প্রীতিকুমারবাবুর বাড়িতে হামলার পরে। — নিজস্ব চিত্র
ভোট-পর্ব মিটতে না মিটতেই সন্ত্রাস শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার, ২৪ ঘণ্টায় প্রশাসনের কাছে যা যা অভিযোগ জমা পড়েছে, তার সব ক’টিই শাসক দলের বিরুদ্ধে। আর যাঁদের উপরে হামলা হয়েছে, তাঁরা বেশির ভাগই বিরোধী দলের এজেন্ট। যদিও শাসক দলের লোকজন তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা ওই সব অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, এ সবই সাজানো ঘটনা।
ভোটের আগের দিন থেকেই শিল্পাঞ্চলে বিরোধী দলের এজেন্ট ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসনোর অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। রবিবার সকাল থেকেই পুলিশের কাছে নানা এলাকা থেকে অভিযোগ আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিরোধী দলের যে সব এজেন্ট সুরক্ষা চেয়েছেন, সোমবার ভোটের পরে তাঁদের প্রত্যেককেই বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু তার পরেও বেশি রাতে ফের নতুন করে এজেন্টদের বাড়ি গিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বড় দু’টি অভিযোগ ওঠে নিউ ব্যারাকপুর ও পানিহাটিতে। এক সিপিএম এজেন্টের বাড়িতে হামলা চালানো হয় নিউ ব্যারাকপুরে আর পানিহাটিতে ভাঙচুর চালানো হয় সিপিএমের তিনটি পার্টি অফিসে।
নিউ ব্যারাকপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিনের বাসিন্দা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক প্রীতিকুমার রায়। ভোট মেটার পরে রাতে হামলা চালানো হয় তাঁর বাড়িতেই। প্রীতিকুমারবাবু উত্তর দমদম বিধানসভার বাম ও কংগ্রেস জোট প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। অভিযোগ, শাসক দলের দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বাইরে থেকেই ইট-পাথর মেরে হামলা চালায়। প্রীতিকুমারবাবুর কথায়, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা আচমকাই অকথ্য গালিগালাজ করে আমার বাড়ি লক্ষ ইট ছুড়তে শুরু করে। জানলা-দরজাও ভাঙার চেষ্টা হয়। ভেঙে ফেলা হয় সদর দরজার তালা।’’ তিনি জানান, ওই সময়ে বাড়ির লোকজন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সকালে এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবেশী, সহকর্মী, ছাত্র-সহ অনেকেই বছর পঞ্চান্নর ওই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করেন। আসেন বামফ্রন্টের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও।
পানিহাটিতে সিপিএমের ভাঙচুর হওয়া পার্টি অফিস।
ভোটের আগের রাতে হালিশহরে শাসক দলের সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত পরিবারের বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসলেও নিউ ব্যারাকপুরে প্রীতিকুমারবাবুর বাড়িতে তা দেননি পুলিশকর্তারা। ঘটনার খবর পেয়ে অবশ্য নিউ ব্যারাকপুর থানার পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়। মঙ্গলবার দুপুরের পরে প্রীতিকুমারবাবু একটি এফআইআর দায়ের করেন। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের কথায়, ‘‘এটি পিকেট বসানোর মতো ঘটনা নয়। তবে ওঁর বাড়ির জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব সময়ে পুলিশের টহলদারি গাড়ি ওই এলাকায় ঘোরার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
পানিহাটিতে আবার কোনও এজেন্ট নয়, সিপিএমের তিনটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে ১৩, ১৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি কার্যালয়ে তালা ভেঙে ঢুকে টিভি ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। দলীয় পতাকা ও নেতাদের ছবি ছিঁড়ে রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া হয়। নির্বাচনের ক’দিন আগে খড়দহেও ঠিক একই ভাবে সিপিএমের তিনটি ও কংগ্রেসের একটি দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়।
বামফ্রন্টের প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর এজেন্ট প্রীতিকুমার রায়।
নির্বাচন-পরবর্তী এই হামলার ঘটনায় পানিহাটির জোট প্রার্থী সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘হেরে যাওয়ার ভয়েই তৃণমূল এই নোংরা খেলা খেলছে।’’ তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এগুলি সব সাজানো ঘটনা। নিজের বাড়ির জানলা ভেঙে গল্প ফেঁদেছেন এক জন। আর পানিহাটিতেও জোট হেরে যাবে বলে এখন আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ও সব ভিত্তিহীন।’’ ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক তথা নির্বাচনী আধিকারিক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা সব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আলাদা আলাদা করে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy