গৌরীশঙ্কর দত্ত। — নিজস্ব চিত্র
তিনি জিতবেন। দিনভর তাঁকে দেখা গিয়ে তুরীয় মেজাজে। বৃহস্পতিবার তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন তেহট্টের এমুড়ো ওমুড়ো। তিনি, জেলা ত়ৃণমূলের সভাপতি, তেহট্টের প্রার্থী গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, ‘‘জয় নিশ্চিত। গত বিধানসভা নির্বাচনে দলেরই একজন বিক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই কারণে আমি হেরে গিয়েছিলাম। তবে এ বারে কোনও বিরোধিতা নেই। আমার জেতাও কেউ আটকাতে পারবে না।’’
গৌরীবাবু যে বিক্ষুব্ধ নেতার কথা বলছেন, সেই তাপস সাহাও এ বারে তৃণমূলের প্রার্থী। তবে তেহট্টে নয়, পাশের কেন্দ্র পলাশিপাড়ায়। এ দিন বিকেলে তিনি অবশ্য ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমার লোকজন তেহট্টে গৌরীদার হয়ে ভোটে নেমেছে। কিন্তু গৌরীদার লোক পলাশিপাড়ায় আমার বিরোধিতা করেছে।’’ যা শুনে গৌরীবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যারা তাপসের বিরোধিতা করেছে তারা আমার লোক নয়। তবে ভোটের পরে তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আর ক্ষুব্ধ তাপস শিবিরের লোকজন বলছেন, ‘‘ভোট মিটলে ব্যবস্থা নিয়ে আর লাভ কী?’’ তাপস-ঘনিষ্ঠ একজন জানাচ্ছেন, নিরাপদ তেহট্ট আসনে গৌরীবাবুর দাঁড়ানো নিয়ে তাপসদা কোনও বিরোধিতা করেননি। কিন্তু অপেক্ষাকৃত শক্ত পলাশিপাড়া আসনে এমন অসহযোগিতা করাটাও ঠিক হল না। গৌরীবাবু এটা আগেই সামলে দিতে পারতেন। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন খোদ তাপসও। তাঁর দাবি, ‘‘লড়াইটা কঠিন হল ঠিকই। তবে কমপক্ষে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতব।’’
বেতাইয়ের লালবাজারে বসেছিলেন দলের কর্মীরা। সাদা এসইউভি গাড়ি থেকে গৌরীবাবু নামতেই তাঁকে বুথ-ক্যাম্পে বসার অনুরোধ জানালেন কর্মীরা। তিনি অনুরোধ ফেলতে পারলেন না। চেয়ার টেনে বসলেন। কর্মীদের আবদারে খয়ের ছাড়া চুন-সুপুরি দিয়ে একটিও পানও খেলেন। ঠিক সেই সময়ে বেজে উঠল মোবাইল। ফোন ধরেই গৌরীবাবু বলতে শুরু করলেন, “শোন, তাপসের লোকজন আমার জন্য জান দিয়ে কাজ করছে। ওর লোকজন বিরোধিতা করছে, এ কথা ঠিক নয়। নিজের এলাকায় ঠিক ভাবে ভোট কর।”
কথা শেষ হতেই বিরক্তির সঙ্গে মোবাইল রাখলেন পকেটে। ততক্ষণে অবশ্য তৃণমূলের কর্মীরাও নিজেদের মধ্যে ফিসফাস শুরু করেছে। দলের এক কর্মী বলছিলেন, ‘‘এই এক মুশকিল হয়েছে। হয়তো তাপসদা ও গৌরীদা দু’জনেই জিতবে। কিন্তু এ ওর হয়ে কাজ করছে না, ও একে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে—এই করেই দলের বারোটা বাজছে।’’ তাঁর দাবি, আগে যা হয়েছিল, হয়েছিল। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি অনেক আলাদা। অথচ সেই কাদা ছোড়াছুড়ি চলছেই।
কথাটা একেবারেই কথার কথা নয়। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দলের নেতা তাপস সাহা টিকিট না পেয়ে তেহট্টে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেতাই কলেজ মাঠের জনসভা থেকে তাপসবাবুকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সেই ভরা জোয়ারেও তাপসবাবু গৌরীশঙ্কর দত্তকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন। তারপর জলঙ্গি দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। তাপসবাবু দলে ফিরেছেন। গৌরীবাবু ফের তেহট্টে প্রার্থী। কিন্তু পাঁচ বছর পরেও মাঝেমধ্যেই উঠে আসছে সেই পুরনো কাসুন্দি।
শুধু গৌরীবাবুর ফোনেই নয়, তাপসবাবুর লোকজন যে গৌরীবাবুর বিরোধিতা করছে সে কথা শুনতে হয়েছে খোদ গৌরীবাবুর ছেলে, জেলা টিএমসিপি-র সভাপতি অয়ন দত্তকেও। এ দিন অয়নবাবু যখন কানাইনগরে গিয়েছিলেন তখন দলেরই কয়েকজন কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কিছু একটা করুন দাদা। তাপসদার লোকজন কিন্তু গৌরীবাবুকে হারানোর চেষ্টা করছে।’’ বিষয়টি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি দলীয় কর্মীদের থামিয়ে দেন অয়নবাবু।
এ দিন সকালে উঠেই স্নান সেরে গৌরীবাবু বেরিয়ে পড়েন। কৃষ্ণনগর শহরের দেবনাথ হাই স্কুলের ৯ নম্বর বুথে ভোট দিয়ে তিনি তেহট্টের উদ্দেশে রওনা দেন। বিভিন্ন বুথ ঘুরে দেখেন। চলতে চলতেই খবর নিচ্ছেলেন জেলা জুড়ে ভোট কেমন হচ্ছে। ফোনেই নানা নির্দেশ দিচ্ছিলেন কর্মীদের। কর্মীরাও তাঁকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘নিশ্চিন্তে থাকুন দাদা। জয় কেউ আটকাতে পারবে না।’’ দুপুরে পলাশি মোড়ে দলীয় কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন। দিশি মুরগি, মাছ ভাজা, মাছের ঝোল দিয়ে ভাত। কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার জো নেই। নাগাড়ে ফোন বাজছে। রাজ্য নেতৃত্বও ভোটের খবর জানতে চেয়েছেন। চওড়া হেসে গৌরীবাবু জানিয়েছেন, তিনি তো জিতছেনই। জেলার বাকি ১৬ টি আসনেও তৃণমূলের জয় নিশ্চিত।
১৯ মে আসতে আর যেন কত দিন বাকি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy