ফুচু গরাই এবং পাচল মুর্মু —নিজস্ব চিত্র।
বন দফতরের দুই শ্রমিককে দেওয়া হল নির্বাচনের বুথ সামলানোর দায়িত্ব। এত দিন তাঁরা গাঁইতি কোদাল নিয়ে জঙ্গলে আর মাঠেই কাজ করেছেন। তবে এ বার সামলাবেন বুথের দ্বিতীয় পোলিং অফিসারের দায়িত্ব। এমনই নির্দেশ এসেছে বন দফতরের কাছে। এরই মধ্যে নেওয়া হয়ে গিয়েছে প্রথম দফার প্রশিক্ষণও। তবে কাগজ-কলমের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকা এই দুই কর্মীর আপাতত একটাই ইচ্ছে— এই গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক তাঁদের।
বন-শ্রমিকদের রোজের কাজ বলতে বীজ বোনা, গাছের চারা রোপন, সারের মাটি বানানো এমনকি রাতে লোকালয় থেকে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে হাতি তাড়ানো। আর দ্বিতীয় পোলিং অফিসারের দায়িত্ব হল ভোট দাতার সচিত্র পরিচয়পত্র মিলিয়ে, তর্জনীতে কালি দিয়ে ভোটার রেজিস্টারে সই করিয়ে স্লিপ দেওয়া।
নন মেট্রিক দুই শ্রমিক যাঁদের সঙ্গে কাগজ-কলমের কাজের কোনও সম্পর্কই নেই তাঁদের এমন দায়িত্ব দেওয়া হল কী ভাবে? সেই দায়িত্ব তাঁরা সামলাবেনই বা কী করে? প্রশ্ন করতে বন-শ্রমিক দু’জন জানিয়েছেন, এই কাজ তাঁদের পক্ষে অসম্ভব তাই এর থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তাঁরা।
পুরুলিয়া ডিভিশনের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানাকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘‘বলরামপুর দু’জন বন শ্রমিককে নির্বাচনের ডিউটি দিয়েছে, তা জানি। আমার কাছে খবর আসার পর আমি জেলার নির্বাচন অধিকারিককে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। ভারতের নির্বাচন কমিশন নির্দেশ অনুযায়ী বন দফতরের সামনের সারির লোকদের নির্বাচনের কাজে লাগানো যায় না। নির্বাচন বিধি অনুযায়ীই তারা এই কাজ থেকে অব্যাহতি পাবে।’’
বলরামপুরের যে দুই বনশ্রমিককে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন বেলা গ্রামের ফুচু গরাই ও ইচ ডী গ্রামের বাসিন্দা পাচল মুর্মু। দু’জনেই মাঝবয়সী। গত চার পাঁচ বছর ধরে বলরামপুর বনাঞ্চলে দিন মজুরের কাজ করেন। মাটি তৈরি, পটে মাটি ভরে বীজ পোঁতা, তার রক্ষণাবেক্ষণ এ সবই তাঁদের দায়িত্ব। গ্রামে হাতি আসার খবর পেলেই আধিকারিকদের সঙ্গে চাষিদের ফসল থেকে ক্ষয়ক্ষতি বাঁচাতে জঙ্গলে ছোটার কাজও এঁদেরই। তাঁদের নির্বাচনকর্মীর দায়িত্ত্ব দেওয়ায় জেলা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা নির্বাচন আধিকারিকের চিঠি হাতে পান এই দু’জন। তাতে তাঁদের নাম, পদের পাশাপাশি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের সম্ভাব্য পদ ও দায়িত্বের কথাও লেখা আছ। চিঠি নির্দেশ মেনে ভয়ে ভয়েই ২০ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়া শহরের একটি স্কুলে প্রথম দফার প্রশিক্ষণ নেন তারা। প্রশিক্ষণের পর ফুচুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বন দফতরের শ্রমিকের কাজ করি। দ্বিতীয় পোলিং অফিসারের দায়িত্ব নিতে পারব না। প্রশিক্ষণে গিয়েছিলাম ঠিকই। তবে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। আমরা চাই আমাদের নির্বাচনের দায়িত্ত্ব বাতিল করা হোক।’’
পাচলের কথায়, ‘‘কাগজপত্র এসেছিল। প্রশিক্ষণেও গিয়েছিলাম। নির্বাচনী বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। তাই এমন দায়িত্ব আমাদের না দেওয়াই ভাল। কারণ এতে অনেক ঝুঁকি থাকবে।’’ বন কর্তারা অবশ্য বলছেন, এটা নিছক ভুল ছাড়া অন্য কিছু নয়।কারণ যে কাগজ ওদের পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে সেখানেই পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ আছে তাদের পদ। তার পরেও এরকম একটা গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ত্ব দেওয়া যায় না। যদিও জেলা নির্বাচন দফতর এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy