লন্ডভন্ড। বাড়ির সামনে সিপিএম কর্মী দুর্গাদাস বাউড়ি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
পোড়া বাড়ির সামনে মাটির উঠোনে বসেছিলেন প্রতিবন্ধী যুবক। খড়ের গাদায় ছড়িয়ে রয়েছে আধপোড়া বই-খাতা। পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া জামাকাপড়, নষ্ট বাসনপত্র। এক রাত কেটে যাওয়ার পরেও দুর্গাদাস বাউড়ির যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, সিপিএমের এজেন্ট হিসেবে বুথে বসার ‘অপরাধে’ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাড়িটা।
বর্ধমানের জামুড়িয়ার সত্তর গ্রামে ভোটের দিন দুয়েক আগে থেকেই হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। পাল্টা রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল গ্রামে সিপিএমের ঘাঁটি বলে পরিচিত বাউড়িপাড়ায়। সোমবার ভোটের দিন তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতী সন্দেহে তিন জনকে মারধর করা হয় ওই পাড়ার সামনে। তাতেই গোলমাল শুরু। তৃণমূল কর্মীরা সিপিএমের এজেন্ট দুর্গাদাসের বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। কিন্তু অশান্তি বন্ধ হয়নি মঙ্গলবারও।
তবে সেই আবহের মধ্যেও এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ এককাট্টা হয়ে বলেছেন, ‘‘পায়ের তলার জমি নেই বলেই এত হামলা শাসক দলের। এ ভাবে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।’’
জামুড়িয়া-চুরুলিয়া রাস্তার মোড় থেকে গ্রামের দিকে কিছুটা এগোতেই দুর্গাদাসের খড়ের চালের দু’কামরার মাটির বাড়ি। এ দিন দুপুরেও সেখানে পোড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। দুর্গাদাস বলেন, ‘‘তখন বুথে ছিলাম। হঠাৎ শুনি, আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পড়িমরি করে ছুটে আসি। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ!’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমার আইটিআই পড়ুয়া ভাইপো, স্কুলপড়ুয়া ভাইঝির সার্টিফিকেট, বইখাতাগুলোও বার করে নেওয়ার সুযোগ দেয়নি ওরা। সব নষ্ট করে দিয়েছে।’’
পাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এ দিন সকালে সামনের পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন কয়েক জন। লাঠি, তলোয়ার হাতে তাড়া করে তৃণমূলের কর্মীরা পাড়ায় এসে হাজির হয়। দুর্গাদাস, সহদেব বাউড়িদের অভিযোগ, ‘‘ওরা হুমকি দিয়ে গিয়েছে, কাউকে পুকুর থেকে জল নিতে দেবে না। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে জল আনছি।’’
দুর্গাদাসের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই বাড়ি শ্যামাপদ বাউড়ির। সোমবার তিনি গ্রামের অন্য বুথে সিপিএমের এজেন্ট ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আজ দেখছি, আমার বাড়ির সামনের জলের কলটা কারা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। সামনে যে পুকুরটা আছে, ওখান থেকে যাতে জল নিতে না পারি, সে জন্য তৃণমূল পাহারা বসিয়েছে।’’ ওই পাড়ারই বাসিন্দা দাসী বাউড়ি, রিনা বাউড়িদের অভিযোগ, স্রেফ সিপিএম সমর্থক বলেই তাঁদের হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল।
জামুড়িয়ার সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক জাহানারা খানের ক্ষোভ, ‘‘সকালে চাল-ত্রিপল নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম। তখন শুনি, তৃণমূলের লোকেরা হামলা চালানোর জন্য জড়ো হচ্ছে। মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্মীদের খবর দিলে তারা জানায়, গ্রামের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই!’’ তবে পুলিশের দাবি, হুমকির অভিযোগ পেয়েই গ্রামে টহল দেওয়া হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ রয়েছে ওখানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’
পক্ষান্তরে গ্রামের তৃণমূল নেতা নীলকণ্ঠ পাল দাবি করেছেন, বাউড়িপাড়ায় সিপিএম বাইরে লোক জড়ো করেছিল। সে জন্য সকালে তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁদের দেখেই চম্পট দেয় বহিরাগতেরা। হুমকির অভিযোগ উড়িয়ে জামুড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী ভি শিবদাসনেরও দাবি, ‘‘সিপিএম-ই গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy