবারের সঙ্গে দেখা। তা-ও মেরেকেটে ঘণ্টাখানেক। বাকি দিনগুলিতে অনুমতি পেলে দেখা করতে পারেন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উকিল।

কয়েক দিনেই মদন মিত্রের চেনা জগতটা কেমন যেন পাল্টে গিয়েছে। ‘‘মন্দির ওয়ার্ডে বসে আহত বাঘের মতো ছটফট করছেন দাদা,’’ বলছিলেন মদনবাবুর এক সহবন্দি।

কিন্তু খবর তো আর আটকে রাখা যায় না। সব খবরই আসছে মদনবাবুর কানে। আর ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, ছটফটানি ততই বাড়ছে। মন্দির ওয়ার্ডে মদনের সব সময়ের সঙ্গী এক বন্দির কথায়, ‘‘এই তো ক’দিন আগে ওখানকার কাউন্সিলর বিমল সাহার সঙ্গে ‘আক্রান্ত আমরা’র গণ্ডগোলের ঘটনা শুনে বেজায় চটে গেলেন মদনদা। বললেন, ‘‘ইশ্‌ এই সময়েই আমি নেই! আমি থাকলে এমন পরিস্থিতি তৈরিই হত না।’’

হাঁসফাঁস গরমেও খানিক কাহিল তৃণমূলের এই ডাকসাইটে নেতা। জেলে তাঁর সঙ্গীরা জানাচ্ছেন, গরমের ধকল নিতে না পেরে ‘দাদা’র শরীর খুবই খারাপ। ভবানীপুরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জগৎ থেকে যে তিনি এখন বহু দূরে। মুখে সাদা-সাদা দাগ হয়েছে, অনেক রোগাও হয়ে গিয়েছেন। তা নিয়ে চিন্তিত বাড়ির লোক থেকে ঘনিষ্ঠেরা, সকলেই। শুধু ভ্রূক্ষেপ নেই মদনবাবুর। ভোটে কী হবে, সেই চিন্তায় আপাতত নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন তিনি। জেল সূত্রেই জানা যায়, সকালে এমনিতে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যেস মদনবাবুর। কিন্তু এখন ভোটের চিন্তায় তাঁর ঘুম নেই। ওই বন্দির কথায়, ‘‘ওয়ার্ডের মন্দিরেই রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহের পাশে দক্ষিণেশ্বরের মা কালীর ছবি প্রতিষ্ঠা করেছেন মদনদা। দিনে দু’বার ঘণ্টাখানেক করে কাটাচ্ছেন সেখানেই।’’

জেলে দেখা করতে এলে দুই ছেলে, বাবু আর সোমকে বারবারই বলছেন, ‘‘চার-পাঁচ বার করে বাড়ি বাড়ি যাও। মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের কথা শোনো।’’ গত পাঁচ বছরে মদন মিত্র যে কামারহাটির মানুষের জন্য ‘প্রাণপাত’ করেছেন, বলতে হবে সে সব কথাও।

তাতেও কি চিন্তা যাচ্ছে! সিপিএম ভোটারদের কাছে গিয়ে শুধুই প্রচার করছে, ‘এ বার কি সার্টিফিকেট নিতে জেলে যাবেন!’ যা শুনে মেজাজ হারাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূরা। কিন্তু মদনবাবু বোঝাচ্ছেন, মেজাজ হারালে চলবে না। তিনি সামনে না থাকলেও যে কোনও কাজই আটকাবে না, তা ভাল করে বোঝাতে হবে ভোটারদের। তিনি যে রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার, প্রচারে বলতে হবে সে কথাও।

চিন্তা দলের অন্দরের অন্তর্ঘাত নিয়েও। অন্য এক ডাকসাইটে নেতা পুরো জেলায় নিজের আধিপত্য কায়েম করলেও কামারহাটি এখনও তাঁর নাগালের বাইরে। ভোটের দিনে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরাই অন্তর্ঘাত ঘটাবে না তো! এই নিয়েও চিন্তার শেষ নেই মদনবাবুর। ঘনিষ্ঠমহলে বারবারই বলছেন, ‘‘আমি নিজে থাকলে এমন সমস্যা হতই না। কমিশনের বিধি-নিষেধের ঠেলায় যে এখন ভোটের আঁচ থেকে অনেকটাই দূরে তিনি। ছেলেদের সব কিছুই পাখিপড়ার মতো বুঝিয়ে দিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়!’’

এর মধ্যে কামারহাটিতে প্রচারে গিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মদনের জন্য তাঁর আশীর্বাদ যে রয়েছে, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে গিয়েছেন প্রচারে। তাতে অবশ্য অনেকটাই আশ্বস্ত মদনবাবু।

তবে একটা আক্ষেপ রয়েই গিয়েছে। জেলে আসার পর থেকে নিয়মিত দাদুর কাছে আসত নাতি মহারূপ। ভিজিটিং আওয়ারের অনেকটা সময়ই মদন কাটাতেন পরিবারের নবতম ওই সদস্যের সঙ্গে। ভোটের ডামাডোলে সেই মহারূপও এখন ঘরবন্দি। বাড়ির বড়দের দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে কামারহাটি থেকে ভবানীপুর। সেই ব্যস্ততার মধ্যে জেলে আনা যাচ্ছে না মহারূপকে। ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে প্রতি দিনই মদনের তাই একটাই আক্ষেপ, ‘‘নাতিটাকে খুব মিস্‌ করছি, জানেন!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy