Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

জঙ্গলে সুন্দর ভোটের হাতি, পাহারায় হুলা

ফোনটা আসছিল দিন দশেক ধরে— ‘‘কী, উপায় ভাবলেন কিছু? যে করেই হোক, ওদের কিন্তু বনেই বেঁধে রাখতে হবে।’’ দুই জেলা থেকেই মাঝে-মধ্যে আসা সেই ফোনে প্রচ্ছন্ন শাসানি ছিল, ছিল কিঞ্চিৎ ধমক-ধামকও।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

ফোনটা আসছিল দিন দশেক ধরে— ‘‘কী, উপায় ভাবলেন কিছু? যে করেই হোক, ওদের কিন্তু বনেই বেঁধে রাখতে হবে।’’

দুই জেলা থেকেই মাঝে-মধ্যে আসা সেই ফোনে প্রচ্ছন্ন শাসানি ছিল, ছিল কিঞ্চিৎ ধমক-ধামকও। আড়াল করছেন না ওঁরা। বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘শাসক দল বলে কথা, তাই ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব ছিল না!’’

ভাঁড়ার শূন্য, তবু কুড়িয়ে-বাড়িয়ে কয়েক ড্রাম পোড়া মোবিল আর ডিজেল, ব্যাগ বোঝাই শব্দবাজি, সঙ্গে দুই পদস্থ বনকর্তা— লটবহর সমেত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুই ভোটের জেলা, বর্ধমান আর বাঁকুড়ায়। ‘ডিউটি’ একটাই— বনের হাতি যেন বুথে পা না বাড়ায়। সোমবার, রীতিমতো ক্যাম্প করে সেই হ্যাপাই সামাল দিলেন বনকর্তারা।

তিন মাসে, হাতির হানায় বাঁকুড়ায় প্রাণহানির সংখ্যা ১১। সপ্তাহ কয়েক আগে, দামোদর পেরিয়ে হস্তিকুলের কাটোয়া যাত্রার পথেও বলি বর্ধমানের অন্তত চার গ্রামবাসী। এই অবস্থায় দুই জেলার শাসক দলের নেতাদের চোখরাঙানির পাশাপাশি নবান্নেরও কড়া নির্দেশ ছিল— ‘হাতি ঠেকাতে হবে।’ তাই, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে বনকর্তাদের সঙ্গে দিনভর চোখে দূরবিন লাগিয়ে বসেছিলেন ঘুমপাড়ানি গুলিতে হাতিদের কাবু করতে ওস্তাদ সুব্রত পালচৌধুরীও। বলছেন, ‘‘পারদ চড়েছে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে। জানতাম, এই গরমে হাতি অন্তত দিনের বেলা জঙ্গল ছেড়ে বেরোবে না। তবু, সাবধানের মার নেই!’’

ভোটের ‘ভ’-ও বোঝে না তারা, রাজনীতি নৈব নৈব চ। বাঁকুড়ার এক বনকর্তা বলছেন, ‘‘তবু বলা যায় না। ভোটের দিন তারা শাল-সেগুনের বন ফুঁড়ে আচমকা বুথের সামনে হাজিরা দিল হয়তো!’’ এ দিন তাই চড়া রোদ মাথায় নিয়েই বর্ধমানের কাঁকসা থেকে কাটোয়া, মন্তেশ্বর কিংবা খণ্ডঘোষের গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মোতায়েন করা হয়েছিল হুলা পার্টি। দায়িত্বে ছিলেন মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব) কল্যাণ দাস।

বাঁকুড়ার বড়জোড়া, পাত্রসায়র, সোনামুখীর পথেঘাটেও হাতির পা পড়ে আকছার। ওই সব এলাকার ভার ছিল মুখ্য বনপাল (‌সেন্ট্রাল সার্কেল) এসপি যাদবের উপরে। পাত্রসায়র বা বড়জোড়ার কাছে শীর্ণ দামোদর পার হয়ে হাতিদের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে পা দেওয়াও নতুন নয়। জঙ্গলের গভীরে জলাধারগুলি ইতিমধ্যেই শেষ চৈত্রের আঁচে শুকিয়ে কাঠ। গলা ভেজাতে হাতিরা নদীচরেই আসবে অনুমান করে তাই দুই জেলার সীমানা টেনে রাখা দামোদর ও দ্বারকেশ্বরের কোলে ক্যাম্প করে পাহারায় ছিলেন বনকর্মীরা।

বর্ধমান গ্রামীণ এলাকার তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতা বলছেন, ‘‘ভোটের দিনে গ্রামে হাতি ঢুকে মানুষ মারবে, আর আমাদের তার খেসারত দিতে হবে, তা হয় নাকি!’’ বাঁকুড়ার এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতাও বলছেন, ‘‘গত এক বছরে জেলায় হাতির বলি তিরিশ ছাড়িয়েছে। ভোটের দিন তাণ্ডব চললে সোনামুখী, পাত্রসায়র ও গঙ্গাজলঘাঁটি এলাকায় আমরা একটাও ভোট পাব না, তার দায় কে নেবে!’’

তাই ‘চাপ’ ছিলই।

সেই চাপ সামলে, নির্বিঘ্নে ভোট মিটিয়ে ফেরার আগে এক বনকর্তা বলছেন, ‘‘মরা হাতি লাখ টাকা। জ্যান্ত হাতির মূল্য কত, বুঝলাম আজ!’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy