Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈশ্বর-আল্লার দরবারে ‘বিচারপ্রার্থী’ এক হাকিম

মানুষের কাছে তিনি সত্যিই ‘হাকিম’। একগাল হেসে ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববি বললেন, ‘‘আমি তো ডাক্তারদের মতো নিয়ম করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে চেম্বার খুলে বসি। কোনও দিন সকালে গার্ডেনরিচ, তো সন্ধ্যায় খিদিরপুর। এ ছাড়া, এলাকার ‘জাগরণ’, ‘মিলাদ’— কোনও অনুষ্ঠানই ববি হাকিম বাদ দেয় না।’’

ফিরহাদ হাকিম

ফিরহাদ হাকিম

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

মানুষের কাছে তিনি সত্যিই ‘হাকিম’।

একগাল হেসে ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববি বললেন, ‘‘আমি তো ডাক্তারদের মতো নিয়ম করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে চেম্বার খুলে বসি। কোনও দিন সকালে গার্ডেনরিচ, তো সন্ধ্যায় খিদিরপুর। এ ছাড়া, এলাকার ‘জাগরণ’, ‘মিলাদ’— কোনও অনুষ্ঠানই ববি হাকিম বাদ দেয় না।’’

চেতলা, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচের দেওয়াল লিখনও তা-ই, ‘যখন ডাকি তখন পাই, ববি হাকিমকে আবার চাই’। ‘হাকিম’ ববি তাই ভোটে জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত। নিশ্চিন্তে সোফায় গা এলিয়ে সোজাসাপ্টা বলেন— এখানে ভোটে কোনও ‘মেশিনারি’র দরকার নেই।

‘নারদ’-এর বিষও তাই ‘হাকিম’-এর কাছে হার মানে...?

এলিয়ে দেওয়া শরীরটা নড়েচড়ে ওঠে। প্রথমে তাচ্ছিল্য, ‘‘নারদের কোনও প্রভাব নেই।’’ তার পরে চোয়াল শক্ত, ‘‘আমি কোনও অনৈতিক কাজ করিনি, করবও না। এর মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। এক দিন সেই সত্য উদ্ঘাটিত হবে। রাজীব গাঁধীকে অন্যায় ভাবে চোর বলা হয়েছিল। সেই সত্য রাজীব গাঁধীর মৃত্যুর পরে উদ্ঘাটিত হয়েছিল। ঈশ্বর, আল্লার কাছে প্রার্থনা করি, জীবদ্দশাতেই যেন আমি তা দেখে যেতে পারি।’’

নারদা না-হয় নির্বিষ। জোট আর শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের জোটবদ্ধ হওয়াও কি ভোঁতা হয়ে যাবে বন্দরে? খানিকক্ষণ চুপ। তার পরে চেনা ভঙ্গিতে হাত তুলে বোঝাতে শুরু করলেন গোটা চেতলার চেনা ‘ববি’, ‘‘আমার কোনও সিন্ডিকেট নেই, সেনাপতিও নেই। আমার ভোটে জিততে বহিরাগত জড়ো করারও প্রয়োজন নেই। ভোটের দিনে পাড়ায়-পাড়ায় অতিরিক্ত জমায়েত আমাদের পছন্দ নয়। ওয়ার্ড কমিটিতেও শুধু ওখানকার বাসিন্দারাই আছেন।’’

ববির দাবি, তাঁর কাজই তাঁকে জিতিয়ে আনবে। গার্ডেনরিচ এলাকায় নাকি তিনি বিধায়ক হয়ে আসার আগে পর্যন্ত কোনও উন্নয়নই হয়নি। সেখানে স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে বন্দরের জমিতে বসবাসকারী মানুষদের পাকা শৌচালয় খোলার ব্যবস্থাও করে নাকি দিয়েছেন ববিই। ‘‘এর সুফল তো ভোটবাক্সে পাব’’-প্রত্যয়ী তিনি নিজেও।

ছোট থেকেই এলাকায় ববি নাকি ‘দামাল’ বলেই পরিচিত! ছোটবেলায় বদসঙ্গ আটকাতে, পাশের চেতলা অগ্রণী থেকে ববিকে দূরে রাখতে মা ভর্তি করে দিয়েছিলেন একটু দূরে রাখী সঙ্ঘে। ‘‘বিকেলে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে মা জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকত, আমি রাখী সঙ্ঘেই যাচ্ছি কি না, দেখতে। আর আমি কিছুটা গিয়ে উল্টো দিকের গলিতে ঢুকে ছুট দিতাম অগ্রণীর দিকে। ওখান থেকেই আমার সমাজসেবা শুরু’’— বলছেন ববি।

উল্টো দিকে দৌড়ের শুরুটাও সেই থেকেই। হাকিমের কথায়, ‘‘জানেন, প্রথম বার কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর ভোটে দাঁড়িয়েছি। ভোটের আগের দিন দলের এক ছেলে একটা শিশি নিয়ে এল। দেখেই সবাই বলতে শুরু করল, এই তো কেমিক্যাল এসে গিয়েছে। আর চিন্তা নেই। তখনই জানলাম, ওটাই হাতের কালি মোছার ম্যাজিক তরল। শিশিটা ছুড়ে নালায় ফেলে দিয়েছিলাম। আমার কথা, মানুষ ভোট দিলে ঠিকই জিতব।’’

হিসেব বলছে, কাউন্সিলর নির্বাচনে ববির ‘মার্জিন’ শুধুই বেড়েছে। ৫ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত। চেতলার প্রবাদপ্রতিম নেতা মণি সান্যালকেও নাকি মার্জিনে টপকে গিয়েছেন এই ববিই।

তা না-হয় হল। কিন্তু নারদের পরে দিদি একটু তফাতে রেখেছে! কষ্ট হয় না?

মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বাঁ-হাত দিয়ে প্রশ্নটা উড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘‘কে বলেছে! দিদির বিধানসভাতেও তো আমিই প্রচার করছি। সকালে বন্দরে ঘুরছি। বিকেলে দিদির এলাকায় বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছি, ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছি। দিদির কি আর অত সময় আছে!’’

গর্বে মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দিদিভক্ত ‘ববি’র।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Firad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy