Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

আক্রমণের পথে জোট, প্রস্তুতি শপথ বয়কটের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো অস্ত্রেই এ বার তাঁকে ঘায়েল করতে চাইছে বিরোধী জোট! ভোটের পরে রাজ্য জুড়ে শাসক দলের তাণ্ডবের অভিযোগ করে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস।

রাজভবন থেকে বেরিয়ে অধীর চৌধুরী ও সূর্যকান্ত মিশ্র। — নিজস্ব চিত্র

রাজভবন থেকে বেরিয়ে অধীর চৌধুরী ও সূর্যকান্ত মিশ্র। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো অস্ত্রেই এ বার তাঁকে ঘায়েল করতে চাইছে বিরোধী জোট!

ভোটের পরে রাজ্য জুড়ে শাসক দলের তাণ্ডবের অভিযোগ করে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ জানানোর পরে বেরিয়ে সোমবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্যে বিরোধী দল এবং সাধারণ মানুষ যখন আক্রান্ত, সেই সময়ে উৎসব-অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মানসিকতা তাঁদের নেই। বাম জমানায় সিপিএমের সঙ্গে তাঁদের রাজনৈতিক দূরত্ব বোঝাতে সরকারি অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতেন বিরোধী নেত্রী মমতা। দলের প্রতিও তাঁর তেমন নির্দেশ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতার দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই বিরোধীরা এ বার একই কৌশল নিচ্ছে।

৩৪ বছরের বাম জমানার অবসানের পরে বিরোধী হিসাবে সূর্যবাবুরা নতুন সরকারকে সময় দেওয়ার নীতি নিয়েছিলেন। বারবার ‘গঠনমূলক বিরোধিতা’র কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে ভোটে কোনও সুফল মেলেনি। অথচ বয়কট-অসহযোগিতার রাজনীতি করে মমতা সাফল্য পেয়েছিলেন। এ বারের ভোটে শাসক মমতা বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরে কৌশল বদলে এই পর্বের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় ময়দানে নামতে চাইছে বিরোধী জোট।

রাজভবনে গিয়ে সূর্য-অধীর জোট অটুট রাখার স্পষ্ট বার্তাই দিয়েছেন। রাজভবনের বাইরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অধীর বলেন, ‘‘মনে হয় না, যাওয়ার কোনও মানে আছে!’’ আরও স্পষ্ট ভাবে সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘মানুষ যখন আক্রান্ত, তখন অনুষ্ঠান আর উৎসব করার মানসিকতা আমাদের নেই। আমন্ত্রণপত্র সবাই পেয়েছেন কি না, এখনও জানি না।’’

রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে অধীরের অভিযোগ, গোটা রাজ্যে নৈরাজ্যের বাতাবরণ চলছে। পুলিশ শান্তি-বৈঠক ডাকলে তৃণমূল বলছে যাবে না। অধীরের বক্তব্য, ‘‘পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়েছে। কোথাও এমন হচ্ছে না! বিরোধী রাজনীতিকে বাংলার মাটি থেকে মুছে দিতে চাইছে তৃণমূল।’’ তাঁকে সমর্থন করে সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপালকে বলেছি, যে সরকারকে শপথ নেওয়াতে যাচ্ছেন, তারা বিরোধীদের উচ্ছেদ চায়!’’ বাম ও কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যপাল জানিয়েছেন পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবহিত। সাংবিধানিক অবস্থান থেকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন বলেও রাজ্যপাল জানিয়েছেন, দাবি বিরোধীদের। কলকাতা জেলা বামফ্রন্টও জানিয়েছে, সন্ত্রাস নিয়ে আজ, সোমবার সিপি-র কাছে দাবি জানানো হবে। ধর্মতলায় বুধ ও বৃহস্পতিবার অবস্থান-বিক্ষোভ হবে।

ভোটে ভরাডুবির পরেও আপাতত জোট রেখেই এগোনোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা। অধীরের কথায়, ‘‘নীতিগত ভাবে যে জোট গড়েছি, নির্বাচনের পরেও তা চলবে। এটা নাটকের জন্য নয়!’’ দিল্লিতে এআইসিসি-র দু-এক জন মুখপাত্রের বক্তব্যকে বাংলায় যে তাঁরা আমল দিচ্ছেন না, তা-ও বুঝিয়ে দেন অধীর। আর সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘আগেই বলেছি, নির্বাচনী লড়াইয়ে জিতি বা হারি, মানুষের জোট থাকবে।’’

অধীর-সূর্যের সঙ্গেই এ দিন রাজভবনে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া, অসিত মিত্র, অরিন্দম ভট্টাচার্য, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকের অক্ষয় ঠাকুর ও আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর), আরএসপি-র বিশ্বনাথ চৌধুরী, মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের অশোক দিন্দা, প্রবীর দেব প্রমুখ। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিয়ে বামফ্রন্টের অন্দরে যে টানাপড়েন চলছে, তার কোনও প্রতিফলন এ দিন ছিল না। ঘটনাচক্রে, খারাপ ফলের জন্য জোটকে দোষ দেওয়ায় ফব-র রাজ্য নেতৃত্ব এ দিনই রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রবল তোপের মুখে পড়েছেন। চাকুলিয়া থেকে বিজয়ী ভিক্টর রাজ্য নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে চ্যালেঞ্জ করেছেন, নেতারা পারলে আগে পঞ্চায়েতে দাঁড়িয়ে ভোট পেয়ে দেখান! পরে মতামত দেবেন!

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Left-front Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy